মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

উদ্যোগটি যথার্থ ও সময়োপযোগী
অনলাইন ডেস্ক

২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকার সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন মুক্তিযুদ্ধকালীন ৮নং সেক্টর কমান্ডার লেঃ কর্নেল (অবঃ) আবু ওসমান চৌধুরী। চলতি ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ছিলো তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। অনেকটা নীরবে নিভৃতেই কেটে গেলো এ দিনটি। ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন মদনেরগাঁও গ্রামের সম্ভ্রান্ত চৌধুরী পরিবারে ১৯৩৬ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণকারী আবু ওসমান চৌধুরী শুধু চাঁদপুর জেলার কৃতী সন্তান নন, তিনি বাংলাদেশের কীর্তিমান মানুষদের অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্যে তিনি দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হয়েছেন।

আবু ওসমান চৌধুরী ১৯৭১ সালেই রচনা করেন ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ নামক গ্রন্থটি। তারপর ১৯৯০ সালে ‘এক নজরে ফরিদগঞ্জ’ এবং ১৯৯৬ সালে ‘সময়ের অভিব্যক্তি’, ‘সোনালী ভোরের প্রত্যাশা’ ও ‘বঙ্গবন্ধু : শতাব্দীর মহানায়ক’ গ্রন্থগুলো রচনা করে তাঁর লেখনী সত্তার আত্যন্তিক বহিঃপ্রকাশ ঘটান। সেজন্যে তিনি বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ পুরস্কার ও আলাওল সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন।

মুক্তিযুদ্ধকালীন আবু ওসমান চৌধুরী ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন মেজর। তাঁর কর্মস্থল ছিলো কুষ্টিয়া। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদারদের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামক গণহত্যাযজ্ঞের সংবাদ পেয়ে ২৬ মার্চ সকাল ১১টায় তিনি চুয়াডাঙ্গার ঘাঁটিতে পৌঁছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। ১০ এপ্রিল তিনি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের আঞ্চলিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পেলেও মে মাসের শেষার্ধে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এমএজি ওসমানী দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনকে দু ভাগ করে ৮নং ও ৯নং সেক্টর গঠন করে আবু ওসমান চৌধুরীকে ৮নং সেক্টর কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করেন।

মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে আবু ওসমান চৌধুরী দুটি বড় ট্র্যাজেডির শিকার হন। একটি হচ্ছে, একজন সেক্টর কমান্ডার এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনের বহুল আলোচিত অধিনায়ক হয়েও তিনি অন্যান্য সেক্টর কমান্ডারের ন্যায় বীর উত্তম খেতাবটি পাননি। আরেকটি ট্র্যাজেডি হচ্ছে, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তথাকথিত ‘সিপাহী-জনতার বিপ্লবে’র দিন একদল উচ্ছৃঙ্খল সেনা সদস্য আবু ওসমান চৌধুরীর বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাঁর স্ত্রী নাজিয়া ওসমানকে গুলি করে হত্যা করে। তবে ১৪ ও ৯ বছর বয়সী দু কন্যা সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়। এ দুটি আদুরে কন্যা যাতে বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার না হয়, সেজন্যে আবু ওসমান চৌধুরী দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে কাউকে গ্রহণ করেন নি। ৮৪ বছরের জীবনের শেষ দিকে প্রায় দু যুগ তিনি বিক্ষিপ্তভাবে বিজেএমসির চেয়ারম্যান, চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রশাসকসহ বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্মকা-ে ব্যস্ত থাকলেও ব্যক্তিজীবনে ভুগেছেন নিঃসঙ্গতায়।

জীবদ্দশায় দুটি ট্র্যাজেডির শিকার হওয়া আবু ওসমান চৌধুরী মরণোত্তরও ট্র্যাজেডির শিকার হবার উপক্রম হতে যাচ্ছিলো। তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী (৫ সেপ্টেম্বর ২০২১) যথাযথভাবে পালিত হয় নি। বিস্মৃতির আঁধারে হারিয়ে যাবার অবস্থা হয়েছিলো তাঁর। কিন্তু না, গত শুক্রবার (২৯ অক্টোবর ২০২১) বিকেলে ফরিদগঞ্জের চান্দ্রা বাজারে আবু ওসমান চৌধুরীর নামে স্মৃতি সংসদ ও পাঠাগার উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধন করেন সরকারের সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব মোঃ হাবিবুর রহমান। উদ্বোধন শেষে মরহুমের জন্যে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এ সংগঠনটি পরিচালনার জন্যে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার সহিদ উল্যা তপাদারকে আহ্বায়ক ও আহসান হাবিব নেভীকে সদস্য সচিব করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। আমরা মনে করি, আবু ওসমান চৌধুরীর স্মৃতিরক্ষার এ উদ্যোগ যথার্থ ও সময়োপযোগী। এজন্যে উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়