প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
করোনামুক্ত ভেবে ঔদাসীন্য কাম্য নয়
স্থানীয় দৈনিক হিসেবে আমরা চাঁদপুর কণ্ঠে চাঁদপুর জেলার প্রতিদিনকার করোনা সংক্রমণ সংক্রান্ত খবর ছাপি। কিন্তু জাতীয় দৈনিকগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে তেমনভাবে করোনার খবর ছাপা হয় না। টিভিতেও আগের মতো করোনা সংক্রান্ত খবর গুরুত্ব পায় না। অনেকের ভাবখানা এমন, আমাদের দেশ যেনো করোনামুক্ত হয়ে গেছে। অনেক শিক্ষিত-সচেতন মানুষ এখন ঘরোয়া পরিবেশ ও অফিসে তো নয়ই, অনেক জনাকীর্ণ স্থানেও মাস্ক পরছে না। যানবাহন চালকরা মাস্ক পরাটাকে তো অনেক ঝামেলাপূর্ণ কাজ বলে লকডাউন চলাকালেও পরতে চায়নি। মসজিদের অধিকাংশ ইমাম, মুয়াজ্জিন, মুসুল্লি মাস্ক পরেই না। দুর্গাপূজা চলাকালে মণ্ডপে মণ্ডপে পূজারীদের মধ্যেও মাস্ক পরায় যথেষ্ট উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়।
|আরো খবর
বাংলাদেশে এখন করোনায় প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা এক অংকের ঘরে এবং সংক্রমণের সংখ্যা ৫০০-এর উপরে-নিচে থাকছে। চাঁদপুরে তো একদিন করোনায় সংক্রমণ শূন্যের কোটায় নেমে আসে। তারপর আবার সংক্রমণ বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার ২দিনে চাঁদপুরে ৯ জনের করোনা পজিটিভ হয়। সংক্রমণের হার ছিলো ২.৯৫ শতাংশ। শুক্রবার চাঁদপুর জেলায় ৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। সংক্রমণের হার ছিলো ২.৩২ শতাংশ। এতে বোঝা যায়, শূন্যের কোটায় করোনা সংক্রমণ স্থিতিশীল হয়নি, ধীরে ধীরে বাড়ছে।
গতকাল দৈনিক ইত্তেফাকের শেষ পৃষ্ঠায় বক্স আইটেমে বিশেষ খবর প্রকাশিত হয়েছে, যার শিরোনামটা আতঙ্ক সৃষ্টিকারী। ‘পশ্চিমবঙ্গে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ’ শীর্ষক খবরে লিখা হয়েছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কলকাতার পাশাপাশি চব্বিশ পরগনা, হাওড়া ও হুগলির মতো জেলার পরিসংখ্যানও উদ্বেগজনক। দুর্গাপূজার পরই করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। রাজ্য সরকার এবং কলকাতা হাইকোর্টের দেয়া গাইডলাইন পালন করেনি মানুষ। শুক্রবার জানানো হয়েছে, আগের ২৪ ঘন্টায় শুধু কলকাতায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৬০জন। তার মধ্যে ২০১ জন উপসর্গহীন এবং বাকিদের শরীরে রয়েছে স্পষ্ট উপসর্গ। এমতাবস্থায় আতঙ্ক বাড়তে থাকায় পশ্চিমবঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কলকাতার সবক’টি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে কলকাতা পৌরসভা।
সম্প্রতি ভারত সরকার বাংলাদেশীদের জন্য মেডিকেল ভিসা চালুর পর ট্যুরিস্ট ভিসা চালুর বিষয়টি যখন বিবেচনাধীন রেখেছে, ঠিক তখনই পশ্চিমবঙ্গে ফের করোনা বৃদ্ধির খবর সুখকর নয়। কেননা বাংলাদেশের অসংখ্য ট্যুরিস্ট মুখিয়ে আছে ভারত ভ্রমণের জন্যে।
আমরা মনে করি, করোনামুক্ত ভেবে আমাদের সরকার ও জনগণের কারোরই ঔদাসীন্য প্রদর্শনের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই, যেহেতু প্রতিবেশী ভারতের বাংলাদেশ সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গে করোনা সংক্রমণ ফের বাড়তে শুরু করেছে। আমরা দুর্গোৎসবের পর ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে অনেক জনাকীর্ণ পরিবেশে, সমাবেশে উন্মুক্তভাবে একাত্ম হয়েছি। এর পরিণামে করোনা সংক্রমণ বাড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এমন বাস্তবতায় আমাদের সকলকে সতর্ক ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিগ্রহণের আবশ্যকতা রয়েছে বলে মনে করি।