প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
সংগ্রামী আরিফের শিক্ষা-তৃষ্ণা !
হাজীগঞ্জ উপজেলাধীন বাকিলা ইউনিয়নের রাধাসার গ্রামের মরহুম আলহাজ্ব মাওলানা আঃ রহিম সাহেবের বাড়ির শাহ আলম মিজির ছোট ছেলে আরিফ হোসেন (১৮)। শিক্ষা-তৃষ্ণা লালন করে তাকে চালিয়ে যেতে হচ্ছে কষ্টকর জীবন সংগ্রাম। তাকে নিয়ে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সচিত্র সংবাদের শিরোনাম দেখেই পাঠককে থমকে যেতে হয়েছে এবং সংবাদটি পুরোপুরি পড়তে আগ্রহী হতে হয়েছে। শিরোনামটি এমন- ‘হোটেলে কাজ করে আলিম পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছে আরিফ ॥ চাকুরি ছেড়ে পরীক্ষা পর্যন্ত কীভাবে চলবেন এটা নিয়ে এখন তার মাথাব্যথা’।
|আরো খবর
এ সংবাদে লিখা হয়েছে, ৪ ভাই ১ বোনের মধ্যে সবার ছোট আরিফ। বোনকে পাত্রস্থ করা হয়েছে। ভাইদের মধ্যে বড়রা সবাই সবার মতো করে চলছে। বাবা অসুস্থ ও বেকার। এমতাবস্থায় বাবা-মাকে দেখাশোনার দায়িত্ব পড়েছে আরিফের ওপর। ‘সবার ছোট যে, পরিবারে সবচে’ আদরের সে’-এ সত্যটি আরিফের জন্যে যেনো পরিহাস। কেননা ছোট হয়ে আদর উপভোগের সুযোগ তার নেই, তার কাছে বাবা-মা’র ভরণ-পোষণের জন্যে জীবিকার্জনে ব্যস্ত থাকাটাই কঠিন বাস্তবতা। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে থাকাবস্থায়ই অন্যের জমিতে দিনমজুরিতে খেটে রোজগার করতে হচ্ছে তাকে। মাঠে কাজ করার পাশাপাশি ধান মাড়াইয়ের মেশিনে কাজ করতে হয়েছে বহুদিন। এর মধ্যেই বাড়ির নিকটবর্তী নওহাটা ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দিয়ে দাখিল পাস করে আলিমে ভর্তি হন। করোনাকালে ক্লাস হয়নি বলে কৃষি কাজ ছেড়ে হাজীগঞ্জ বাজারে একটি হাটেল বয়ের চাকুরি নেন এবং একই সাথে আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেন। আরো ভালো প্রস্তুতি নিতে ৩০ সেপ্টেম্বর চাকুরি ছেড়ে দিয়ে বাড়ি চলে যান। এমতাবস্থায় মাসিক ৭ হাজার টাকা রোজগারের পথ তার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নূতন দুশ্চিন্তা ভর করেছে তার মাথায়। তারপরও আরিফের স্বপ্ন, সে আলিম পাস করে উচ্চতর ডিগ্রি নেবে, সেজন্যে প্রয়োজনে আরো পরিশ্রম করবে।
সত্যি ভাবতে অবাক লাগে, আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্যে হোটেল বয়ের চাকুরি ছেড়ে দিয়ে কর্মহীনতায় অর্থকষ্টের দুশ্চিন্তার মধ্যেও আরিফের স্বপ্ন উবে যায়নি, বরং সুস্পষ্টভাবে উদয় হয়েছে। এটা তার প্রবল শিক্ষা-তৃষ্ণার কারণেই সম্ভব হয়েছে। আমরা আরিফকে স্যালুট জানাই। তার আলিম পরীক্ষার প্রস্তুতিকালীন সময় এবং পরীক্ষা চলাকালীন সময়টুকুতে যে ক’মাস যাবে, সে ক’মাস তার বাবা-মার ভরণ পোষণে আর্থিক সহায়তা নিয়ে তার পাশে দাঁড়াতে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, চিত্তবান বিত্তবান ব্যক্তি, সর্বোপরি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সুদৃষ্টি কামনা করছি।