বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুরে রাজনৈতিক মামলায় আসামীদের আটক অভিযান অব্যাহত। যুবলীগ, কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৫ নেতা-কর্মী আটক
  •   ছেঁড়া তারে প্রাণ গেল যুবকের
  •   চাঁদপুরে গণঅধিকার পরিষদের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
  •   রাজধানীতে কচুয়ার কৃতী সন্তানদের সংবর্ধনা
  •   সম্প্রীতির চমৎকার নিদর্শন আমাদের বাংলাদেশ --------------জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

অনলাইনে ইলিশ বিক্রির প্রতারণা রোধ হোক

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইনে ইলিশ বিক্রির প্রতারণা রোধ হোক

চাঁদপুরকে বলা হয় ইলিশের বাড়ি, আর এই ইলিশ সরবরাহ ও বেচাকেনার সবচেয়ে বড়ো বাজার শহরের বড়ো স্টেশন মাছঘাট। এই ঘাটে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ইলিশ সরবরাহের পাশাপাশি পাইকারি, খুচরা ও অনলাইনে কেনা-বেচাও চলে। এই অনলাইনে ইলিশ বিক্রি নিয়ে সম্প্রতিক সময়ে একটি চক্র ভুয়া ফেসবুক পেজ খুলে লোভনীয় অফার দিয়ে ফাঁদ পেতেছে। এতে প্রতিনিয়তই হয়রানির শিকার হচ্ছেন ক্রেতারা। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ নানা পদক্ষেপ নিলেও কাজ তেমন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। ক'দিন আগে চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশ কিনতে এসে হয়রানির কথা স্বীকার করে ঢাকা থেকে আগত ক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অনলাইনে লোভনীয় অফার দেখলাম, চাঁদপুরের মাছঘাটে ইলিশের দাম কম। এ জন্যে তাদের দেওয়া নম্বরে ফোন করলাম, কিন্তু তারা ফোন রিসিভ করেনি। তাই মাছঘাটে আসলাম। কিন্তু এসে দেখি মাছের দাম অনেক বেশি।’ আরেক ক্রেতা জাহান পপি বলেন, ‘আমি ঢাকা থেকে আসছি ইলিশ ক্রয় করতে। কিন্তু এখানে আমাদের স্থানীয় বাজারের চেয়ে ইলিশের দাম অনেক বেশি।’

চাঁদপুর মাছঘাটের ইলিশ বিক্রেতা নূরে আলম বলেন, ‘এটা ইলিশের বাজার। এখানে প্রতিদিনই মাছ আসে। একটা প্রতারক চক্র অনলাইনে দেখায়, মাছের দাম অনেক কমে গেছে। তারা মানুষের কাছ থেকে মাছের টাকা নেয়, কিন্তু মাছ দেয় না। তাই এবার ক্রেতারা যাতে প্রতারণার শিকার না হন, সেজন্যে ৪১টি প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ীরা। তালিকাভুক্ত এসব প্রতিষ্ঠানের বাইরে কেউ ইলিশ কিনলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ ২৭ আগস্ট মঙ্গলবার রাতে ব্যবসায়ীদের এই তালিকা প্রকাশ করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নুর হোসেন। ওই তালিকায় ইলিশ বিক্রি করা ৪১টি প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে। নুর হোসেন জানান, অনলাইনে ইলিশ কেনাকাটার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। যারা অনলাইনে ইলিশ বিক্রি করেন তাদের নামের তালিকা চাঁদপুর মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল বারী জমাদার মানিকের কাছে সংরক্ষিত আছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় সতর্কতা হিসেবে বলেন, ‘অনলাইনে যেসব ফেসবুক পেজ জেলা মৎস্য বণিক সমিতির সদস্যদের, সেগুলোর তালিকা করে নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা বহির্ভূত অন্যান্য অনলাইন পেজ থেকে সংশ্লিষ্টদের ইলিশ ক্রয়ের বিষয়ে প্রতারণা হতে সতর্ক থাকতে হবে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের ও পুলিশের আইনশৃঙ্খলা সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। কেউ প্রতারিত হলে থানায় অভিযোগ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

আমরা অনলাইনে ইলিশ বিক্রির প্রতারণা ঠেকানোর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। তারপরও কথা থেকে যায়, অনলাইনে ইলিশ কিনে কি ক্রেতারা পুরোপুরি প্রতারণা থেকে রক্ষা পাবে? দূরবর্তী ক্রেতারা চাঁদপুরের ইলিশ অন্যান্য স্থানের ইলিশের চেয়ে বেশি সুস্বাদু বলে চাঁদপুরের অনলাইন বিক্রেতাদের থেকে অন্যান্য স্থানের বিক্রেতাদের চেয়ে বেশি দামে হলেও কিনতে চায়। এভাবে কেনার পরও অনেক ক্রেতা ইলিশ রান্না করেও ইলিশের ঘ্রাণ ও স্বাদ খুঁজে পান না। এতে গৃহবিবাদ হয়। ক্রয়কৃত ইলিশটি চাঁদপুর থেকে সরবরাহ করা হলেও এটি কি চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনায় জেলেদের জালে ধরা পড়া ইলিশ কি না সেটি নিয়ে কথা উঠে ও সন্দেহের উদ্রেক হয়। অন্য জায়গার ইলিশ চাঁদপুরের ইলিশ বলে চালানোর প্রবণতা খোদ দেশের বৃহত্তম ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র চাঁদপুর বড়ো স্টেশন মাছঘাটের অনেক ব্যবসায়ীর মাঝেই লক্ষ্য করা যায়। এই প্রবণতা রোধের জন্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কি কোনো ব্যবস্থা নেয়ার কৌশল রপ্ত করেছে বা ইতোমধ্যে অন্য জায়গার ইলিশ চাঁদপুরের ইলিশ বলে চালানোর প্রতারণার জন্যে ফাঁদ পেতে হলেও কোনো অসাধু ব্যবসায়ীকে জরিমানা করতে পেরেছে? সোর্স নিয়োগ করে চাঁদপুরের ইলিশের রং-রূপ চেনে এমন ব্যক্তিকে ক্রেতা না সাজালে ইলিশ নিয়ে সূক্ষ্ম প্রতারণা ঠেকানোর কোনো উপায় আছে বলে আমরা মনে করি না। তারপরও মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতি ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ইলিশ বিক্রির প্রতারণা ঠেকাতে যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা ধন্যবাদার্হ ও সময়োপযোগী। এতে অগ্রিম টাকা নিয়ে একেবারে কোনো ইলিশ সরবরাহ না করার যে বিরাট প্রতারণা হতো, সেটা অনেকটাই কমবে এবং ইলিশ সরবরাহ পাওয়ার পর টাকা পরিশোধ (ক্যাশ অন ডেলিভারি)-এর প্রক্রিয়াটা ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে। এটা এক ধাপ অগ্রগতি, পুরো অগ্রগতি করায়ত্ত করতে ইলিশ নিয়ে সূক্ষ্ম প্রতারণা তথা চাঁদপুরের ইলিশের পরিবর্তে অন্য জায়গার ইলিশ বিক্রি বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে বলে আমরা মনে করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়