প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৪, ০০:০০
ইমামের প্রতি এমন শ্রদ্ধাবোধ অনুসরণযোগ্য

‘৫০ বছরের ইমামকে রাজকীয় সম্মানে বিদায়’--এটি ছিলো গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি আকর্ষণীয় সংবাদ। সংবাদটিতে প্রবীর চক্রবর্তী লিখেছেন, দীর্ঘ ৫০ বছর একই মসজিদে ইমামতি, পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রসারে ভূমিকা রাখা হাফেজ মাওঃ আঃ ওয়াদুদ ভূঁইয়া (৭৫) নামে এক ইমামকে ফুল দিয় সাজানো গাড়িযোগে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে রাজকীয় সম্মানে বিদায় দিয়েছে এলাকাবাসী। ১৯ জুন বুধবার বিকেলে ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের ত্রিদোনা গ্রামে ত্রিদোনা ও দত্রা গ্রামবাসীর উদ্যোগে এই বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়। জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে ত্রিদোনা জামে মসজিদে ইমাম হিসেবে যোগ দেন ওই সময়ের টগবগে তরুণ হাফেজ মাওঃ আঃ ওয়াদুদ ভূঁইয়া। তিনি একাধারে এই মসজিদের ইমামতি ছাড়াও ত্রিদোনা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দিয়ে এলাকায় মাদ্রাসা শিক্ষায় ভূমিকা রাখেন। দীর্ঘ ৫০ বছর ইমামতি করার পর বয়সের কারণে তিনি অবসরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানালে ত্রিদোনা ও দত্রা গ্রামবাসীর উদ্যোগে তাঁকে আনুষ্ঠানিক বিদায় দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়।
এলাকাবাসী এই দ্বীনের সেবককে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিদায় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ফুল দিয়ে সাজানো গাড়িযোগে তাঁকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেয়া ছাড়াও এলাকার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। হাফেজ মাওঃ আঃ ওয়াদুদ ভূঁইয়া তাঁর বিদায়ী বক্তব্যে এই আয়োজনের জন্যে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমি আমার সারাজীবন দ্বীনের সেবায় কাটিয়েছি। এই এলাকার মানুষকে কোরআন শিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আলোচনা শেষে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর পর ফুল দিয়ে সাজানো গাড়িযোগে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা দিয়ে ইমাম হাফেজ মাওঃ আঃ ওয়াদুদ ভূঁইয়াকে নিজ বাড়ি পার্শ্ববর্তী রামগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামে পৌঁছে দেয়া হয়।
আমাদের দেশে কোনো মসজিদে ইমামের চাকুরি করা খুব সহজ নয়, যদি কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে সৎ ও ধার্মিক লোক অধিষ্ঠিত না থাকে। এমন বাস্তবতায় ফরিদগঞ্জের ত্রিদোনা ও দত্রা গ্রামের অধিবাসীদের ব্যবহৃত মসজিদের কমিটিতে নিশ্চয়ই সৎ ও ধার্মিক লোকের অধিষ্ঠান ছিলো ও আছে বলেই একজন ইমামের পক্ষে পঞ্চাশ বছর টিকে থাকা সম্ভব হয়েছে। শুধু কি তা-ই, এ দুটি গ্রামের লোকজন কতোটা ভালো হলে ওই ইমামের স্বেচ্ছায় অবসরগ্রহণের অভিপ্রায়কে মূল্যায়ন করেছে রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করে। এতে দীর্ঘদিনের ইমামের প্রতি তাদের নিখাদ শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ পেয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে অনুসরণযোগ্য।