প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৪, ০০:০০
প্রসিদ্ধ চান্দ্রা বাজারে বিশৃঙ্খলার কুখ্যাতি

ফরিদগঞ্জ উপজেলার প্রসিদ্ধ একটি বাজারের নাম চান্দ্রা বাজার। বাজারটি দীর্ঘদিন যাবত সুনামের সাথে চলে আসলেও এখন আর সেই সুনাম নেই বললেই চলে। এই বাজারে বিয়ের সওদাসহ সকল পণ্য পাওয়া যাওয়ার কারণে ক্রেতাদের আগমনও ছিলো বেশি। বর্তমানে বাজারে আগের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। বাজারের নিয়ম শৃঙ্খলা আগের মতো নেই। নেই পাহারাদার ও বাজার কমিটি। দীর্ঘ বছর ধরে কমিটিবিহীন চলে আসছে বাজার। পাহারাদার না থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তরকারি বাজারের শেড থাকা সত্ত্বেও গলির উপরে বসে আসছে তরকারির বাজার। মাছ বাজারের শেডের মধ্যে নামমাত্র মাছ বিক্রি করা হলেও অধিকাংশ মাছ বিক্রেতা শেডের বাইরে গলির মধ্যে মাছ নিয়ে বসে। গলি দখল করে তরকারি, বিভিন্ন পণ্য ও মাছ বিক্রি করা হয়ে থাকে। অধিকাংশ দোকানের সামনে বাজার ইজারাদার ফুটপাতে দোকান বসিয়ে তা থেকে খাজনা আদায় করে থাকে। আর তরকারির চটি ও বিভিন্ন মালামালের চটি বসিয়ে গলি দখল করে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। বাজার ইজারাদার এভাবে পুরো বাজারেই চটি বসিয়ে দিয়েছে। যার ফলে ক্রেতাদের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। পূর্বে বাজারের মাঝ দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল ও ব্যবসায়ীদের মালামাল নিয়ে পিকআপ প্রবেশ করতো। কিন্তু বর্তমানে ফুটপাত ও গলি দখল করে রাখায় বাজারের ভেতরের ব্যবসায়ীদের মালামাল বাজারের বাইরে গাড়ি থেকে নামিয়ে পুনরায় ক্যারিং খরচ দিয়ে দোকানে নিতে হয়। বাজার ইজারাদার স্থানীয় এমপির লোক হওয়ার কারণে কেউ ভয়ে মুখ খুলে ইজারাদারকে কিছু বলতে সাহস পায় না। ইজারাদার প্রভাব খাটিয়ে ইচ্ছেমতো ইজারা আদায় করে। বাজারের গলির মধ্যে উপরে পলিথিন টানিয়ে রাখা হয়েছে। আর এই পলিথিনের নিচে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসানো হয় এবং এসব দোকান থেকে বাড়তি টাকা নেয়া হয়। বাজারে এমন ঘিঞ্জি পরিবেশের কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। এতে করে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বাজারের ব্যবসায়ীদের। এখানেই শেষ নয়। কোনো ব্যবসায়ী নিজের দোকানের সামনে নিজের মালামাল রাখলে সেটারও খাজনা বাবদ ইজারাদারকে টাকা দিতে হয়। বাজারে হাটবারের দিন ছাগল, হাঁস, মুরগী ও কবুতর বিক্রি করলে সেখানে ক্রেতা ও বিক্রেতার নিকট হতে ইচ্ছেমতো খাজনা নিয়ে থাকে। এমনকি মুচিদের নিকট হতে ৫০ টাকা করে নিয়ে থাকে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের প্রবেশ মুখে অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে রাখার কারণে ক্রেতা ও বিক্রেতারা বাজারে প্রবেশ করতে ও বের হতে কষ্ট হচ্ছে। বাজারের গলিগুলোতে ফুটপাত বসানোর কারণে চলাচল করতে কষ্ট হয়ে পড়ে। উপরে পলিথিন টানিয়ে রাখার কারণে গলিগুলো অন্ধকার হয়ে থাকে। বাজারের যেসব দোকানে সিসি ক্যামেরা রয়েছে সেগুলোর দ্বারা ফল পাওয়া যাচ্ছে না উপরের পলিথিনের কারণে। নিয়মিত বাজার পরিষ্কার না করার কারণে নোংরা পরিবেশ বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ব্যবসায়ী বলেন, যেখানে সেখানে ইজারাদার নিজের ইচ্ছেমতো চটি বসিয়ে খাজনা আদায় করে নেয়। এভাবে চটি বসানোর কারণে বাজারের পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেছে। চটি বসিয়ে ফুটপাত ও গলি দখল করে রাখার কারণে আগুন লাগলে আমাদের সবকিছু পুড়ে পথে বসতে হবে। চটি বসিয়ে ফুটপাত দখল করে রাখার কারণে বাজারের বাইরে গাড়ি থেকে মালামাল নামিয়ে ক্যারিং করে আনতে হয়। এতে আমাদের খরচ বেশি হয়ে থাকে। আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি। ক’জন হাঁস ও মুরগী বিক্রেতা বলেন, এ বাজারে একটি মুরগী বিক্রি করলে শতকরা ১০ টাকা করে দিতে হয়। এরা জুলুম করে থাকে। অন্য বাজারে এভাবে খাজনা নেয় না। খাজনা আদায়কারীদের দাবিকৃত খাজনার টাকা না দিলে খারাপ আচরণ করাসহ মারধর করার জন্যে তেড়ে আসে। এভাবে তারা মানুষের সাথে রূঢ় আচরণ করে জোরপূর্বক খাজনার টাকা নিয়ে থাকে। ক’জন ছাগল ক্রেতা বলেন, এখানে ছাগল ক্রয় করলে খাজনা বেশি দিতে হয়। এদের দাবিকৃত টাকার খাজনা না দিলে খারাপ আচরণ করে থাকে।
ফরিদগঞ্জের চান্দ্রা বাজারের এতো অনিয়ম, বিশৃঙ্খলার উল্লেখিত বিবরণ পড়ে পাঠকমাত্রই প্রসিদ্ধ বাজারটি যে এখন বিশৃঙ্খলার কুখ্যাতিতে আচ্ছন্ন সেটা না ভেবে পারেন না। বাজারটি কোনোভাবেই বিক্রেতাবান্ধবও নয়, ক্রেতাবান্ধবও নয়--এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ বিখ্যাত ব্যবসায়ীরাও যে প্রভাবশালী বাজার ইজারাদারের কাছে গুরুত্বহীন--সেটাও আন্দাজ করা যায়। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারও কি অনুরূপ গুরুত্বহীন? অবশ্যই নয়। আশা করি তিনি চান্দ্রা বাজারটি সরেজমিন পরিদর্শন করে বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করে যথার্থ পদক্ষেপ নেবেন।