রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৫ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

এমন গুণী মানুষের অভাব সহজে পূরণ হবার নেয়

অনলাইন ডেস্ক
এমন গুণী মানুষের অভাব সহজে পূরণ হবার নেয়

এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ চাঁদপুরের সাংবাদিক ও আলেম সমাজের জন্যে পূর্ণ আনন্দ আবহ নিয়ে আসেনি। কেননা এ দুটি উৎসবের স্বল্প ক’দিন পূর্বে গত ৯ এপ্রিল সকাল ১০টায় চাঁদপুরের প্রথিতযশা সাংবাদিক ও আলেম মাওলানা এসএম আনওয়ারুল করীম ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও তিন কন্যা সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। তাঁর পঞ্চান্ন বছরের জীবনকালের মধ্যে ২৮ বছর তিনি বাংলাদেশে ও ভারতে পড়াশুনা ও গবেষণা এবং সাধারণ কর্মসংস্থানে ব্যয় করেছেন। তারপর তাঁর যে কর্মজীবন ছিলো, তাতে তিনি একের পর এক প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছেন এবং সমাজে আশাব্যঞ্জক আলো ছড়িয়েছেন।

মাওলানা এসএম আনওয়ারুল করীম ১৯৯৯ সালে চাঁদপুরের সর্বপ্রথম দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে স্বেচ্ছায় এসে যোগদান করেন এবং 'তোতা মিয়ার তিতা কথা' কলাম লিখে পাঠক সমাজে ব্যাপক সাড়া জাগান। তারপর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। চাঁদপুর কণ্ঠে সম্পাদকীয় নিবন্ধ, উপ-সম্পাদকীয়, প্রবন্ধ, প্রতিবেদন লিখে তিনি তাঁর লিখনী-দক্ষতার প্রমাণ ঘটান এবং স্বল্প সময়ে নির্বাহী সম্পাদকের পদে অধিষ্ঠিত হন। এ সময় চাঁদপুর সরকারি কলেজে তিনি বাংলা বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। তারপর তিনি দৈনিক চাঁদপুর প্রবাহে বার্তা সম্পাদক পদে যোগদান করার কথা থাকলেও সেটা না করে তিনি দৈনিক ইলশেপাড়ে প্রধান সম্পাদক পদে যোগদান করেন। একই সাথে একটি কেজি স্কুল পরিচালনা এবং ইসলামী বিষয়ক লেখার সমৃদ্ধ প্রকাশনা মাসিক হেরার পয়গাম সম্পাদনায় যুক্ত হন। তিনি দৈনিক ইল্শেপাড়ে থাকাবস্থায় জমি ব্যবসায় যুক্ত হন, মসজিদের খতিব হিসেবে নিয়োগ পান এবং ওয়াজ মাহফিলে ভালো আলোচক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে আর্থিক সামর্থ্য বৃদ্ধি করেন। আর হজ্বব্রত পালন করেন। এ সময় তিনি ইল্শেপাড় ছেড়ে দৈনিক আমার চাঁদপুরের মালিকানা কিনে সম্পাদক হয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। কিন্তু চাঁদপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক প্রিয়তোষ সাহা আনওয়ারুল করীমের লেখনীর তোপে পত্রিকাটির ডিক্লারেশন বাতিল করে দেন। এমতাবস্থায় তিনি রাজধানী ঢাকায় চলে যান এবং আল ফাতাহ প্রকাশনী সংস্থায় হাদিস বিভাগে যোগদান করে প্রধান কর্তাব্যক্তির দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন, আর মাদরাসায় পাঠোপযোগী বই সম্পাদনা ও একের পর এক অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশনায় নিজের সিদ্ধহস্ততার প্রমাণ দেন। ক্রমশ বেড়ে উঠে তাঁর কন্যা সন্তানরা এবং পড়ালেখায় প্রদর্শন করে কৃতিত্ব। বড়ো মেয়ে মেডিকেলে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করে। তাকে তিনি সুপাত্রে করেন পাত্রস্থ।

পারিবারিক জীবনে বেশ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, কর্মজীবনে আর্থিক সচ্ছলতা ও ব্যুৎপত্তি অর্জন, ইসলামী সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা হিসেবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ও সামাজিক-সৃজনশীল কাজে ব্যাপক ব্যস্ততায় কাটছিল মাওলানা আনওয়ারুল করীমের জীবন। কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় তিনি প্রায় একবছর আগে দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। ব্যক্তিগত সঞ্চয় ও চাঁদপুর প্রেসক্লাবের আর্থিক সহযোগিতায় দেশে ও ভারতে চিকিৎসাশেষে তিনি মোটামুটি আরোগ্য লাভ করেন। কিন্তু আর্থিক সঙ্কটে যথাযথ ফলোআপের অভাবে তিনি তাঁর এই আরোগ্যকে টেকসই করতে পারেন নি। অবশেষে বছরখানেকের মধ্যেই তিনি চিরবিদায় নেন।

মাওলানা এসএম আনওয়ারুল করীম সাংবাদিকতা পেশার পাশাপাশি সাংগঠনিক দক্ষতার গুণে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী কাঠামোতে পনের জনের মধ্যে একজন হবার যোগ্যতা অর্জন করেন। তিনি প্রেসক্লাব পরিচালনায় সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা করেন। তিনি শুধু চাঁদপুরের স্থানীয় পত্রিকাসমূহে লিখতেন না। জাতীয় পত্রিকাগুলোতে লিখে নিজেকে জাতীয় মানের একজন লেখক এবং বেতার, টেলিভিশন সহ ওয়াজ মাহফিল, সভা-সেমিনারসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখে নিজেকে মানসম্পন্ন সুবক্তা হিসেবে প্রমাণ করেন। আলেমদের মধ্যে একাধারে ভালো সংগঠক, ভালো লেখক, ভালো শিক্ষক ও সুবক্তা হতে পারেন নগণ্যসংখ্যকই, যাঁদের অন্যতম মাওলানা আনওয়ারুল করীম। তাঁর মতো গুণী মানুষ দীর্ঘদিন বেঁচে থাকলে দেশ উপকৃত হতো, চাঁদপুরের গৌরব বৃদ্ধি পেতো। কিন্তু তাঁর অকাল মৃত্যু তাতে বাধ সাধলো। এই মৃত্যুতে যে ক্ষতি হলো, তা সহজে পূরণ হবার নয়। আমরা বিশ্বাস করি, মাওলানা আনওয়ারুল করীম হারিয়ে যাবেন না, চাঁদপুরের সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের ইতিহাসে তাঁর অনিবার্য ঠাঁই মিলবে। স্মরণের আভরণে তাঁর মরণকে যত্নে ঢেকে রাখবেন অনেকেই। পরম করুণাময়, ক্ষমাশীল মহান আল্লাহ অবশ্যই পরকালে তাঁকে সম্মানিত, পুরস্কৃত করবেন বলে আমরা আশাবাদী। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়