রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

সুস্থতার সাথে দীর্ঘজীবী হওয়া নিতান্তই সৌভাগ্যের

অনলাইন ডেস্ক
সুস্থতার সাথে দীর্ঘজীবী হওয়া নিতান্তই সৌভাগ্যের

মানুষমাত্রই দীর্ঘজীবী হবার প্রত্যাশা করে। স্রষ্টা মানুষের সে ইচ্ছা পূরণ করেন সাধারণত দুভাবে। একটি হচ্ছে, চলাফেরা, খাওয়াদাওয়াসহ অন্য কিছুর স্বাভাবিকত্ব বজায় রেখে তথা সুস্থতার সাথে এবং আরেকটি হচ্ছে, সেটি বজায় না রেখে। কিন্তু সেই মানুষই সৌভাগ্যবান, যিনি সুস্থতার সাথে দীর্ঘজীবন লাভ করেন। এমন সৌভাগ্যবান মানুষের সংখ্যা বিরল। এদেরই একজন চাঁদপুর শহরতলীর সেকান্দর আলী মিয়াজী, যিনি চাঁদপুর শহর হতে সামান্য দূরে ছায়া সুনিবিড় গ্রামে বসবাস করে সমাজসেবাসহ নানা ভালো কাজে সর্বদা সম্পৃক্ত থেকে নিজেকে দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করে চলছেন। তিনি সফল পিতার ভূমিকায় যেমন নিজেকে প্রমাণ করেছেন, একজন সফল ও অনুকরণীয় মানুষ হিসেবেও নিজেকে তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।

চাঁদপুর কণ্ঠে তাঁকে নিয়ে ছাপা হয়েছে একটি সচিত্র প্রতিবেদন, যার শিরোনাম হয়েছে ‘শতায়ু সেকান্দর আলী মিয়াজীকে ঘিরে যতো আয়োজন’। এতে লিখা হয়েছে চাঁদপুর সদরের নানুপুর গ্রামের বাসিন্দা শতায়ু সেকান্দর আলী মিয়াজী। একসময় পুলিশের দারোগা ছিলেন। সততা আর কর্তব্যনিষ্ঠার জন্যে তাঁর অন্যরকমের পরিচিতি ছিল পুলিশ বাহিনীতে। তা চার দশক আগের কথা। তবে এখানে গল্পটা ভিন্ন। অবসরপ্রাপ্ত এই পুলিশ কর্মকর্তার গ্রামের বাড়িতে একই গোত্রের প্রায় ৬শ’ সদস্য। যাদের নিয়ে তিনি নিজেই আয়োজন করলেন পুনর্মিলনী। একসঙ্গে এই ৬শ’ জনের দুই দিনের খাওয়া। বাদ পড়েনি কয়েকটি ইভেন্টের খেলাধুলা। এসব কেবলমাত্র শতায়ু সেকান্দর আলী মিয়াজীর ইচ্ছা পূরণের জন্যে। যেটি জানালেন মেয়ে রাফেজা আক্তার রেখা। জার্মানে বসবাসকারী রেখা আরো জানান, তিনিসহ আরো ৫০ জন বিশ্বের কয়েকটি দেশ থেকে এখন মাতৃভূমিতে। যারা সবাই একই পরিবারের সদস্য। তার বাবা মৃত্যুর আগে এভাবে একসঙ্গে দেখতে চান এবং বাবার ইচ্ছা পূরণে মূলত এমন আয়োজন। জানালেন তিনি। চাঁদপুর সদরের নানুপুর এলাকায় এমন ব্যতিক্রম আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে গত ৩ ফেব্রুয়ারিতে শনিবার রাত ১২টায়। বাড়ির উঠানে নানা বয়সী ৬শ’ মানুষ। যাদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। দুদিনের টানা আয়োজন শেষে খেলাধুলার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার পর তাদের অপেক্ষা ছিল পুরস্কার নেয়ার। আর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। চাঁদপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াসির আরাফাত। এমন অতিথি নির্বাচনেও পছন্দ ছিলো শতায়ু সেকান্দর আলী মিয়াজীর। কারণ, এক সময় তিনিও এই পুলিশ বাহিনীর সদস্য ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, সেকান্দর আলী মিয়াজী চাকরি জীবন শেষ করেছেন সেই চার দশক আগে। অথচ তাঁর স্মৃতিশক্তি, শরীরের সক্ষমতা সত্যি অবাক করার মতো। তাছাড়া কর্মজীবনে এই মানুষটির সততা এবং কর্তব্য নিষ্ঠা এই সময় আমাদের অনুপ্রেরণা ও সাহস যোগায়। শুধু তাই নয়, আজকাল বৃহৎ পরিসরে পারিবারিক এমন বন্ধন খুব একটা চোখে পড়ে না। যেমনটি মিয়াজী পরিবারের বটবৃক্ষ শতায়ু সেকান্দর আলী মিয়াজী তৈরি করেছেন। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জুয়েল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জার্মান প্রবাসী রাফেজা আক্তার রেখা, বিশিষ্ট আইনজীবী জেসমিন খানম, যমুনা ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মমিনুল হক, চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক এনামুল হক, সাংবাদিক ফারুক আহম্মদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান, তারেক আলম হিটলার প্রমুখ। নানুপুর এলাকায় মিয়াজী পরিবারের পূর্ব পুরুষ ‘পানাউল্লাহ মিয়াজী যুব সমাজ’ নামে একটি সংগঠন ব্যতিক্রমধর্মী এমন আয়োজন করে। যে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা শতায়ু সেকান্দর আলী মিয়াজী।

আমরা চাঁদপুর কণ্ঠে প্রায়শই নানা প্রতিবেদন ছাপি। কোনোটি সাধারণ, আবার কোনোটি অসাধারণ, বিচিত্র ও ব্যতিক্রম। সেকান্দর আলী মিয়াজীর ওপর ছাপানো প্রতিবেদনটিকে কিছুটা ব্যতিক্রম মনে হলো। আর তাঁকে? হ্যাঁ, তাঁকেও মনে হলো ব্যতিক্রম ও অসাধারণ। আমাদের সমাজে অনেকে তেলাপোকার মতো টিকে থাকা বা বেঁচে থাকাতে সার্থকতা খোঁজে। আবার অনেকে অসুস্থ অবস্থায় বা অকর্মণ্য অবস্থায় বেঁচে থেকে অন্যের গলগ্রহ হয়ে যায়, বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর বিপরীতে জনাব সেকান্দর আলী মিয়াজী সুস্থতার সাথে দীর্ঘজীবী হয়ে কর্মতৎপরতার মাধ্যমে পরিবারের জন্যে, নিজ বাড়ির জন্যে ও সমাজের জন্যে দৃষ্টান্ত হয়ে গেছেন। তাঁর মতো এমন দৃষ্টান্ত একেবারে হাতেগোণা, এমনকি নগণ্য। আমরা এটিকে সৃষ্টিকর্তার বিশেষ নেয়ামত ভাবছি এবং সেজন্যে মহান আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করছি। তিনি তাঁর জীবনের শেষদিন পর্যন্ত কর্মক্ষম ও দৃষ্টান্তযোগ্য থাকুন--সেটাই আমাদের নিরন্তর প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়