রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৫ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাতে কেবল দুঃখবোধই হয়, কিছু কি করা যায় না?

অনলাইন ডেস্ক
যাতে কেবল দুঃখবোধই হয়, কিছু কি করা যায় না?

চাঁদপুর শহরতলীতে এক লোকের দুধেল গাভী চুরির পর তিনি পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। কারণ, এই গাভীর দুধ বিক্রি করে চলতো তার সংসার। লোকটির পাগলামির চিকিৎসা করার সামর্থ্য ছিলো না তার পরিবারের। সেজন্যে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো তার ঘরের আঙ্গিনায়। এই ঘটনা নিয়ে সংবাদপত্রে পরিবেশিত হলো সংবাদ। চোখে পড়লো এক সমাজসেবকের, যিনি লোকটিকে একটি দুধেল গাভী কিনে দিয়ে পাগলামি দূর করলেন। এই সমাজসেবকের নাম ছিলো জিএম ফজলুল হক, যিনি পরবর্তীতে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। হাইমচরে এক কৃষক বজ্রপাতে তার দুধের গাভীসহ মারা গেলেন। এই শোকে তার এক মেয়ে পাগল হয়ে গেল। এই ঘটনায় সংবাদ প্রকাশিত হলে তৎকালীন এমপি ডাঃ দীপু মনি পরিবারটির পাশে হাইমচর উপজেলা প্রশাসনসহ দাঁড়িয়েছেন। এভাবে অনুরূপ প্রতিটি ঘটনায় অনেকের মাঝেই দুঃখবোধের সঞ্চার হয়, কিন্তু সংবেদনশীলতায় ভোগে ক’জন? কে কার পাশে দাঁড়ায়?

গত বৃহস্পতিবার চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে দুটি গাভী চুরির সংবাদ। শিরোনাম হয়েছে ‘হাজীগঞ্জে ২ গরু চুরিতে সর্বস্বান্ত দিনমজুর’। সংবাদটিতে মর্মান্তিকতা তুলে ধরে কামরুজ্জামান টুটুল লিখেছেন, দিনমজুর হারুন। অনেকটা নিঃস্ব। সহায় সম্বল বলতে গরু দুটি আর গায়ের শক্তি। মাঠে কাজ করতে গিয়ে গরুর জন্যে খড়কুটো কুড়িয়ে আনেন। তা দিয়ে গরুর খাবার জুটে। সেই দুটি গরুর প্রতি চোরের নজর পড়ে। চোরের দল দুটি গরুই চুরি করে নিয়ে যায়। গত বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকালে হাজীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত মোঃ হারুন মজুমদার। তিনি পৌরসভাধীন ৭নং ওয়ার্ডস্থ টোরাগড় গ্রামের মধ্য মজুমদার বাড়ির জিতু মজুমদারের ছেলে। জানা গেছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময়ে চোর বা চোরের দল হারুন মজুমদারের বাড়ির সামনে থাকা গোয়াল ঘরের দরজার হ্যাজবোল্টসহ ৫টি তালা ও শিকল কেটে গাভী দুটি নিয়ে যায়। এর মধ্যে একটি গাভী লাল ও একটি সাদাকালো চিত্রা রংয়ের। লাল রংয়ের গাভীটি ১৫ দিন পূর্বে একটি বাছুর জন্ম দিয়েছিলো। ক্ষতিগ্রস্ত হারুন মজুমদার জানান, প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে গাভী দুটির গলায় পৃথকভাবে তালাবদ্ধ ও শিকল পেঁচিয়ে এবং গোয়াল ঘরের দরজায় ৩টি তালা দিয়ে তিনি বসতঘরে চলে আসেন। আসার সময় গরু দুটিকে খাবার দিয়ে লাল রংয়ের গাভীটির সদ্যজাত বাছুরটিকে সাথে নিয়ে আসেন। বুধবার ভোরে ফজরের নামাজের পর গোয়ালঘরে গিয়ে দেখেন, গরু দুটি নেই। চোরেরা গোয়াল ঘরের দরজার তিনটি তালা এবং গরু দুটির গলায় পেঁচানো শিকল ও দুটি তালাসহ মোট ৫টি তালা কেটে গরুগুলো নিয়ে গেছে। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, গরু দুটির দাম আড়াই/তিন লাখ টাকা হবে। ওই বাড়ির কবির মজুমদার বলেন, চার/পাঁচ বছর আগে একটি গাভী গরু কিনে লালন-পালন করেন হারুন মজুমদার। গাভীটি ১৫ দিন আগে একটি বাছুর জন্ম দিয়েছে এবং সেই গাভীর প্রথম বাছুরটি অনেক বড় হয়েছে। ওই বাছুরটিও কয়েকমাস পরে বাছুর জন্ম দিবে। অথচ এই সময়ে গাভী দুটি চোরে নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান, তদন্তপূর্বক চোরদের চিহ্নিত এবং গাভী দুটি উদ্ধারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিশ্চয় এই চুরির ঘটনাটি অনেক কষ্টকর। যারা সংবাদটি পড়েছেন বা পড়বেন কিংবা যে ঘটনাটি কোনোভাবে জেনেছেন বা জানবেন, তারা দুঃখবোধ না করে পারবেন না। পুলিশ যদি ব্যবস্থা নিয়ে চোরাই গাভী দুটি উদ্ধার করতে পারে, তাহলে তো উপকৃত হবেন ক্ষতিগ্রস্ত হারুন মজুমদার। অন্যথায় তার ক্ষতির যন্ত্রণা উপশম হবে না সহসা। আমরা মনে করি, সরকারের কোনো না কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে কিংবা সংবেদনশীল কোনো মানুষের পক্ষ থেকে হারুন মজুমদারের পাশে দাঁড়ানো দরকার, যাতে তিনি ঘুরে দাঁড়াতে পারেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়