প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

হাজীগঞ্জের গোগরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, মাদক সেবনসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে সংবাদ বেরিয়েছে। সংবাদটি পড়ে পাঠকমাত্রই বলতে বাধ্য : একজন দপ্তরি এতো অপকর্ম করতে পারে! নিশ্চয়ই তার কাজ তদারকি ও জবাবদিহিতা আদায়ে নিয়োজিতরা কুম্ভকর্ণের ঘুমে আচ্ছন্ন।
সংবাদটিতে চাঁদপুর কণ্ঠের হাজীগঞ্জ ব্যুরো ইনচার্জ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামরুজ্জামান টুটুল লিখেছেন বিস্তারিত। সংবাদটির সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে : দুছাত্রীকে যৌন হয়রানি, নারী অভিভাবকের মোবাইল ফোনে অশ্লীল কথোপকথন, ক্লাসে ঢুকে শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত, মাদকের দায়ে আটক হওয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ক্লাস্টারের গোগরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। সে একই গ্রামের মালের বাড়ির আঃ সাত্তারের ছেলে।
সরজমিনে গেলে জানা যায়, মিজানুর রহমান বিদ্যালয়ে নিয়োগের পর থেকে নিজের মতো চলছেন। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে চতুর্থ শ্রেণির এতিম এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠে। এছাড়া ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাতের অভিযোগ উঠে খোদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। এছাড়া মাদকের ঘটনায় আটক হওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তিনি মাদক সেবনকালীন পুলিশের হাতে আটক হন। পরে পুলিশ তাকে আদালতে সোপর্দ করে। প্রধান শিক্ষক আলেয়া বেগম জানান, যৌন হয়রানির বিষয়টি আমি জেনে ছাত্রীকে ডেকে ঘটনার সত্যতা পাই। এরপরেই আমি মৌখিকভাবে ম্যানেজিং কমিটিসহ ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। মিজানুর রহমানের মাদকের ঘটনাকালীন আমি বিদ্যালয়ের দায়িত্বে ছিলাম না বলে এই প্রধান শিক্ষক বলেন, পুলিশের হাতে আটক হয়েছে কিনা তা বলতে পারবো না। তবে ওইদিন মিজানুর রহমান বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কারণে অনুপস্থিত দেখানো এবং শোকজ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে বেত্রাঘাতের বিষয়ে তিনি বলেন, বেত্রাঘাত নয় গাছের ডাল দিয়ে মারার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে জানতে পেরে মৌখিকভাবে সতর্ক করেছি এবং ভবিষ্যতে এমনটি না করার নির্দেশনা দিয়েছি। সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ ফারুক হোসেন জানান, যৌন হয়রানির শিকার মেয়েটির নানা বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। এছাড়াও দপ্তরি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আরো কিছু অভিযোগ শুনেছি। আমি চাই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হোক। কারণ, এটি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য বোরহান মিয়াজী জানান, ১৪ নভেম্বর মঙ্গলবার দপ্তরি মিজানুর রহমানের অনৈতিকতার বিষয়ে বিদ্যালয়ে সভা ডাকা হয়। সভায় ওই ছাত্রীকে জিজ্ঞাসা করা হলে ছাত্রীটি সবার সামনে ঘটনা খুলে বলে। এরপরই আমরা সভায় মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে রেজুলেশন করি। এখন এটি পরিমার্জন করে ম্যানেজিং কমিটিসহ সকলের স্বাক্ষর নিয়ে উপজেলায় জমা দেয়া হবে। বাকিলা ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, বিষয়টি আমি শুনে শিক্ষা কর্মকর্তা স্যারকে জানিয়েছি। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ মাহবুব হাসান মুঠোফোনে জানান, আমি ঢাকা আছি। প্রধান শিক্ষককে বলেছি, তিনি যেন ম্যানেজিং কমিটির সভা ডেকে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, বিষয়টি সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। আমি প্রধান শিক্ষককে ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশনসহ লিখিতভাবে জানানোর নির্দেশনা দিয়েছি। পরে তদন্তপূর্বক বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ রাশেদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলছি। তিনি তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন।
কথায় আছে, সরকারি চাকুরি ছোট হোক বড়ো হোক, পাওয়া কঠিন, যাওয়া কঠিন। বোধকরি সেজন্যে এতো অপকর্ম করা সত্ত্বেও গোগরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণে এতো দীর্ঘসূত্রিতা অবলম্বন করা হয়েছে। আমাদের তাই বলতে ইচ্ছে করছে, এ যেন মশা মারতে কামান দাগানোর মতো অবস্থা। অপরাধ কর্মে দপ্তরির এতোটা বেড়ে যাওয়ার পেছনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি এবং বাকিলা ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের উদাসীনতা, শৈথিল্য ও সময়োচিত ব্যবস্থাগ্রহণের অভাবকে দায়ী করা ছাড়া উপায় নেই। আমরা বিশ্বাস রাখি, বিলম্বে হলেও দপ্তরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। তবে সেটা যদি লঘুদণ্ড হয়, তাহলে আপত্তি উঠবে নিশ্চিত। কথা হলো, দপ্তরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণে বিলম্বের জন্যে দায়ীদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে না? যদি করা না হয়, তাহলে দপ্তরি মিজানুর রহমানের মতো আরো অনেকে এমন অপরাধ কর্মে লিপ্ত হবার সাহস পাবে।