প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

চাঁদপুর শহরের সাবেক কুমিল্লা রোড, বর্তমান আব্দুল করিম পাটোয়ারী সড়কে ব্যাপক সংস্কারের নামে মেয়র নাছিরউদ্দিন আহমেদের পূর্ববর্তী এক চেয়ারম্যানের সময় জনদুর্ভোগ কোন্ পর্যায়ে পৌঁছেছিল, সেটা ওই সময়কার ভুক্তভোগীরা ভুলে যাওয়ার কথা নয়। সেটা চেয়ারম্যানের কারণে যতোটা হয়েছিল, তারচে' ঠিকাদারের কারণে বেশি হয়েছিল। মানুষ হাত-পা ভেঙ্গে হাসপাতালে গিয়েছিল, কেউ কেউ পঙ্গুত্বও বরণ করেছিল। আর পায়ে হাঁটতে গিয়ে কষ্ট পেয়ে এবং গর্তময় রাস্তায় অধিক ভাড়ায় রিকশায় চলতে গিয়ে চেয়ারম্যান ও ঠিকাদারকে যে কতোটা গালাগাল দিয়েছে, সেটা প্রত্যক্ষদর্শী শ্রোতারাই কেবল বলতে পারবে। পরবর্তী নির্বাচনে ওই চেয়ারম্যান আবার প্রার্থী হলে তার পরাজয়ের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেই রাস্তাটিই। এতে ওই ঠিকাদারের কি কিছু হয়েছে? তিনি পার্সেন্টেজ দিয়ে কাজের পুরো বিল ঠিকই তুলে নিয়েছেন।
সংস্কারের নামে কার্যত ঠিকাদারের কাছে জনগণই জিম্মি হয়। কেননা তাতে তদারককারী প্রকৌশলী ও কর্তৃপক্ষ কারোরই কিছু যায় আসে না। বিলম্বিত সময়ে কাজ শেষ করে ঠিকাদার ঠিকই বিল তুলে নেয় যাদেরকে ম্যানেজ করার দরকার পড়ে, ঠিক ঠিক তাদেরকে ম্যানেজ করেই। চাঁদপুর শহরে এক ঠিকাদারের ধীরগতির কাজে দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে আছে জিটি রোডের বাসিন্দারা। জিটি মানে গুণরাজদী তরপুরচণ্ডী। এই নামের সড়কটির উত্তরাংশের বাসিন্দারাই বর্তমানে পড়েছে বেশি ভোগান্তিতে। এটি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার চাঁদপুর কণ্ঠে হয়েছে সচিত্র শীর্ষ সংবাদ। ‘জিটি রোড সংস্কার : ঠিকাদারের গাফিলতিতে জনদুর্ভোগ’ শিরোনামের সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, গত জুলাই মাসে জিটি রোডের ক্ষত-বিক্ষত রাস্তার খবর ফেসবুকে পোস্ট করেন ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় এলাকাবাসী। এ খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান সরজমিনে এসে ১৩ জুলাই রাস্তাটির সংস্কার কাজ শুরু করান। এদিকে দিনের পরে দিন মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে, কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। ৪ ফুটের রাস্তায় আরসিসি ঢালাই হবে। ঠিকাদারের গাফিলতিতে সংস্কারের নামে এখন জনদুর্ভোগ চরমে দেখা দিয়েছে, যা সরজমিনে গেলে যে কেউ এবং ভুক্তভোগীরাই বলতে পারবে। রাস্তার পাশে ড্রেনের কাজের বিলম্ব হওয়ায় ইতিমধ্যে দুটি শিশুসহ একজন নারী ড্রেনে পড়ে আহত হয়েছে। এ নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।
ঈদুল আজহার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির পানি জমে গিয়ে জিটি রোড ক্ষতবিক্ষত হয়ে ভয়ানক রূপ নিয়েছে। প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বিশেষ করে অটোরিকশার যাত্রীদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। গাড়ির ঝাঁকুনিতে মানুষের কোমর, হাঁটু ও মাথায় আঘাত পেয়ে আহত হন অনেকেই। এ এলাকার মানুষ এখন বিরক্ত হয়ে গেছে। তারা চান রাস্তার সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ হোক। সাংবাদিকদের এভাবেই কথাগুলো বললেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা। পৌর ১৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ কবির হোসেন চৌধুরী জানান, বৃষ্টির কারণে কাজ বিলম্ব হচ্ছে। তবে আমি ঠিকাদারকে বলে দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা চালিয়ে যাবো। রাস্তাটির সংস্কার কাজ চলছে এবং দুই পাশে ফুটওয়াক থাকবে। যাতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে হাঁটাচলা করতে পারে। আর এ রোডে যে সকল জায়গায় বাজার আছে সেখানে সিসি ঢালাই হবে। এ রোডের প্রস্থ হবে ২০ফুট। রোডটি বর্তমানে চেয়ারম্যান ঘাটা থেকে ৪০০ ফুট আরসিসি ঢালাই হবে।
আমরা চাঁদপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ জিটি রোডের উত্তরাংশের সংস্কার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র ও ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সহ সংশ্লিষ্ট অন্য সকলের ত্বরিৎ যথাযথ ভূমিকা নিশ্চিত করে জনগণকে দুর্দশা থেকে মুক্তি দেয়ার বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্বারোপ করছি। একই সাথে অতি বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত চাঁদপুর শহরের ব্যস্ত রাস্তাসমূহ বড়ো ধরনের সংস্কার বা মেরামতের পূর্বে চলনসই করতে যা যা করণীয় সেটি সম্পাদন করতে কার্যকর পদক্ষেপগ্রহণের বিষয়টি মাথায় রাখতে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে চাঁদপুর শহরের রাস্তা সমূহ চলনসই বা বড়ো ধরনের সংস্কারের আওতায় আনা না গেলে সেটি যে শাসকদলীয় প্রার্থীর ভোটের ওপর প্রভাব ফেলবে--সেটি সহজ অনুমানেই নির্ণীত হয়। এই অনুমান হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করার জন্যে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের আশুদৃষ্টি কামনা করছি।