রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

রাজনৈতিক আচরণে রাজারগাঁও-সম্প্রীতি!
অনলাইন ডেস্ক

স্মরণকালের বৃহত্তম জানাজা, সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মেয়র ও ইউএনওসহ বিভিন্ন মহলের শোক প্রকাশের মধ্য দিয়ে শ্রেষ্ঠ ইউপি চেয়ারম্যান আঃ হাদীর তিন দফা জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এটি চাঁদপুর কণ্ঠের হাজীগঞ্জ ব্যুরো ইনচার্জ কামরুজ্জামান টুটুল কর্তৃক গতকাল পরিবেশিত একটি সংবাদের নির্যাস। তিনি সংবাদটির সূচনায় লিখেছেন, হাজীগঞ্জের ১নং রাজারগাঁও উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের তিনবারের চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, ঢাকার কাওরান বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি, শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবে একাধিক পুরস্কার প্রাপ্ত আলহাজ্ব আব্দুল হাদী (৬০)-এর তিন দফা জানাজা শেষে পূর্ব বাজারগাঁও নিজ বাড়ির পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। বিশেষ করে রাজারগাঁও বাজারস্থ ঈদগাহ মাঠ, মসজিদ আর রাজারগাঁও ফাজিল মাদ্রাসা মাঠ মুসল্লিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তিনি হাজীগঞ্জ বাজারস্থ নিজ বাড়িতে স্ট্রোক করেন। তারপরেই তাকে বাজারস্থ একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

হাজীগঞ্জ উপজেলায় অনেক বিখ্যাত, আলোচিত ও বহুল পরিচিত হলেও আব্দুল হাদী পুরো জেলা ও দেশের বহুল পরিচিত তেমন কেউ ছিলেন না। আমাদের দেশের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি নিজ এলাকায় নানা কারণে সমাদৃত থাকেন না। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান আঃ হাদী এক্ষেত্রে ছিলেন অনেক ব্যতিক্রম। নিজ ইউনিয়নে তার জনপ্রিয়তা ছিলো আকাশচুম্বী। যার প্রমাণ মিললো তার মৃত্যুতে সকল স্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের স্বতঃস্ফূর্ততা দেখে।

কামরুজ্জামান টুটুলের উল্লেখিত সংবাদটির শেষ দিকে ‘ফুলে ফুলে ঢেকে গেলো কফিন’ সাব হেডিংয়ে চাঁদপুর কণ্ঠের স্থানীয় প্রতিনিধি আলমগীর কবির লিখেছেন, রাজারগাঁওয়ের ইউপি চেয়ারম্যান আঃ হাদীর জানাজা শেষে দাফনের পূর্বে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন মিয়াজীর নেতৃত্বে নেতা-কর্মীবৃন্দ, হাজীগঞ্জ উপজেলার সকল ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষে ইউপি চেয়ারম্যান ইউসুফ সুমন প্রধানীয়া, রাজারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে আলমগীর কাজীর নেতৃত্বে অন্যরা, রাজারগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক হাজী আবুল কালামের নেতৃত্বে অন্যরা, যুবলীগের পক্ষে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কে. এম. ফয়েজ বাবুর নেতৃত্বে অন্যরা, ছাত্রলীগের পক্ষে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ সোহাগ আহমেদের নেতৃত্বে অন্যরা, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মফিজুর রহমানের নেতৃত্বে অন্যরা, যুবদলের সহ-সভাপতি বাসার আহমেদের নেতৃত্বে অন্যরা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবু বকর নয়নের নেতৃত্বে অন্যরা, ছাত্রদলের সভাপতি ইউনুছ খানের নেতৃত্বে অন্যরা, রাজারগাঁও বাজার ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে মোঃ আলী আহমেদের নেতৃত্বে অন্যরা। এভাবে তার কফিন ফুলে ফুলে ঢেকে গেলো, মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন মৃত আব্দুল হাদী মিয়া।

আমাদের দেশে ক্ষমতায় আসীন হবার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, শিষ্টাচার, ব্যক্তিগত আনন্দে ভাগাভাগি, মৃত্যুতে জানাজায় অংশগ্রহণ, শোক ও সমবেদনা প্রকাশের মানসিকতা ক্রমশ বিরল হয়ে যাচ্ছে। তারপরও হাজীগঞ্জের রাজারগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আঃ হাদী মিয়ার মৃত্যুতে তার দল আওয়ামী লীগ সহ অন্যদের পাশাপাশি বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শুধু অংশ নেননি, তারা কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধাও নিবেদন করেছেন, যেটা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মুখোমুখি থাকা অবস্থায় কারো ভাবতেও কষ্ট হয়। আঃ হাদী মিয়া জীবদ্দশায় দলমত নির্বিশেষে নিশ্চয় গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছিলেন বলে মৃত্যুর পর তার জানাজা, শোক প্রকাশ ও শ্রদ্ধা নিবেদনে তার সার্বজনীন প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা কোনো রাজনৈতিক নেতা/ কর্মীর মৃত্যুর পর রাজনৈতিক আচরণে দেশের সর্বত্র যদি অন্তত রাজারগাঁও-সম্প্রীতি প্রত্যাশা করি, তাহলে সেটা কি দোষের হবে কিংবা বেশি কিছু হবে? আমাদের অভিমত, যদি আমাদের এই প্রত্যাশা পূরণ হয়, তাহলে বর্তমান রাজনৈতিক প্রজন্ম রাজনৈতিক শিষ্টাচার শিখবে, যেটির ফলাফল বা প্রভাবের প্রতিফলন অবশ্যই সমাজে ইতিবাচকভাবে পরিলক্ষিত হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়