প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
উদ্বেগজনক জোড়া খুন এবং গ্রামীণ নিরাপত্তা

চাঁদপুর জেলায় সাম্প্রতিক সময়ে যে ক’টি ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তার মধ্যে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে হাজীগঞ্জে সংঘটিত জোড়া খুন অন্যতম। চাঁদপুর কণ্ঠের হাজীগঞ্জ ব্যুরো ইনজার্জ কামরুজ্জামান টুটুল এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে শনিবার লিখেছেন, হাজীগঞ্জে হিন্দু বাড়ির হিন্দু কেয়ারটেকার দম্পতি খুন হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় এ ঘটনা ঘটে। ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের বড়কুল গ্রামের কালা সতীনাথ বাড়ির বসতঘর থেকে উত্তম চন্দ্র বর্মন (৬৫) ও কাজল রাণী বর্মন (৫০) নামের দম্পতির লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। এর আগে ওইদিন ভোরে তাদেরকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেখতে পান প্রতিবেশী এক নারী। নিহত দম্পতি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার পেয়ারাপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। তারা দু কন্যা সন্তানের জনক-জননী। নিহত উত্তম বর্মন স্থানীয় রায়চোঁ বাজারে মাছের ব্যবসা করতেন। জোড়া খুনের প্রকৃত কারণ তদন্তে পিবিআই ও সিআইডি টিমসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ঘটনাস্থল ঘুরে তথ্য আর আলামত সংগ্রহ করেছে। এদিকে একই দিন দুপুরে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, বড়কুল গ্রামের সতীনাথ বাড়ির মালিক দুলাল চন্দ্র সাহা নারায়ণগঞ্জে ব্যবসা করেন। তাদের বাড়ি এবং বসতঘর গত ৮/১০ বছর ধরে দেখাশোনা করছেন উত্তম বর্মন ও তার স্ত্রী কাজল বর্মন। লাশের প্রথম প্রত্যক্ষদর্শী সবিতা রাণী সাহা জানান, শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে আমি পূজার ফুল তুলতে ওই বাড়ির বিল্ডিংয়ের সামনে গিয়ে দেখি বিল্ডিংয়ের দরজা খোলা। এ সময় আমি তাদেরকে না দেখে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া না পেয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে দেখি, তাদের ঘরের জিনিসপত্র সব এলোমেলো। ঘরের আরেকটু ভিতরে গিয়ে উত্তর পাশের রুমে দেখি, উত্তম বর্মন খাটের উপর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বিবস্ত্র এবং দক্ষিণ পাশের রুমে কাজলী রাণী খাটের উপর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অর্ধ বিবস্ত্র পড়ে রয়েছে। এই অবস্থা দেখে আমি চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। যে ঘরে দম্পতির লাশ মিলে সেই ঘরের পেছনের অংশের একটি গ্রিল কাটা ছিলো বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এটি কি পরিকল্পিত খুন নাকি অন্য কোনো কারণে খুন হয়েছেন--তা কেউ নিশ্চিত করতে পারছেন না। এদিকে জোড়া খুনের খবর পেয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জসহ সঙ্গীয় ফোর্স দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশের সুরতহাল তৈরি ও আলামত সংগ্রহ করেন। এরপরেই ঘটনাস্থল তদন্তে আসেন পিবিআই, সিআইডিসহ সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রশিদ ঘটনা নিশ্চিত করে জানান, লাশ উদ্ধারসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ঘটনাস্থলে তদন্ত করেছে। আমরা বেশ ক’টি বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত শুরু করেছি। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর ময়না তদন্তের জন্যে দুটি লাশ চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, কী কারণে এমন জোড়া খুন তা নিশ্চিত হতে এবং খুনিদের খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে।
আমরা আশাবাদী, পুলিশ হাজীগঞ্জের জোড়া খুনের রহস্য উন্মোচনে অবশ্যই সক্ষম হবে। খুনিদের আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে শনাক্ত করা পুলিশের জন্যে খুব কঠিন কাজ বলে মনে করি না। হাজীগঞ্জের নিভৃত পল্লীতে সংঘটিত এমন হত্যাকাণ্ডের পেছনে যে কারণই নিহিত থাকুক না কেনো, আমরা খুনিদের ফাঁসি দাবি করছি। এ ঘটনা থেকে শুধু হাজীগঞ্জ নয়, গ্রামীণ সকল জনপদের নিরাপত্তা সম্পর্কে সতর্ক হওয়া ও সতর্কতা অবলম্বনে গুরুত্বারোপে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের করণীয় নিয়ে ভাবনার অবকাশ তৈরি হয়েছে বলে আমরা মনে করি।