রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

ব্যভিচারিণী না হয়েও খেলেন এমন মার!
অনলাইন ডেস্ক

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি)-এর ক্ষতিকর দিকের কথা বলতে বলতে আমরা হয়রান। কিন্তু এর কিছু ধন্বন্তরি সুফলের কথা না বললেই নয়। আজকাল কোনো শিশু হারিয়ে গেলে বা পাওয়া গেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিলে তাকে খুঁজে পাওয়া বা তার অভিভাবক খুঁজে পাওয়া অনেক সহজ হয়। এইতো সেদিন টিসিবির চাল-ডাল কুড়িয়ে নেয়া অসহায় বৃদ্ধা নারীর ভিডিও ফরিদগঞ্জের এক গণমাধ্যমকর্মী ফেসবুকে পোস্ট দিলে সেটি ভাইরাল হয় এবং ইউএনওর দৃষ্টিগোচর হয়। এতে ইউএনও বৃদ্ধার পাশে সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা নিয়ে পাশে দাঁড়ান। চাঁদপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল আবুল হোসেন মানিক গেল জুলাইতে মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তিকে খুঁজে পেয়ে সেবা-শুশ্রূষা দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেন এবং ফেসবুকে পোস্ট দেন। ক'দিনের মধ্যেই ব্যক্তটির পরিচয় টিপু বলে জানা যায় এবং নিখোঁজ হবার ছয় বছর পর কুমিল্লা থেকে অভিভাবকরা এসে টিপুকে চাঁদপুরের পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে গত ৭ আগস্ট কনস্টেবল আবুল হোসেন মানিকের কাছ থেকে বুঝে নিয়ে যায়।

গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের কচুয়া ব্যুরো ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন কর্তৃক পরিবেশিত এক সংবাদে জানা যায়, কচুয়ায় সালিসি বৈঠকে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে আকলিমা বেগম (৩০) নামে এক গৃহবধূকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরালের ঘটনায় ইউপি সদস্যসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। আটককৃতরা হচ্ছেন : উপজেলার সিংআড্ডা গ্রামের ইউপি সদস্য ফরিদ আহমেদ (৩২), জসিম উদ্দিন (৪২), আনোয়ার হোসেন (৫০) ও নবীর হোসেন (৩৮)। এ ঘটনায় গৃহবধূ আকলিমা বেগম বাদী হয়ে কচুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে আকলিমা বেগম নামের ওই গৃহবধূকে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় তা ভাইরাল হয়। গৃহবধূকে নির্যাতন করার সময় এক যুবক তার মোবাইল ফোনে ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট করে। মুহূর্তের মধ্যে ২৭ সেকেন্ডের ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরিদ আহমেদের উপস্থিতিতে আলমগীর হোসেন নামের এক যুবক গৃহবধূ আকলিমাকে দেশীয় লাঠি (মোত্রা) দিয়ে তার পিঠে উপর্যুপরি আঘাত করছে। আশপাশের দু-একজন বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তাতে পাত্তা না দিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়। পেটানোর সময় ২টি মোত্রা ভেঙ্গে গেলে আলমগীর চেয়ার দিয়ে পেটাতে আসে। এ দৃশ্য যেন মধ্যযুগের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। অবিলম্বে এ নরপিচাশদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্যে প্রশাসনের প্রতি সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন পোস্টে কমেন্ট করা ব্যক্তিরা। গৃহবধূ আকলিমা জানান, প্রায় ২০ বছর পূর্বে সিংআড্ডা গ্রামের মজুমদার বাড়ির আব্দুর রহিমের সাথে আমার বিয়ে হয়। ওই ঘরে আমার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ২০১৪ সালে আমার স্বামীর মৃত্যু হলে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বিপাকে পড়ি আমি। বিভিন্ন সময় খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয়েছে আমাকে। একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ৫দিন পূর্বে একই গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ির আলমগীর হোসেনকে বিয়ে করি। বিয়ে করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার ৯ আগস্ট কচুয়া উত্তর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরিদ আহমেদের বাড়িতে সালিসি বৈঠক বসায়। এই বৈঠকে আমার প্রথম পক্ষের ভাসুর আনোয়ারের ছেলে আলমগীর সালিস চলাকালীন প্রকাশ্যে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। পরে আমার পরিবারের লোকজন আমাকে উদ্ধার করে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করায়। কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইব্রাহীম খলিল জানান, ঘটনার দিন রাতে কচুয়া থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ তাৎক্ষণিক ইউপি সদস্য ফরিদ আহমেদ ও তার ভাই জসিমসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত চার জনকে প্যানেল কোডের সংশ্লিষ্ট ধারায় বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে চাঁদপুরের জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামী আলমগীর হোসেন পলাতক থাকায় তাকে গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সংবাদটির উপরোল্লিখিত বিবরণীতে আকলিমার পরিচয় একজন গৃহবধূ হিসেবেই পাওয়া যায়, যিনি সাবেক স্বামীর মৃত্যুতে বিধবা হয়ে ৯ বছর কষ্টকর জীবন কাটিয়ে একমাত্র মেয়ের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা ভেবে অতি সম্প্রতি আরেকজনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার বিরুদ্ধে বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগে অর্থাৎ ব্যভিচারিণী হিসেবে নয়, দ্বিতীয় স্বামীর ঘর করার অদ্ভূত অভিযোগ এনে স্থানীয় মেম্বারের বাড়িতে তথাকথিত সালিস বসিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় চালানো হয় নির্যাতন। এটা ধর্ম ও আইনবিরুদ্ধ কাজ যে হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এতে চারজন গ্রেফতার হলেও মূল আসামী আলমগীর পলাতক রয়েছে। অকালে স্বামী হারানো একজন বিধবাকে এতিম কন্যা সন্তান নিয়ে অতি সাধারণভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা যে সমাজ দিতে পারে না, সে সমাজের মোড়ল কীভাবে বৈধভাবে বিয়ে করার দায়ে(!) একজন নারীর বিরুদ্ধে সালিসি বৈঠক বসাতে পারে, সেটা সচেতন বিবেকবান কোনো মানুষেরই বোধগম্য হয় না। একজন নারীর জন্যে তার স্বামী, আর সন্তানদের জন্যে তাদের বাবা কতো বড়ো ছায়া বা আশ্রয়, সেটা তারাই তিলে তিলে উপলব্ধি করে, যারা অসময়ে/ অকালে সেই ছায়া বা আশ্রয় হারায়। সেজন্যে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে যে, স্বাভাবিকভাবে বিধবা হওয়া নারীর জন্যে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সরকারি ভাতা দেয়ার পাশাপাশি অকালে বিধবা হওয়া নারীর জন্যে কেবল ভাতা নয়, তাদের পুনর্বাসন ও নিরাপত্তার জন্যে প্রয়োজনীয়তার আলোকে কিছু করার বিষয়টি সরকারকে অথবা কোনো না কোনো এনজিওকে বিশেষভাবে ভেবে দেখার অবকাশ তৈরি হয়েছে। অকালে বৈধব্যবরণকারীদের ওপর সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে জরিপ চালালে আমাদের বিশ্বাস এমন তথ্য বেরিয়ে আসবে, যাতে কারো কারো চোখ কপালে উঠে যেতে পারে । তখন করণীয় নির্ধারণের আবশ্যকতা অনুভূত হবে তীব্রভাবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়