রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

গ্রামীণ ত্রিসীমানার সড়ক মানেই যেন নিশ্চিত দুর্ভোগ--
অনলাইন ডেস্ক

চাঁদপুর জেলায় বিদ্যমান সড়কগুলোর মধ্যে যেগুলো ত্রিসীমানায় পড়েছে, সেগুলো যেন নিশ্চিতভাবে সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্যে দীর্ঘ দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন সড়কের একটি হচ্ছে মহামায়া-রাজারগাঁও সড়ক। এ সড়কটি চাঁদপুর সদর উপজেলায় চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের সংযোগ রক্ষা করে মহামায়া থেকে শুরু হয়ে মতলব দক্ষিণ উপজেলার সীমানা অতিক্রম করে হাজীগঞ্জ উপজেলার রাজারগাঁও পর্যন্ত গিয়েছে। এটি তিনটি উপজেলার হাজার হাজার মানুষের ব্যবহৃত ছয় কিলোমিটারব্যাপী একটি সড়ক। এ সড়কটিতে তিন উপজেলার অন্তর্ভুক্ত অংশে তিন ভাগে কাজ হয়। যার ফলে লক্ষ্য করা যায় সমন্বয়হীনতা। ফলস্বরূপ কোথাও পাকা কোথাও কাঁচা থাকার সমস্যা যুগ যুগ ধরে সমাধান হচ্ছে না। এ সড়কটি নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠে বহুবার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই সম্পাদকীয় নিবন্ধে বারবার লিখা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতায় সড়কটির দুর্ভোগ নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হচ্ছে না, তবে আশ্বাস পাওয়া যাচ্ছে বারবার।

মহামায়া-রাজারগাঁও সড়কের মতো ত্রিসীমানার আরেকটি সড়কেরও একই অবস্থা সম্পর্কে জানা গেছে চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত একটি সংবাদে। সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘এক সড়কের দুর্দশার শিকার তিন উপজেলাবাসী’। সংবাদটিতে প্রবীর চক্রবর্তী লিখেছেন, তিনটি উপজেলার জনসাধারণের চলাচলের অন্যতম সড়ক এটি। কিন্তু পাকা হওয়া অংশের সংস্কার এবং কাঁচা থাকা অংশ নতুন করে পাকা না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী হাজার হাজার মানুষ। শুষ্ক মৌসুমে চলাচল করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। হাইমচর, ফরিদগঞ্জ ও রায়পুর উপজেলাকে সংযোগকারী সড়কের একাংশ এটি। উপজেলা প্রকৌশলী সড়কটিতে দুর্ভোগের বিষয় স্বীকার করে দ্রুত পাকা অংশ মেরামত ও কাঁচা অংশ ব্যবহার উপযোগী করার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

জানা গেছে, হাইমচর উপজেলার হাওলাদার বাজার থেকে ফরিদগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণাঞ্চল চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের বিরামপুর বাজার হয়ে পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত সড়কটি। ইতিমধ্যেই সড়কটির হাওলাদার বাজার হয়ে বিরামপুর বাজার পর্যন্ত সড়কের অনেকাংশে পুনঃসংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু বিরামপুর বাজার থেকে রায়পুর উপজেলার বর্ডার পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার অংশের দুরবস্থা চরমে। এর মধ্যে দেড় কিলোমিটার এলজিইডি পাকা করলেও অপর এক কিলোমিটার এখনো কাঁচা অবস্থায় রয়েছে। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সুমন আহমেদ সড়কটি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জানান, আমরা যারা রাজনীতি করি এবং সমাজসেবা করি, তারা সড়কটি নিয়ে প্রতিনিয়ত কথা শুনি জনগণের। আশা করছি কর্তৃপক্ষ দ্রুতই একটি সুখবর দিবেন আমাদের। সড়কটি নিয়মিত ব্যবহারকারী চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের মোঃ মনু মিয়া শেখ, মোঃ বিল্লাল চৌকিদার, মোঃ সেলিম বেপারী জানান, ফরিদগঞ্জ উপজেলার মানুষ ছাড়াও রায়পুর ও হাইমচর দুই উপজেলায় যাওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এটি। সড়কের আড়াই কিলোমিটার তথা বিরামপুর বাজার থেকে রায়পুর বর্ডারের মধ্যে দেড় কিলোমিটার বিগত ২০১৬ সালে এলজিইডির মাধ্যমে কার্পেটিং করা হয়। কিন্তু কয়েক বছর না যেতেই চলছে রাস্তার বেহাল দশা। সংস্কারের অভাবে আরো খারাপ অবস্থা হয়ে এখন পায়ে চলাচলের অনুপযোগী। প্রতিদিন দুই/তিনটা দুর্ঘটনা ঘটে। কখনো অটো উল্টিয়ে ধান ক্ষেতে আবার মোটরসাইকেল নিয়ে ধান ক্ষেতে পড়ে আহত হচ্ছেন আরোহীরা। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পিরোজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহজাহান বলেন, আমার ইউনিয়নটি উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে। এই এলাকার লোকজনের জন্যে পার্শ্ববর্তী রায়পুর এবং হাইমচর উপজেলা নিকটবর্তী। তিনটি উপজেলার লোকজন সড়কটি নিয়মিত ব্যবহার করে। আমি ইতিমধ্যেই সড়কটি সংস্কার করে নূতন করে নির্মাণের জন্যে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় প্রকৌশল বিভাগকে অনুরোধ করেছি। উপজেলা প্রকৌশলী আবরার আহাম্মদ বলেন, সড়কটি বিষয়ে আমি জেনেছি। ইতিপূর্বে কার্পেটিং হওয়া অংশ দ্রুত পুনঃসংস্কার এবং কাঁচা অংশ কার্পেটিং করার ব্যাপারে অনুমোদনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

হাইমচর, ফরিদগঞ্জ ও রায়পুর উপজেলার সংযোগ রক্ষাকারী সড়কটি নিয়ে উপর্যুক্ত সংবাদে যে দুটি ছবি প্রতিবেদক সংযুক্ত করেছেন, সেটি দেখে পাঠকমাত্রই বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এই সড়ক যারা ব্যবহার করছেন, তারা দুর্ভোগের কী কষ্টকর মাত্রাই না ভোগ করছেন! সবচে' বড়ো কথা, তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কটিতে বাধ্য হয়ে চলাচল করছেন। এ সংবাদটি প্রকাশের পর দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নিয়ে যারা মাতামাতি করছেন, তারা কিছুটা হলেও বিব্রতবোধ করবেন। ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী সড়কটির দুর্দশা লাঘবের বিষয়ে যে কথা বলেছেন, তাতে খুব বেশি আশ্বস্ত হবার উপাদান খুঁজে পাওয়া যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন মহলে স্থানীয় এমপি, পদস্থ আমলা বা প্রভাবশালী অন্য কারো তদবির চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া না যাবে। মহামায়া-রাজারগাঁও রাস্তার দুর্ভোগ নিরসনে স্থানীয় এমপির নির্দেশ যেখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেয় না বছরের পর বছর, সেখানে হাইমচর-ফরিদগঞ্জ-রায়পুর সড়কটিতে বিদ্যমান দুর্ভোগ নিরসনে কেবল উপজেলা প্রকৌশলীর প্রয়াসের সফলতা নিয়ে সংশয় থাকাটা স্বাভাবিক। এটা নিয়ে নেতিবাচক কিছু আশঙ্কা করাটা দোষের কিছু নয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়