রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৩, ০০:০০

মাদ্রাসা অধ্যক্ষের জঘন্য কাণ্ড!
অনলাইন ডেস্ক

আমরা যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান (যেমন : প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ)-এর প্রতি বিশেষ আস্থা রাখি, তার প্রতি ভীষণ শ্রদ্ধা পোষণ করি। কারণ, আমাদের দেশে প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষরাই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাণ্ডারী বা পাঞ্জেরীর ভূমিকায় থাকেন এবং সহকর্মীদের সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে স্বীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনামণ্ডসুখ্যাতি বৃদ্ধি করেন। কিন্তু এঁরা যদি নৈতিকতা লালন না করেন, তাহলে নানা অপকর্মে দুর্ণাম, দুর্গতি ওই প্রতিষ্ঠানের জন্যে অবধারিত হয়ে যায়। আর ব্যক্তি প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষ বিতর্কিত ও অশ্রদ্ধার পাত্র হয়ে যান। এতে প্রতিষ্ঠান-এলাকার সাধারণ মানুষ বিব্রত বোধ শুধু নয়, সজাগ-সচেতন মানুষ অপমানবোধও করে। এক মাদ্রাসা অধ্যক্ষের অপকর্মের একটি ঘটনাই গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে পড়লো পাঠকরা, যার শিরোনাম হয়েছে ‘কড়ৈতলী মাদ্রাসার অধ্যক্ষের কাণ্ড! নিজেই পরীক্ষার হলে নকল সরবরাহ করেন ॥ পরীক্ষার্থী মেয়ের কাছে প্রতিদিন যান’। শিরোনাম পড়েই সচেতন পাঠকমাত্রই বিস্মিত হয়েছেন এবং সংবাদের গভীরে যেতে আগ্রহান্বিত হয়েছেন।

সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, অধ্যক্ষ নিজে পরীক্ষার্থীদের নকল সরবরাহ করেন। তার নিজের মেয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। মেয়ের কাছে প্রতিদিন যান, নিজে তাকে নকল দেন, পরীক্ষার খাতাও নিজে দেখে দেন। এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে যাচ্ছেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার কড়ৈতলী খাজা আহমদ আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ রফিকুল ইসলাম। চলতি দাখিল পরীক্ষায় তিনি এই অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছেন পরীক্ষার শুরু থেকে। ফরিদগঞ্জ উপজেলার চান্দ্রা ছামাদিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে কড়ৈতলী মাদ্রাসাসহ উপজেলার ১৭টি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। এই কেন্দ্রের ভেন্যু কেন্দ্র হচ্ছে চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চ বিদ্যালয়। নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষার দায়িত্বে নেই এমন কেউ কেন্দ্রে থাকতে পারবেন না। কিন্তু কড়ৈতলী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এই নিয়ম মানছেন না। তিনি প্রতিদিন পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেতরে থাকছেন, হলের ভেতরে যাচ্ছেন, নিজের মাদ্রাসার পরীক্ষার্থীদের নকল সরবরাহ করছেন। যেখানে তার মেয়েও পরীক্ষার্থী হিসেবে রয়েছে। আর এ কাজটি তিনি খুব সাবধানতার সাথে প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে করে থাকেন। তিনি যে পরীক্ষার কেন্দ্রে আছেন তা তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকারও করেছেন। কড়ৈতলী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ যে পরীক্ষার শুরু থেকেই এমন অনৈতিক কাজ করে আসছেন তা স্থানীয় অনেকের কাছ থেকে প্রথম থেকেই শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির এই লোককে প্রমাণ ছাড়া ধরা যাচ্ছিল না। সংবাদকর্মীরা অপেক্ষায় থাকেন প্রমাণের জন্যে। অবশেষে ভিডিও ফুটেজসহ প্রমাণ চলে আসে সংবাদ কর্মীদের হাতে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম কেন্দ্রে ঢুকে সিঁড়ি বেয়ে ঠিক যেই কক্ষে তার মেয়েসহ নিজের মাদ্রাসার পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে সেই কক্ষে চলে যাচ্ছেন। পাশে দাঁড়িয়ে পরীক্ষার্থীদের বলে দিচ্ছেন। তখন পুরো কক্ষে শোরগোল শোনা যায়। অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামের যে মেয়ে চান্দ্রা কেন্দ্রে এবার দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছে তার নাম হলো উম্মে হানি, পিতা রফিকুল ইসলাম, মাতা ফাতেমা বেগম, পরীক্ষার্থী কড়ৈতলী মাদ্রাসা, রোল ২৭৩৪০৩, রেজিঃ ২০১৮৬২৬৮০৩। অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম যে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রতিদিন যান তার প্রমাণ হলো তিনি পরীক্ষা চলাকালীন একদিনও নিজের মাদ্রাসায় উপস্থিত ছিলেন না। অথচ তিনি ছুটি ছাড়া কোনো কারণেই মাদ্রাসায় টানা অনুপস্থিত থাকতে পারেন না। অবশ্যই শিক্ষক হাজিরায় তার প্রমাণ মিলবে না। কারণ তিনি পরে মাদ্রাসায় গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে নেন। এদিকে কেন্দ্রে তার উপস্থিতির ভিডিও ফুটেজ চাঁদপুর কণ্ঠ প্রতিবেদকের কাছে আসার পর গত বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদক পরীক্ষা চলাকালীন অর্থাৎ সকাল ১১টায় তাকে ফোন দিয়ে জানতে চান, তিনি কোথায় আছেন? জবাবে তিনি বলেন, আমি পরীক্ষা কেন্দ্রে আছি। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি কি কেন্দ্রের কেনো দায়িত্বে আছেন? জবাবে তিনি বলেন, না কোনো দায়িত্বে নেই, এমনিই কেন্দ্রে থাকি। ‘দায়িত্বে না থাকলে কীভাবে আপনি কেন্দ্রে থাকেন’ এ কথা জিজ্ঞেস করার পরপর তিনি কল কেটে দেন। এরপর যতবার তাকে কল করা হয় তিনি রিসিভ করেন নি। এ বিষয়টি সেদিনই ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়। তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে সাথে সাথে তিনি পরীক্ষা কেন্দ্রে তাঁর লোক পাঠান অধ্যক্ষের খোঁজে। কিন্তু তাকে পাওয়া যায় নি। তিনি এই প্রতিবেদকের ফোন পাওয়ার পরই ওই এলাকা থেকে সটকে পড়েন। এমনকি ইউএনও তাকে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেন নি বলে ইউএনও জানান। তবে এ বিষয়টি ইউএনও কঠোরভাবে দেখবেন বলে জানান।

সংবাদটিতে উল্লেখিত মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রমাণসাপেক্ষ অভিযোগের আলোকে ফরিদগঞ্জের ইউএনও মহোদয় কঠোর ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। সাধারণ মানুষ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, মসজিদের ইমামদের কাছ থেকে অনেক বেশি নৈতিকতা প্রত্যাশা করে স্বীয় ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতির কারণে। তাদের কেউ যদি প্রকাশ্যভাবে নৈতিকতাবিবর্জিত আপত্তিকর কাজ করেন, তাহলে তাদের প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধা পোষণকারীরা অনেক বেশি আহত হন। বিবেকবিরুদ্ধ কাজের জন্যে তাদের প্রতি অনেক বেশি ঘৃণা পোষণ করেন। এর ফলে ভালো ইমাম, মাদ্রাসার স্বনামধন্য অধ্যক্ষগণ সাময়িকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হন, যেটা তাঁদের জন্যে হয়ে যায় অনেক বিব্রতকর। আমরা ফরিদগঞ্জের কড়ৈতলীর বিতর্কিত মাদ্রাসা-অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শুধু নয়, তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে অবৈধ প্রবেশে সহযোগিতা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপস বা ছাড়ে কাউকে রেহাই দেয়ার প্রয়াস গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করি না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়