সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০১ মে ২০২৩, ০০:০০

নিষ্ঠুরতার শিকার নারীর পাশে দাঁড়াতেই হবে
অনলাইন ডেস্ক

যান্ত্রিকতায় আচ্ছন্ন মানুষ। কেউ কারো পাশে দাঁড়াবার সময় যে নেই। তবুও চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারে চরম নিষ্ঠুরতার শিকার এক নারীর প্রতি প্রতিবেশীরা দরদ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন জানতে পেরে সংবেদনশীল ও বিবেকবান মানুষ মানসিক স্বস্তি অনুভব করছে। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, পুরাণবাজারে বসতঘর নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এসিড নিক্ষেপে শরীর ঝলসে মৃত্যুশয্যায় সীমা ঘোষ (৩৫) নামে এক গৃহবধূ হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। গত ২৪ এপ্রিল সোমবার সকালে পুরাণবাজার ঘোষপাড়া এলকায় এমন অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। আহত সীমা ঘোষ ওই এলাকার অধীর ঘোষের স্ত্রী।

আহত সীমা ঘোষ ও পাড়া-প্রতিবেশীরা জানায়, একই এলাকার প্রতিবেশী দিলীপ সূত্রদের সাথে অধীর ঘোষের বসতঘর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিলো। এ নিয়ে প্রায়ই তাদের উভয় পক্ষের অনেক ঝগড়া হতো। ঘটনার দিন সকালে অধীর ঘোষ বাইরে বেরিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দিলীপ সূত্রধর অধীর ঘোষের সাথে বিভিন্ন কথা উঠিয়ে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়েন। আর এই ঝগড়াকে কেন্দ্র করে অধীর ঘোষ তার বসতঘরে ফিরে আসেন। ধীরে ধীরে তাদের ঝগড়া বাড়তে থাকে। ঝগড়ায় লিপ্ত হন দিলীপ সূত্রধরের স্ত্রী স্মৃতি সূত্রধর, তার ছেলে লিমন সূত্রধরসহ পরিবারের অন্য লোকজন। এই ঝগড়ার ফাঁকেই দিলীপ সূত্রধরের স্ত্রী স্মৃতি সূত্রধর ও তার ছেলে লিমন সূত্রধর ফুটানো পানির সাথে এসিড মিশিয়ে সুযোগ বুঝে জানালা দিয়ে সীমা ঘোষের শরীরে নিক্ষেপ করেন। এতে ধীরে ধীরে তার বুক ও স্পর্শকাতর স্থানসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোসকা পড়তে থাকে। যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন সীমা ঘোষ। প্রতিপক্ষের এমন অমানবিক কর্মকাণ্ডের শিকার হয়ে সীমা ঘোষকে যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখে প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্যে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু তার বুকের স্পর্শকাতর স্থানসহ শরীরের অনেক জায়গা পুড়ে যাওয়ায় কর্মরত চিকিৎসকরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিয়ে তার উন্নত চিকিৎসার জন্যে তাৎক্ষণিক ঢাকা প্রেরণ করেন। তবে সীমা ঘোষের পরিবার অসহায় হওয়ায় আর্থিক সঙ্কটে ওইদিন তাকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি বলে ৪ দিন ধরে পুরাণবাজার ঘোষপাড়ায় তার নিজের বসতঘরে শুয়ে যন্ত্রণায় কাটিয়েছেন। পরে তাদের এমন অসহায়ত্বের কথা চিন্তা করে পাড়া-প্রতিবেশীরা বিভিন্নজনের কাছ থেকে চাঁদা উঠিয়ে সর্বশেষ গত ২৯ এপ্রিল তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যান। এ বিষয়ে অভিযুক্ত দিলীপ সূত্রধরের পরিবারের সাথে কথা বলতে চাইলে তাদেরকে বাসায় পাওয়া যায়নি। বাসায় গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা তাদের বাসা-বাড়িতে তালা লাগিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে।

এদিকে এমন অমানবিক ঘটনাকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দিতে প্রভাবশালী দিলীপ সূত্রধরের পক্ষ হয়ে একটি চক্র থানায় দৌড়ঝাপ দিতে দেখা যায়। এ বিষয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মালেক শেখের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমিও এমন ঘটনা শুনেছি। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমিও চাই আইনি প্রক্রিয়ায় সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক। এ বিষয়ে চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অফিসার ইনচার্জ) মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান, এমন ঘটনার বিষয় আমরা অবগত হয়েছি। আইনি প্রক্রিয়া চলছে। ক্ষতিগ্রস্তরা মামলা দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

অসহায় গৃহবধূ সীমা ঘোষের ওপর বসতঘরের দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রতিপক্ষ যে নিষ্ঠুর হামলা চালিয়ে তাকে ঝলসে দিয়েছে, আমরা তাতে সংক্ষুব্ধ চিত্তে চরম ঘৃণা প্রকাশ করছি এবং পশুরূপী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনগত শাস্তি প্রত্যাশা করি। নিশ্চয় পুলিশ এ ব্যাপারে কঠোর ও আন্তরিক থাকবে। এই নির্মম ঘটনায় সীমা ঘোষের প্রতিবেশীরা মমত্ববোধ দেখিয়ে তার চিকিৎসার যে ব্যবস্থা করেছে, তাতে সৎপ্রতিবেশীসুলভ মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু সরকারি সহায়তা কিংবা প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা ছাড়া শেষ পর্যন্ত সীমা ঘোষ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। সেজন্যে সীমা ঘোষের পাশে কারো না কারো থাকতেই হবে বলে আমরা মনে করি। এ ক্ষেত্রে প্রতিবেশীদের সোচ্চার ভূমিকা অব্যাহত রাখার বিষয়টি যে অনিবার্য সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়