প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

প্রতি বছর ঈদ আসলে ঈদের ছুটি চলাকালে দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় চাঁদপুর জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া গেলেও এবার সেটি পাওয়া যায়নি। তবে ঈদের পূর্বাপর চারটি করুণ মৃত্যু এবারের ঈদ আনন্দকে অনেকটাই মাটি করেছে। ঈদ-আনন্দ উদযাপনকালে এই মৃত্যুগুলোর ঘটনা মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে।
ঈদের দিন চাঁদপুর শহরের বাসিন্দারা যে মৃত্যুর ঘটনায় আফসোস করেছে, সেটি হচ্ছে চাঁদপুর শহরের ষোলঘর এলাকায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দক্ষিণে সরকার বাড়ির সন্নিকটে ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা আম্বিয়া খাতুনের মৃত্যুর ঘটনা। তিনি তার পুত্রদের দেয়া নিজ ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া দম্পতি কর্তৃক ঈদের পূর্বদিন ২১ এপ্রিল শুক্রবার দুপুরে বালিশ চাপায় খুন হয়েছেন। ময়না তদন্তশেষে ঈদের দিন শনিবার বিকেলে তার নামাজে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। পুলিশ খুনিদের আটক করতে সক্ষম হয়েছে, যারা স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেছে, বৃদ্ধার গলায় পরিহিত এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ও কানে পরিহিত ছয় আনা ওজনের কানের দুলের লোভে তারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। নিঃসন্দেহে ঘটনাটি মর্মান্তিক।
ঈদের পূর্বদিন রাতে হাজীগঞ্জ বাজারে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হয়েছে হাফেজ আব্দুল্লাহ আল কাউসার (১৭)। তার মৃতদেহ ঈদের পরদিন রোববার রাতে মাস্টার পাড়ায় প্রবাসী আজিজুর রহমানের নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের লিফটের গর্ত থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। কাউসার চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারস্থ মোস্তফা কামালের ছেলে হলেও ভাড়া বাসায় পিতামাতার সাথে বসবাস করতো হাজীগঞ্জের ওই মাস্টার পাড়াতেই। সে কোরআনে হাফেজ। রমজানে ফরিদগঞ্জের একটি মসজিদে তারাবির নামাজ পড়িয়ে প্রাপ্ত হাদিয়া নিয়ে সে শুক্রবার হাজীগঞ্জের বাসায় ফিরে এবং মায়ের হাতে হাদিয়াটুকু তুলে দিয়ে রাতে বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়। তার মৃত্যুর ঘটনায় তিনজন আটক হয়েছে এবং পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থা মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনে কাজ করছে।
ঈদের ছুটিতে আত্মীয়ের বাড়িতে ঢাকা থেকে বেড়াতে এসে নদীতে গোসল করতে গিয়ে মারা গেছে এক শিশু ও এক কিশোর। প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে মতলব পৌর এলাকার চরমুকুন্দি এলাকার ধনাগোদা নদীতে। ঢাকার শনির আখড়ায় মা-বাবার সাথে বসবাসকারী রাকিব (৭) মতলবে ফুফার বাড়িতে বেড়াতে এসে ২৪ এপ্রিল সোমবার দুপুরে অন্যদের সাথে নিকটবর্তী ধনাগোদা নদীতে গোসল করতে যায় এবং সাঁতার না জানার কারণে সবার অলক্ষ্যে নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। খবর পেয়ে আড়াই ঘণ্টা পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি রাকিবের লাশ ঘটনাস্থল থেকেই উদ্ধার করে। রাকিব ছিলো মা-বাবার একমাত্র সন্তান এবং ঢাকার একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র।
২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার ঢাকার আরেকটি হাফেজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র আদিবুর রহমান (১৬) চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের বহরিয়া বাজার এলাকায় মেঘনা নদীতে সমবয়সীদের সাথে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ওইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে আদিবুরের লাশ উদ্ধার করতে পারেনি। রোববার আদিবুর ঢাকা থেকে তার ভাইয়ের শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে আসে এবং একদিন পর অন্য আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে সখের বশত নদীতে গোসল করতে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার শিকার হয়।
ঈদের পূর্বাপর সংঘটিত চারটি মৃত্যুর ঘটনায় চাঁদপুর কণ্ঠে চারটি পৃথক সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সকল সংবাদ পাঠ করে প্রায় প্রতিটি পাঠকই মর্মাহত। আমরাও তা-ই। এ চারটি মৃত্যু অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই হয়েছে-এ কথা স্রষ্টায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষই মনে করেন। তবে তিন শিশু-কিশোরের মৃত্যুর পেছনে ব্যক্তিগত অসচেতনতাসহ অভিভাবকদের উদাসীনতা এবং বৃদ্ধার মৃত্যুর পেছনে ভাড়াটিয়া নির্বাচনে উদাসীনতা যে কাজ করেছে সেটা বাহ্যিক দৃষ্টিতে বলা যায়। আসলে সতর্কতা ও সচেতনতা যে অনেক দুর্ঘটনা রোধ করতে পারে সেটা ঈদের পূর্বাপর চাঁদপুরে সংঘটিত চারটি মৃত্যুর ঘটনা বিশ্লেষণ করলে ধারণা করতে কারো অসুবিধা হবার কথা নয়।