সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

কী দোষে হাসপাতাল কর্মীদের এই গণপিটুনি!
অনলাইন ডেস্ক

‘বিদ্যুৎপৃষ্টে নিহতদের লাশ নিতে বাধা দেয়ায় হাসপাতালে কিশোর গ্যাংয়ের হামলা’। এটি গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম। এ শিরোনামেই বোঝা যায়, কী কারণে হাসপাতালে হামলা হলো এবং হাসপাতাল কর্মীরা মার খেলো। এ সংবাদের সাথে যে ছবি দেখা গেলো, তাতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, হাসপাতাল কর্মীদের গণপিটুনি দেয়া হচ্ছে। কথা হলো, তারা কি গণপিটুনি খাওয়ার মতো দোষ করেছে?

সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহতের লাশ নিতে বাধা দেয়ায় আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে তাণ্ডব চালিয়েছে কিশোর গ্যাং। তাদের দলগত হামলায় হাসপাতালের ৫ স্টাফকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২৯ মার্চ বুধবার বেলা ১২টায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বুধবার বেলা ১১টায় চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের পূর্ব রামদাসদী এলাকায় তানিম ও মিনহাজ নামের দুই কিশোর বৃষ্টির সময় বিলে ফুটবল খেলার সময় ছিঁড়ে পড়ে থাকা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহত হয়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। নিহতরা পুরাণবাজার দোকানঘর পূর্ব রামদাসদী এলাকার বাসিন্দা এবং একজন নূরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নিহতদের মরদেহ হাসপাতাল হেফাজতে রেখে নিয়মানুযায়ী পুলিশকে অবহিত করা হয়। পুলিশ আসার আগেই নিহতের স্বজন ও সহপাঠীরা মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিয়ে যেতে চাইলে হাসপাতালের স্টাফরা বারণ করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা পুলিশের নির্দেশ ছাড়া মরদেহ দিতে না দিলে সেখানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে একদল কিশোর জরুরি বিভাগে প্রবেশ করে স্টাফদের ওপর হামলা করে। তাদের অতর্কিত হামলায় দায়িত্বে থাকা ৫ স্টাফ আহত হন। আহতদের মধ্যে সিহাব নামে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা যায়।

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডাঃ সুশান্ত বিশ্বাস বলেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যাওয়াদের ক্ষেত্রে কিছু আইনি বিষয় থাকে। যে কারণে লাশ হাসপাতালের জিম্মায় রাখা হয়েছিলো। কিন্তু নিহতের স্বজনসহ এলাকার কিছু কিশোর হাসপাতাল থেকে লাশ ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করে। এ সময় কিশোররা হাসপাতালের পাঁচ স্টাফকে পিটিয়ে আহত করে। চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রশিদ বলেন, হাসপাতালের ইমারজেন্সি কক্ষের ৫ স্টাফকে আহত করার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যেই কিশোর গ্যাংয়ে থাকা আরিফুল্লাহ নামের একজনকে আটক করেছি। পরিস্থিতি এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে আইননানুগ ব্যবস্থা নেবো।

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে অনেক আগে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর বিষয়ে হামলা ও উত্তেজনার কিছু ঘটনা ঘটেছে। বিবদমান দু গ্রুপের সংঘর্ষের পর হাসপাতালে ভর্তিকৃত আহত ব্যক্তির ওপর হামলার চেষ্টা বহুবার হয়েছে। কিন্তু অপমৃত্যুর শিকার কারো লাশ ছিনিয়ে নিতে হাসপাতাল কর্মীদের ওপর সংঘবদ্ধ হামলার ঘটনা গত বুধবার ছাড়া আর কখনও ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই।

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালদের দৌরাত্ম্য সহ নানা অপকর্ম রোধে দীর্ঘদিন ধরে এখানে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন কিংবা আনসার নিয়োগের দাবি বিভিন্ন মহল থেকে উত্থাপিত হয়ে আসছে। খোদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এই দাবি জানিয়ে আসছে বারবার। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টিতে মোটেও গুরুত্বারোপ করছে না। এবার গণপিটুনির ন্যায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় হাসপাতালের পাঁচজন কর্মী আহত হয়েছে, তাতে কতোটুকু টনক নড়ে সেটা দেখার বিষয়। যদি এতে মোটেও টনক না নড়ে, তাহলে হাসপাতালে আবারও কারো হামলায় হয়তো কোনো হাসপাতাল কর্মী বা চিকিৎসকের অপমৃত্যুর জন্যেই অপেক্ষা করতে হবে। কথা হলো, এমন অপেক্ষা তো হয়ে যেতে পারে নির্মম কিংবা অসঙ্গত। চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল শুধু নয়, দেশের যে সকল সরকারি হাসপাতালে এখনও নিরাপত্তা কর্মী/পুলিশ বা আনসার নিয়োগ দেয়া হয়নি, সেসব হাসপাতালে এমন নিয়োগের বিষয়ে সময় থাকতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষভাবে ভেবে দেখা উচিত তথা অনেক গুরুত্ব দেয়া উচিত। বিলম্বের কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে একসময় অনেক বেশি পস্তাতে হবে বলে আমরা মনে করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়