প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
পোনা নিধন বন্ধে বহুমুখী ব্যবস্থা চাই
চাঁদপুর শহরসহ নদী তীরবর্তী লোকজন চলতি শীত মৌসুমে বিভিন্ন স্থান থেকে ‘সাগরের পোনা’ কিনে খুবই মজা করে খায়। কিন্তু এই পোনা আদৌ সাগর থেকে সংগৃহীত নয়, পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া ও ধনাগোদা নদী থেকে অবৈধভাবে সংগৃহীত বিভিন্ন মাছের পোনা। এই পোনা সংগ্রহ তথা নিধনের মাধ্যমে যে হাজার হাজার কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে, সেটি নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠে মঙ্গলবার শীর্ষ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
|আরো খবর
সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে চলছে মাছের পোনা নিধনের মহোৎসব। দিনের বেলা প্রকাশ্যে ও রাতের আঁধারে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে এসব ধরছেন এক শ্রেণির অসাধু জেলে। শহরের রাস্তায় তা বিক্রি করছেন ভ্রাম্যমাণ মাছ বিক্রেতারা। এদিকে ভোক্তারাও তা কিনছেন অবাধে। মৎস্য গবেষকরা বলছেন, এখনই লাগাম টানতে না পারলে ভবিষ্যতে মাছশূন্য হবে নদীগুলো।
ভ্যানগাড়িতে বড় বড় পাত্রে সাজানো থাকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা। দাম কম থাকায় কিনে থাকেন ক্রেতারাও। চাঁদপুর শহরের প্রতিটি অলিগলিতেই চোখে পড়ছে এমন দৃশ্য। ক্রেতাদের ডেকে ডেকে বিক্রি করা হচ্ছে প্রতিদিনই। সাধারণত নদীতে থাকা অধিকাংশ মাছই শীত মৌসুমের আগে ডিম ছাড়ে। তাই এই সময়টাতে ইলিশসহ বিভিন্ন মাছের পোনায় ভরপুর থাকে নদণ্ডনদী। সুযোগ বুঝে কিছু অসাধু জেলে নানা ধরনের নিষিদ্ধ জাল নিয়ে নেমে পড়েন নদীতে। শিকার করেন মাছের পোনা। বাদ যায় না কাঁকড়াসহ উপকারী বিভিন্ন জলজ প্রাণীও। নির্বিচারে পোনা নিধন করায় বিপদে পড়েন সাধারণ জেলেরা। মাছের পোনা রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের দাবি তাদের। এ বিষয়ে সাধারণ জেলেরা জানান, মাছের পোনাগুলো ধরে এরা আমাদের ক্ষতি করছে। এগুলো বড় হলে বড় বড় মাছে পরিণত হতো। তখন বিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়া যেতো। এদের কারণে আমরা এখন মাছ পাই না। সামনে আরও পাব না।
চাঁদপুরের নদীতে কমছে মাছের উৎপাদন। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে নদীগুলো মাছশূন্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন মৎস্যজীবী নেতারা। এ বিষয়ে জেলা মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ শবেবরাত বলেন, এই যে ছোট ছোট পাঙ্গাশ মাছের পোনা ধরে, তার ১ কেজি পোনায় ১০ হাজার কেজি বড় পাঙ্গাশ হয়। এরপর ছোট ছোট চিংড়ির পোনা ধরে। এগুলো দেশের জন্য অনেক বড় ক্ষতি। হাজার হাজার কোটি টাকার মাছ নষ্ট হচ্ছে। পদ্মা- মেঘনা নদী দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মৎস্যভাণ্ডার। পোনা নিধন অব্যাহত থাকলে বিলুপ্ত হতে পারে বিভিন্ন প্রজাতির মাছে। এ বিষয়ে ইলিশ গবেষক মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, যারা মাছের পোনা নিধন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে এখনও ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব। সরকারের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
পোনা নিধনকারী জেলেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সমন্বিত অভিযান চালানো হবে বলে জানালেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। তিনি বলেন, আমরা পোনা নিধনকারী জেলেদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। এই অভিযান ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। পাশাপাশি আমরা জনসাধারণকেও বিষয়টি নিয়ে সচেতন করার চেষ্টা করছি। যেসব জেলে ধরা পড়ছেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পোনা শিকারের এই অপতৎপরতা চলে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত।
সংবাদটি পাঠে সচেতন পাঠকমাত্রই স্তম্ভিত না হয়ে পারেন না। জেলা প্রশাসক জেলেদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়ে ব্যবস্থাগ্রহণের কথা বলেছেন। আমরা বলতে চাই, বিশাল নদীতে অর্থাৎ জলভাগে অভিযানের ব্যাপকতা বাস্তবে সবসময় সম্ভব হয় না। তবে স্থলভাগে অনেক কিছুই করা সম্ভব। যেমন--যারা পোনা বিক্রি করে তাদেরকে এ কাজ থেকে বিরত থাকতে এবং ক্রেতা বা ভোক্তাকে সেটি না কিনতে অনুরোধ জানাতে নানামুখী প্রচারের ব্যবস্থাগ্রহণ। এই অনুরোধে কাজ না হলে পোনা বিক্রেতাণ্ডক্রেতা উভয়ের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কার্যকর উদ্যোগগ্রহণ। সাথে সাথে পোনা নিধনের ব্যাপক ক্ষতি সম্পর্কে জানান দিতে আনুষ্ঠানিক/ অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালানো দরকার। জেলা / উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হতে পারে। একই সাথে মৎস্য বিভাগকে অতি প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে শক্তিশালী করার বিষয়টি সরকারের মাথায় আনা দরকার। বহু কাজের কাজী স্থানীয় প্রশাসনকে পোনা, জাটকা রক্ষায় বেশি কাজে লাগাতে গেলে যে কী হয় সেটা আর খোলসা করে বলতে চাই না।