প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
এটি যেনো পরকীয়ার ব্যতিক্রম নৃশংস রূপ

শুক্রবার চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘কচুয়ায় পরকীয়ায় নিঃশেষ প্রবাসী আঃ রহিম’ শীর্ষক সংবাদটি পড়ে পাঠকমাত্রই পরকীয়ার স্বাভাবিক রূপের পাশাপাশি অস্বাভাবিক ও নৃশংস রূপ যে কতোটা ভয়ঙ্কর সেটা আঁচ করতে পেরেছে।
সংবাদটিতে প্রতিবেদক লিখেছেন, কচুয়া উপজেলার কড়ইয়া ইউনিয়নের আকানিয়া গ্রামের বাগান বাড়ির প্রবাসী আব্দুর রহিমের স্ত্রী দুসন্তানের জননী সীমা আক্তার ও একই বাড়ির চাচা সম্পর্কিত এক সন্তানের জনক রুবেলের পরকীয়ায় নিঃশেষ হয়ে পড়েছে প্রবাসী আব্দুর রহিম। সম্প্রতি এর সূত্র ধরে আব্দুর রহিমের বসতঘর অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হলে এ ঘটনা রুবেলই ঘটাতে পারে বলে প্রবাসী রহিমের স্ত্রী সীমা দাবি করেন। এ ব্যাপারে সীমাকে প্রধান সাক্ষী করে আঃ রহিমের বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে বিজ্ঞ আমলী আদালত, কচুয়া, চাঁদপুরে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৫৬০/২০২২। মামলা দায়েরের পরও রুবেল ও সীমা একাধিকবার অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত থাকে। একাধিকবার এই মেলামেশার পর মঙ্গলবার ২৪ জানুয়ারি রাতে একই গ্রামের পাশাপাশি সীমার পিত্রালয়ে তাদের দুজনকে অসামজিক কাজে লিপ্ত থাকাবস্থায় আটক করে স্থানীয় লোকজন। সরজমিনে গিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ও স্থানীয় লোকজনদের মধ্যে বিষয়টি নিশ্চিত করে জনৈক শাহজাহান জানান, আমি খবর পেয়ে সীমার বসত কক্ষের কাঁড় (সিলিং) থেকে রুবেলকে বের করে আনি এবং ঘটনাটি মীমাংসার জন্যে তার পরিবারের লোকজনের জিম্মায় রুবেলকে দিয়ে আসি। এ সময় বাড়ির একাধিক লোক দৃশ্যগুলো মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে রাখে, যে রেকর্ডটি চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিবেদক উদ্ধার করেন।
মামলার এজাহারে প্রকাশ, প্রায় সময় রুবেল সীমাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। রুবেলের এ কুপ্রস্তাবে সীমা রাজি হচ্ছিল না। এমতাবস্থায় গত ২৮/১০/২০২২ তারিখে সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৭টার দিকে সীমা তার পিত্রালয়ে অবস্থানকালীন রুবেল সীমার ফোনে কল দিয়ে বলে তখনই বাড়িতে চলে আসার জন্য। সে বলে, যদি না আসো তাহলে ঘর পুড়িয়ে দেবো। এ হুমকির ৩ ঘন্টা পরই রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রবাসী আব্দুর রহিমের বসত ঘর অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। মামলাটি তদন্তের জন্যে বিজ্ঞ আদালত চাঁদপুর সিআইডি দপ্তরে প্রেরণ করে। সীমা জানান, রুবেল আমাকে প্রায় সময় কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। আমি তার এ কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সে-ই অগ্নিকাণ্ড ঘটাতে পারে। গেল মঙ্গলবারের কথা জিজ্ঞাসা করলে সীমা জানান, আমার বাড়িতে রুবেল জোর করে ঢুকে পড়লে আমার পরিবারের লোকজন তাকে তাড়িয়ে দেয়। রুবেল জানান, তাদের সাথে আমাদের পূর্বের শত্রুতা রয়েছে। সম্পর্কে সে আমার চাচী এবং মায়ের মতো, তার সাথে আমার কোনো পরকীয়ার সম্পর্ক নেই, আর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও আমি জানি না। তারা আমাকে বিভিন্নভাবে ফাঁসানোর চেষ্টায় হয়রানি করে আসছে। সিআইডিতে মামলার তদন্ত অফিসার মোঃ জালাল বাবুল জানান, তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং শেষ হলে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। ঘটনাটি নিয়ে আকানিয়া গ্রামে আলোচনা ও সমলোচনার ঝড় বইছে।
আমাদের দেশ থেকে যারা বিভিন্ন দেশে গিয়ে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে আমাদের দেশে তাদের অর্জিত অর্থ পাঠান, তাদেরকে বলা হয় রেমিটেন্স যোদ্ধা। প্রকৃতপক্ষে এরা পারিবারিক যোদ্ধাও। কেননা এদের প্রায় সকলেই স্ত্রী-সন্তানকে দেশে রেখে যান। খুবই কমসংখ্যক সপরিবারে অর্থাৎ স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বিদেশে অবস্থানের সুযোগ পান কিংবা সামর্থ্য রাখেন। বাকি যারা, তাদের অধিকাংশই দেশে অর্থ পাঠিয়ে স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মার মুখে হাসি ফোটানোর আন্তরিক প্রয়াস চালিয়েও তৃপ্তি খুঁজে পান না। কারণ বহুবিধ। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে স্ত্রীর বিপথগামিতা। কোনো কোনো স্ত্রী জৈবিক চাহিদা মিটানোর প্রয়োজনে স্বামীর অনুপস্থিতিতে পরপুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রকাশ্যে-গোপনে নানা বিশ্রী ঘটনার জন্ম দেয়। কোনো কোনোটি গণমাধ্যমে আসে, আর অধিকাংশই ধামাচাপা থাকে কিংবা ধামাচাপা দেয়ার প্রয়াস চালানো হয়। এই পরকীয়ার কারণে কোনো কোনো নারী সন্তানদের রেখেই স্বামীর দেয়া বহনযোগ্য সম্পদ (মূল্যবান অলঙ্কার, নগদ অর্থ ইত্যাদি) নিয়ে উধাও হয়ে যায়। কেউ কেউ প্রবাসফেরৎ স্বামী/ সন্তানকে খুন করে পালিয়ে যায়। কোনো কোনো স্ত্রী নানা অজুহাতে, ছলছুতোয় স্বামীকে তালাক দিয়ে পরকীয়ায় লিপ্ত পুরুষের সাথে ঘর বাঁধে। আবার কেউ কেউ প্রবাসী স্বামীর বিরুদ্ধে কিংবা শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর-ননদ সহ আরো অনেককে আসামী করে মিথ্যা মামলা ঠুকে হয়রানির পথ বেছে নেয় এবং পরকীয়ায় জড়িত পুরুষকে পুরোপুরি পেতে কৌশলী পথ বেছে নেয়। প্রাগুক্ত সব ক'টি এখন সমাজের সাধারণ চিত্রে পরিণত হয়েছে। কিন্তু পরকীয়ার কারণে কচুয়ায় ঘর পুড়িয়ে দেয়ার যে ঘটনা ঘটেছে, সেটি যে ব্যতিক্রম নৃশংস রূপ সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। জানি না পরকীয়ার এমন ব্যতিক্রম আরো কতো রূপ দেখতে হবে অনাগত দিনগুলোতে।