সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

অবৈধ দখল বন্ধে রেল কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা আসলে কোন্ জায়গায়?
অনলাইন ডেস্ক

এক সময় নদী মাতৃক বাংলাদেশে বিস্তীর্ণ নৌপথই ছিলো যোগাযোগের প্রধান অবলম্বন। ব্রিটিশ সরকার নৌপথের পাশাপাশি রেলপথকে বিকল্প হিসেবে গড়ে তোলে ১৮৬২ সাল থেকে। শত শত বছরের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় ব্রিটিশ সরকার রেলপথ প্রসারে পর্যাপ্ত ভূমি অধিগ্রহণ করে, যতোটা ভূমি আসলে প্রয়োজন ছিলো না। ব্রিটিশের বিদায়ের পর পাকিস্তান আমলে রেলওয়ের সমৃদ্ধি প্রায় অটুট থাকলেও ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর তৎকালীন সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের স্বৈরনীতির কারণে পূর্ব পাকিস্তান-ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে বিভিন্ন রূটে চলমান আন্তঃদেশীয় ট্রেনগুলোর অধিকাংশই বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকেই কিছু রেলপথ, স্টেশন ও বিপুল পরিমাণ জায়গা পরিত্যক্ত হয়ে যায় এবং অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী অতিরিক্ত হয়ে যায়।

স্বাধীনতোত্তর বাংলাদেশে আশির দশক ও নব্বইর দশকে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে ‘রুগ্ন’ রেলওয়েকে বাঁচাতে সারাদেশের বিভিন্ন রূটে কিছু ট্রেন কমানো হয় এবং ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’ (সোনালী করমর্দন) কর্মসূচিতে অনেক অভিজ্ঞ, দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অস্বাভাবিক অবসর প্রদান করা হয়। এতে রেলওয়েতে ক্রমশ সৃষ্টি হয় লোকবল সঙ্কট। সাথে সাথে চলতে থাকে নূতন লোকবল নিয়োগে শ্লথ গতি ও জটিলতা।

১৯৬৫ সাল পর্যন্ত চাঁদপুরে রেলওয়েতে কর্মরত ছিলো সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। কিন্তু ওই সালে যুদ্ধের কারণে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে যাতায়াতের জন্যে মেইল ট্রেনগুলো বন্ধ হয়ে গেলে চাঁদপুর (বড়) স্টেশনসহ চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের বিভিন্ন স্টেশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা হ্রাস পেতে পেতে প্রায় দুশ’তে গিয়ে পৌঁছে। এর ফলে আবাসিক কোয়ার্টারগুলোর মধ্যে অপ্রয়োজনীয়গুলো পরিত্যক্ত হতে থাকে। সাথে সাথে পরিত্যক্ত হয় বিপুল পরিমাণ জায়গাও। কিন্তু এসব কোয়ার্টার ও জায়গা রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে লোকবল না থাকায় ক্রমশ বেদখল হতে থাকে এবং সেটি অদ্যাবধি চলছে। সেজন্যে চাঁদপুর কণ্ঠে ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে ‘চাঁদপুর-লাকসাম ৫৪ কিলোমিটার রেলপথে অবৈধ দখল অব্যাহত’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এ সংবাদে অবৈধ দখল উচ্ছেদে রেল কর্তৃপক্ষের বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত উচ্ছেদ অভিযান যে ফলপ্রসূ হচ্ছে না সেটি উল্লেখ করা হয়েছে। উচ্ছেদের পর রেলওয়ের উদ্ধারকৃত জায়গা রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে রেলওয়ের কোনো লোকবল না থাকায় কিংবা কর্মরত লোকবলের কারো কারো নিষ্ক্রিয়তায় সে জায়গা পুনর্দখল হচ্ছে। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ বিপুল পরিমাণ পরিত্যক্ত, দখলকৃত ও অপ্রয়োজনীয় জায়গা সরকারের অন্য কোনো সংস্থাকে অনিবার্য প্রয়োজনে দিতেও গড়িমসি ভাব, আন্তরিকতার অভাব দেখাচ্ছে এবং জটিলতা তৈরিতে প্রচণ্ড রকমের পারঙ্গমতা দেখাচ্ছে। ফলে রেলওয়ের অবৈধ দখলকৃত অনেক জায়গা দখলদার কর্তৃক নিরাপদে বিক্রির ঘটনাও অহরহ ঘটে চলছে। এর বিরুদ্ধে রেল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাগ্রহণের ন্যূনতম নজির নেই, তবে মাঝে মধ্যে আইওয়াশরূপী অকার্যকর উচ্ছেদ অভিযানের নজির আছে। সেজন্যে অবৈধ দখল বন্ধে রেল কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা নির্ণয় সহ অপ্রয়োজনীয় পরিত্যক্ত ও অবৈধ প্রক্রিয়ায় বিক্রিত জায়গার বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ মহল, এমনকি প্রধানমন্ত্রীকে ভাবতে হবে এবং এ ভাবনার অনুকূলে জাতীয় সংসদে বিদ্যমান আইন সংশোধন কিংবা নূতন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণের আবশ্যকতা উপলব্ধি করতে হবে বলে আমরা মনে করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়