প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
আমাদের দেশে রাজকীয় কিছু চাকুরির অন্যতম হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনীর চাকুরি। এই বাহিনীতে যারা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান, তাদেরকে সৌভাগ্যবান বলে বিবেচনা করা হয়। সেজন্যে একজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা তাঁর বন্ধুর ভাগ্নির সেনাবাহিনীতে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তির খবরে উচ্ছ্বসিত হয়ে অকপটে বলেন, আরে তার বাবাকে বলো যেনো গরু কেটে পাড়া-পড়শি সহ আত্মীয়স্বজনকে খাওয়ায় এবং আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে। কেননা এই কর্মকর্তাই স্বীয় কর্মদক্ষতায় পদোন্নতি পেতে পেতে হতে পারে মেজর, লেফটেন্যান্ট কর্নেল, কর্নেল, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, মেজর জেনারেল, লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও জেনারেল। এই পদোন্নতি প্রাপ্তির বিভিন্ন পর্যায়ে তারা দেশে-বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ/সম্মানজনক পদে দায়িত্বপালনের সুযোগ পান। সর্বশেষ সেনাপ্রধান হবার বিরল সুযোগও পেয়ে যান।
এমন বিরল সুযোগের অধিকারী হয়েছেন চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার কৃতী সন্তান ড. আজিজ আহমেদ। তিনি বাংলাদেশের সদ্য সাবেক সেনাপ্রধান। তাঁর পূর্বে একই উপজেলার কৃতী সন্তান এয়ার ভাইস মার্শাল রফিকুল ইসলাম বিমান বাহিনীর প্রধান হয়েছিলেন, যিনি অবসরগ্রহণ করে বৃহত্তর মতলব উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর আশির দশকে মতলব উত্তর উপজেলার আরেক কৃতী সন্তান মেজর জেনারেল শামসুল হক মন্ত্রী হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। শেষোক্ত দুজনের চেয়েও সেনাবাহিনীর চাকুরি জীবনে ড. আজিজ আহমেদের ক্যারিয়ার অনেক বর্ণাঢ্য। তারপরেও তাঁর অনেক অতৃপ্তি! যে অতৃপ্তির কথা জানা গেছে গত শুক্রবারে চাঁদপুরে প্রদত্ত তাঁর এক বক্তব্যে।
জেনারেল (অবঃ) ড. আজিজ আহমেদ গত ২৩ ডিসেম্বর শুক্রবার চাঁদপুর শহরের আউটার স্টেডিয়ামে ৩১ বছরের ধারাবাহিকতা নিয়ে সগৌরবে চলমান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। তিনি ওইদিন সন্ধ্যায় বিজয় মেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলঙ্কৃত করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন তাঁর শৈশবের স্মৃতিচারণ করেন এবং বলেন, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাগণ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, তাঁদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে এবং থাকবে নিরন্তর। তিনি অত্যন্ত আক্ষেপ করে বলেন, আমি পড়ালেখা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করার পর বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) প্রধান ছিলাম, পরবর্তীতে সর্বশেষ হলাম সেনাবাহিনীর প্রধান। জীবনে অনেক কিছু পেয়েছি, তারপরও পুরো জীবনে একটি অতৃপ্তি রয়ে গেলো। সেটি হলো আমি মুক্তিযোদ্ধা হতে পারিনি। আমার এই অতৃপ্তি আমৃত্যু থেকে যাবে।
সদ্য সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অবঃ) ড. আজিজ আহমেদের এমন অতৃপ্তি কোনো ক্ষোভ বা অসন্তুষ্টির বহিঃপ্রকাশ নয়, নিতান্তই আক্ষেপের, কেননা মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁকে বয়সজনিত কারণে কিংবা আনুকূল্য না পাওয়ার কারণে মুক্তিযোদ্ধা হবার সুযোগ দেননি। যথার্থ আনুকূল্য পেলে তিনি শিশু হয়েও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারতেন। দুর্ভাগ্যক্রমে সেটি তিনি হতে পারেন নি। আর এই অনিচ্ছাকৃত ও দুর্ভাগ্যজনক অক্ষমতাকে তিনি যেভাবে তুলে ধরেছেন, তাতে বস্তুত মুক্তিযোদ্ধারা যে পরম সৌভাগ্যবান ও অশেষ শ্রদ্ধেয় সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। সে কারণে আমরা ড. আজিজ আহমেদকে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় আমন্ত্রণ জানানোর জন্যে এই মেলার চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. এ. ওয়াদুদসহ স্মৃতিচারণ উপ-পরিষদের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।