প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

এক সময় আমাদের দেশে কোনো উপকূলরক্ষী ছিলো না। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর নৌবাহিনী অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে উপকূলরক্ষী বা কোস্ট গার্ডের দায়িত্ব পালন করতো। এতে এই বাহিনীর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যহত হতো এবং কিছু আইনি সমস্যা মোকাবেলা করতে হতো। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যে সরকার স্বতন্ত্র সত্তায় কোস্ট গার্ড গঠনের জন্যে একটি আইন পাস করে, যা কোস্ট গার্ড অ্যাক্ট ১৯৯৪ নামে অভিহিত। এ আইনের বলে ১৯৯৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কোস্টগার্ডের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। চাঁদপুরে প্রথমে ভাড়া করা বাড়িতে কোস্ট গার্ডের কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে ডাকাতিয়ার তীরে চমৎকার পরিবেশে নিজস্ব ভবনে চলছে কোস্ট গার্ডের কার্যক্রম।
২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর নৌ পুলিশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর একটি শাখা। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নদীপথে চোরাচালান, দস্যুতা ও চাঁদাবাজিসহ সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও নদীর সম্পদ রক্ষায় এই নৌ পুলিশ প্রধানত কাজ করছে। চাঁদপুরে নৌ পুলিশের পুলিশ সুপারের কার্যালয় রয়েছে।
স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় থেকে শুরু করে স্বাধীনতোত্তর ১৯৯৫ সালে কোস্ট গার্ডের কার্যক্রম শুরুর আগ পর্যন্ত চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়া ছিলো নিরাপদ ‘স্মাগলিং জোন’ তথা চোরাকারবারির জন্যে নিরাপদ এলাকা। ওপেন সিক্রেট পদ্ধতিতে নদীর তীরবর্তী কিছু পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত সকলকে ম্যানেজ করে চাঁদপুরের বিভিন্ন পয়েন্টে হতো চোরাকারবারি। নৌপথে চলাচলকারী জাহাজ থেকে স্থানীয় চোরাকারবারিরা মালামাল পাচার করাটা এবং কিছু লোকের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়াটা ছিলো চাঁদপুরের স্বাভাবিক চিত্র। তখন চোরাকারবারিদের ২-৪ জন পৌরসভার মেম্বার/কমিশনার তো হতোই। কেউ কেউ প্যানেল চেয়ারম্যান হয়ে পৌরসভার গাড়ি হাঁকিয়ে চলাচল করতো। এমন চোরাকারবারির হোতারা শহরের বিভিন্ন কাজে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে দাতা হতো কিংবা দাতা সাজতো।
চাঁদপুরে কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশের কার্যক্রম বেগবান হবার পর এখানকার নৌপথে চোরাকারবারি প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিলো। যার ফলে এখানকার সমাজে চোরাকারবারিদের দাপট পুরোপুরি কমেই যায়। চাঁদপুর নিরাপদ ‘স্মাগলিং জোনে’র কুখ্যাতি থেকে মুক্তি পায়। কিন্তু অতি সম্প্রতি চাঁদপুরে এতো বড় একটি চোরাকারবারি হয়েছে, যেটি সকল গণমাধ্যমে আলোচিত সংবাদে পরিণত হয়। চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় মঙ্গলবার ও বুধবার এ সংক্রান্ত সংবাদের শিরোনাম হয় যথাক্রমে ‘মেঘনায় আকিজ গ্রুপের প্রায় ৪ কোটি টাকার চিনি চোরাকারবারির মাধ্যমে বিক্রি ॥ আটক ১১’ এবং ‘চাঁদপুর নৌ-সীমানায় মেঘনায় আকিজ গ্রুপের ৪ কোটি টাকার চিনি পাচার : জাহাজের স্টাফ, চোরাকারবারি সহ ১৫ জন কারাগারে’। এ সংবাদ দুটিতে চাঁদপুরে মরু হাজী নামে এক চোরাকারবারির হোতার কথা জানা যায়, যে কিনা চাঁদপুরকে পূর্বের ন্যায় নিরাপদ ‘স্মাগলিং জোন’ বানানোর প্রয়াসে লিপ্ত। যেটা অবশ্যই উদ্বেগজনক।
আমরা কোনোভাবেই বাংলাদেশের প্রথম ব্র্যান্ডিং জেলা ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’কে পূর্বের ন্যায় নিরাপদ ‘স্মাগলিং জোন’ হিসেবে ভাবতে পারি না। আমরা চাঁদপুরকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশার অনুকূলে নৌ পর্যটন সমৃদ্ধ হিসেবে দেখতে চাই। চাঁদপুরে ‘মরু হাজী’র নেতৃত্বে চোরাকারবারি চলার পেছনে সর্ষের ভেতরে ভূত হিসেবে কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশে কর্মরত অসাধু কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর ন্যূনতম আশ্রয়-প্রশ্রয় রয়েছে কিনা সেটা গোপন ও নিবিড় তদন্তের মাধ্যমে বের করা দরকার বলে মনে করি।