প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
ইটভাটার অর্ধেক যেখানে লাইসেন্সবিহীন!

প্রকৃতপক্ষে কোনো অপরাধ, অনিয়ম শতভাগ নির্মূল করা যায় না। তবে অনেক নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এমন নিয়ন্ত্রণে অপরাধ-অনিয়ম সহনীয় মাত্রায় কোনো রকমে টিকে থাকে। কিন্তু এ টিকে থাকাটা যখন দাপুটে হয়ে যায়, তখন নানা প্রশ্নের উদ্রেক হওয়াটা স্বাভাবিক। যেমনটি হয়েছে ফরিদগঞ্জে। এই উপজেলার পৌর এলাকা ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মোট ২২টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে চালু রয়েছে ১৮টি এবং বন্ধ ৪টি। এই ইটভাটাগুলোর অর্ধেকের সরকারি লাইসেন্স রয়েছে, আর অর্ধেকের সেটি নেই। লাইসেন্সবিহীন ইটভাটাগুলো চলছে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে। সম্প্রতি গাজীপুর নামক স্থানে একটি লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা উপজেলা প্রশাসন বন্ধ করলেও ক’দিন পর সেটি গোপন সমঝোতার মাধ্যমে চালু হয়েছে। লাইসেন্সবিহীন উক্ত ইটভাটা ছাড়াও অন্যান্য ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ, উড়ছে ধোঁয়া। পরিণামে বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকার মানুষ।
গতকাল ফরিদগঞ্জের ইটভাটাগুলো নিয়ে এমকে মানিক পাঠান যে সংবাদ পরিবেশন করেছেন, সেটি চাঁদপুর কণ্ঠে শীর্ষ সংবাদ হিসেবে স্থান পেয়েছে। এ সংবাদে তিনি লিখেছেন, লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ৭ নভেম্বর বিচারপতি আশরাফুল ইসলাম ও বিচারপতি সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ আদালতের বেঞ্চের এক রায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় জনমনে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন দপ্তরের অসাধু লোকদের ম্যানেজ করেই দীর্ঘদিন ধরে চলছে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ইটভাটা সমূহ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, বনাঞ্চলের তিন কিলোমিটার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন পুরোপুরি নিষিদ্ধ। অথচ এ নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ক’টি এলাকায় বেআইনিভাবে ইটভাটা নির্মাণ করে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটানো হচ্ছে। একটি সূত্রের মতে, বিভিন্ন মহলকে চাঁদা দিয়ে আসার সুবাদে চলছে এসব অবৈধ ইটভাটা।
মানিক পাঠান তার পরিবেশিত উক্ত সংবাদে সরেজমিন অভিজ্ঞতার আলোকে লিখেছেন, ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার চরবসন্ত, গাজীপুর, সুবিদপুর, গুপ্টি এলাকায় স্কুল-মাদ্রাসা ও হাট-বাজারের পাশাপাশি ঘনবসতিপূর্ণ লোকালয় রয়েছে। অথচ এসবের মাঝেই গড়ে উঠেছে ইটভাটা। দীর্ঘ ক’বছর ধরে এসব ইটভাটা চলতে থাকায় এগুলোর দূষিত ধোঁয়ায় আশেপাশের লোকজন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। আর গাছপালারও ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। ইটভাটার কাঁচামাল জোগান দিতে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করার কারণে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে এবং উৎপাদনও হ্রাস পাচ্ছে। এই ইটভাটাগুলোর অধিকাংশই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে আর্থিক জরিমানা করে দায়সারা দায়িত্ব পালন করছে।
পরিবেশের জন্যে ক্ষতিকর ও স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টির জন্যে দায়ী অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও পরিচালনা/ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যবৃন্দ একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের দ্বারস্থ হয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। আর প্রভাবশালী ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে অন্য কেউ প্রকাশ্য প্রতিবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চান না সম্ভাব্য হয়রানির ভয়ে।
আমাদের দেশে সরকারি-বেসরকারিভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজনে প্রচুর ইটের চাহিদা আছে। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে হচ্ছে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ। এ কাজের জন্যেও প্রচুর ইটের প্রয়োজন। ইটের ব্যাপক চাহিদা/প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে ইটভাটা গড়ে ওঠাটা স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো নিয়মণ্ডনীতি না মেনে পরিবেশের জন্যে ক্ষতিকর হতে পারে এমন স্থানে ইটভাটা নির্মাণ করে এবং লাইসেন্স না নিয়ে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে চলবে অনেক ইটভাটা-এটা মেনে নেয়া যায় না। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের সমন্বিত ও সম্মিলিত ব্যবস্থাগ্রহণ অতীব জরুরি।