সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

‘নিসচা’র প্রধান পুঁজি যখন মাটির ব্যাংক!
অনলাইন ডেস্ক

১৯৫৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার আশুতিয়াপাড়া গ্রামে হাজী আব্দুল আলী ও সরুফা খাতুনের ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করে এক শিশু, যার নাম রাখা হয় ইদ্রিস আলী। ১৯৭৭ সালে অর্থাৎ একুশ বছর বয়সে ইদ্রিস আলী বসুন্ধরা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ইলিয়াস কাঞ্চন নাম ধারণ করে হয়ে যান এক জনপ্রিয় অভিনেতা। তিনি তিনশ’টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে, বিশেষ করে বাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হিসেবে স্বীকৃত ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ (১৯৮৯) তে অভিনয় করে তিনি জনমনে বনে যান এক মহানায়ক। ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি তাঁর স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনের অকাল মৃত্যুতে সম্পূর্ণ বদলে যান। তিনি ওই বছরের ১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) নামে একটি সংগঠন, যেটির মাধ্যমে ধারাবাহিক সামাজিক আন্দোলনের ফলস্বরূপ গত ২৯ বছরে তিনি অর্জন করেছেন অভিনেতা/নায়কের চেয়েও অনেক বেশি খ্যাতি। তাঁর এই আন্দোলনের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু দিবসকে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ হিসেবে সরকার কর্তৃক অনুমোদন আদায়ে যেমন সক্ষম হয়েছেন, তেমনি ২০১৭ সালে সমাজসেবায় অর্জন করেন দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’।

সমালোচকরা তো বটেই, ইলিয়াস কাঞ্চনের শুভাকাক্সক্ষীরাও ভেবেছেন, স্ত্রীর মৃত্যুর শোকে নিতান্তই ভাবাবেগ তাড়িত হয়ে তিনি যে ‘নিসচা’ প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেটির স্থায়িত্ব বড় জোর ৪-৫ বছর হবে। কিন্তু না, তিনি তাঁর সংগঠনকে দাঁড় করিয়েছেন দৃঢ় ও টেকসই ভিত্তির ওপর। তিনি যখন-তখন নির্দ্বিধায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়ান সংগঠনের প্রয়োজনে। তেমনি গত ৪ ডিসেম্বর রোববার তিনি ‘নিসচা’র ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে ছুটে আসেন চাঁদপুরে। তিনি চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী চৌরাস্তায় চাঁদপুরজমিন টাওয়ারে চক্ষু চিকিৎসা শিবির ও শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি তাঁর ‘নিসচা’কে সাংগঠনিকভাবে কীভাবে টেকসই করেছেন এবং সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কী কী করা প্রয়োজন সে বিষয়ে যে বক্তব্য দেন, সেটি পরিণত হয় মোটিভেশনাল স্পীচে।

ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, তিনিসহ ‘নিসচা’র সাথে জড়িত নেতৃবৃন্দ ও সদস্যবৃন্দ মাটির ব্যাংকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ টাকা করে বছরে তিন হাজার ছয়শ’ পঞ্চাশ টাকা জমান। প্রতি বছর ১ ডিসেম্বর ‘নিসচা’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের প্রাক্কালে তারা এই মাটির ব্যাংক ভেঙ্গে টাকা জোগাড় করেন এবং নূতন মাটির ব্যাংক প্রতিস্থাপন করেন। এই মাটির ব্যাংকের অর্থে তারা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে কেক কাটেন না (এমনকি ইলিয়াস কাঞ্চন তাঁর জন্মদিনেও কেক কাটেন না), বরং কেকের অর্থ সাশ্রয় করে এবং বাদবাকি অর্থে তারা সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ বহুবিধ সমাজসেবামূলক কাজ করেন। ইলিয়াস কাঞ্চনের এমন বক্তব্যে শ্রোতাদের মাঝে মন্ত্রমুগ্ধতা তৈরি হয়।

সমাজসেবামূলক সংগঠনসমূহের মধ্যে অধিকাংশ নয়, বলা যায় প্রায় নব্বই শতাংশ সংগঠনই সরকারি-বেসরকারি অনুদান, শুভাকাক্সক্ষী ও দাতাদের অনুদান এবং বহুবিধ চাঁদার ওপর নির্ভরশীল। অনুদানসহ চাঁদা আদায় বা প্রাপ্তিতে কম-বেশি তদবির, প্রক্রিয়াগত ঝামেলা, অনিয়ম ও জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হয়, সবচে’ বড় কথা অস্বচ্ছতা এড়িয়ে স্বচ্ছতা প্রমাণ করাটা কঠিন হয়। তার বিপরীতে ‘নিসচা’র মাটির ব্যাংকের টাকার সঠিক হিসাব রাখা ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতাই যথেষ্ট, যাতে ক্লেশ সৃষ্টির সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। সত্যিই ‘নিসচা’ পরিচালনায় ইলিয়াস কাঞ্চনের এই মাটির ব্যাংকের প্রধান পুঁজি অনেক বেশি বাস্তবসম্মত ও ঝুঁকিমুক্ত এবং অবশ্যই অনুসরণযোগ্য।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়