প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার)গণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্যগণ সহ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)-এর যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তৃণমূল পর্যায়ে স্থানীয় সরকারের সবচে’ শক্তিশালী ইউনিট হচ্ছে এই ইউনিয়ন পরিষদ। এই পরিষদ হচ্ছে একটি পরিবারের মতো, যেখানে চেয়ারম্যান পরিবার প্রধান তথা অভিভাবকের ন্যায় ভূমিকায় থাকেন। পরিবারের সকল সদস্য সুখে-দুঃখে, সমস্যা-সম্ভাবনায় একাত্ম থাকলে এবং পরিবার প্রধান ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতায় সবাইকে নিরেট ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারলে একটি পরিবার নিয়ে যেমন কথা উঠে না, তেমনি ইউনিয়ন পরিষদের বেলায়ও। ইউপি চেয়ারম্যান যদি কোনো নারী বা পুরুষ মেম্বারকে বেশি গুরুত্ব দেন, অন্যদের সেভাবে না দেন, তাহলে বৈষম্যের অভিযোগ সহ নানা অভিযোগ উত্থাপিত হবেই। আবার চেয়ারম্যান যদি মেম্বারদের কাউকেই পাত্তা না দেন, তাহলে অনাস্থা প্রস্তাব সহ নানা কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয় চেয়ারম্যানকে। তিনি অনিয়ম করলে তো বটেই, এমনকি অনিয়ম না করেও নানাভাবে হয়রানি ও হেনস্তার শিকার হন।
সাম্প্রতিক সময়ে এমন একজন চেয়ারম্যানের নাম উল্লেখ করা যায়, তিনি হচ্ছেন চাঁদপুর সদর উপজেলার কল্যাণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন রনি পাটওয়ারী। তিনি একদিকে, আর অন্যদিকে তার পরিষদের বাকি প্রায় সবাই। এর পরিণামে তিনি অনাস্থা প্রস্তাব সহ নানা অভিযোগের শিকার হয়ে মামলার শিকার, এমনকি জেলে পর্যন্ত গিয়েছেন। এজন্যে তার বেপরোয়া আচরণ ও বেপরোয়া মানসিকতা যে দায়ী সেটা তার সামগ্রিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে অনুধাবন করা যায়। তার মতো বেপরোয়া ইউপি চেয়ারম্যান বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানেই আছেন। সর্বশেষ এমন চেয়ারম্যানের বিদ্যমানতা শাহরাস্তিতে খুঁজে পাওয়া গেছে। তিনি হচ্ছেন সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তফা কামাল মজুমদার।
মেম্বারদের স্বাক্ষর জাল করে বেনামে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর এমন অভিযোগ লিখিতভাবে করেছেন দুজন মেম্বার। এরা হচ্ছেন ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার মিরন হোসেন ওরফে শাহ মিরন এবং অন্যজন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী মেম্বার সাবরিনা নুশরাত। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার মিরন হোসেনকে সভাপতি ও সাবরিনা নুশরাতকে সেক্রেটারী করে ৯ সদস্যের ভুয়া প্রকল্প কমিটি বানিয়ে প্রত্যেকের স্বাক্ষর জাল করে বিল উত্তোলনের জন্যে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে দাখিল করেছেন। এ প্রকল্পে ৭/৮ মাস আগে গ্রামের লোকজন থেকে বাঁশ সংগ্রহ করে চেয়ারম্যান তিন ট্রাক মাটি ফেলেছেন। এটা দেখিয়ে চেয়ারম্যান ২ লাখ ২০ হাজার টাকার বিল তৈরি করেছেন। মেম্বারদের অভিযোগের কথা শুনে চেয়ারম্যান তড়িঘড়ি কাজ শুরু করেছেন। চেয়ারম্যান আত্মপক্ষ সমর্থনে বলছেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করতে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
আমরা উক্ত অভিযোগের ব্যাপারে আপাতত কোনো মন্তব্য করতে চাই না, যেহেতু এটি তদন্তযোগ্য। আমরা বলতে চাই, পরিবার প্রধান যতো অর্থবিত্ত ও ক্ষমতার অধিকারী হন না কেনো, তাকে বয়সের কথা মাথায় না রেখেই পরিবারের সদস্যদের অভিমত, অধিকার ও মর্যাদাকে মূল্যায়ন তথা পরোয়া করতে হয়। অন্যথায় ক্ষোভ, বিশৃঙ্খলা, অভিযোগ উত্থাপন সহ অপ্রীতিকর কিছু কম-বেশি ঘটবেই। তেমনই ইউপি চেয়ারম্যান পদমর্যাদায় যতো ক্ষমতার অধিকারী হন না কেনো, তাকে তার পরিষদের সদস্য বা মেম্বারদের অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন হতে হয়, পরোয়া করতে হয়। এটি না করে তিনি বেপরোয়া হলে ঝামেলা বাঁধবেই, হোঁচট তাকে খেতে হবেই। এটি উপলব্ধির আওতায় আনার জন্যে ট্রেনিং নিতে হয় না, প্রচলিত ধারণা, বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে হয়।