রবিবার, ০৪ মে, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

যেমন প্রার্থী তেমন ভোটার

যেমন প্রার্থী তেমন ভোটার
অনলাইন ডেস্ক

আমরা যে কোনো নির্বাচনে প্রার্থীদের মাঝে মহত্ত্ব প্রত্যাশা করি। একই সাথে ভোটারের কাছে তেমনটি প্রত্যাশা করি না। আমাদের ভাবটা এমন, ভোটাররা যেমন ইচ্ছা তেমন হোক, প্রার্থী ভালো হওয়া চাই। আমাদের ইচ্ছাটা হয় এমন, আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো। আমাদের এই প্রত্যাশা, ভাবনা ও চাওয়াটা যে ভুল সেটা আমরা খুবই কম পর্যালোচনা করি। আমাদের যেটা করা উচিত, সেটা হচ্ছে-আমার ভোট আমি দেবো, দেখ শুনে বুঝে দেবো। কথা হলো, আমাদের ভোটারদের সকলে কি সেটা করি? যদি করতাম, তাহলে প্রার্থীর কাছ থেকে নগদ অর্থসহ আগাম নানা সুবিধা প্রত্যাশা করতাম না। আমাদের ভোটারদের অনেকের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য প্রত্যাশাটা এমন, প্রার্থী ক্যাশে না হোক, কাইন্ডস্ হিসেবে কিছু দিক। সেটা না পারলে অন্তত কিছু খাওয়াক-চায়ের দোকানে কিংবা প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে প্রার্থীর পক্ষ থেকে বিনামূল্যে চলুক চা-বিস্কুট পরিবেশন।

ভোটারদের প্রকাশ্য-গোপন চাহিদা মেটাতে গিয়ে ছোট-বড় যে কোনো নির্বাচনে প্রার্থীর অবস্থা হয় বেসামাল। নিজের সঞ্চয় ভেঙ্গে, নিজের বা স্ত্রী-সন্তানের অলঙ্কার ও জমি বিক্রি করে নির্বাচনী খরচ জোগাড় করতে হয়। ভোটারকে চা-বিস্কুট-সিঙ্গারা খাওয়ানো, উপহার হিসেবে বিভিন্ন কাইন্ডস্ (উপকরণ) প্রদান এবং কিছু ভোটারকে বিভিন্ন অংকের নগদ অর্থ দিতে হয়। নগদ অর্থ দেয়ার কাজটি ‘ডালা শিকার’-এর মতো করে সারতে হয়। অর্থাৎ ভোট প্রদানের পূর্ববর্তী রাতে দক্ষ মাছ শিকারীর ন্যায় করতে হয়। যেমনটি করেছেন গত ২৮ নভেম্বর ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য (মেম্বার) প্রার্থী মোঃ বশির উল্লাহ পাটওয়ারী। তিনি তার ওয়ার্ডের ২৮৭৮ জন ভোটারের মধ্যে অন্তত ৬শ’ জনকে জনপ্রতি নগদ পাঁচশ’ টাকা থেকে এক হাজার টাকা করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি ভোট পেয়েছে ৩৩৪ ভোট, যার ফলে তিনি বিজয়ী হওয়াতো দূরের কথা, বিজয়ী প্রার্থী (প্রাপ্ত ভোট ৬১৭)-এর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীও হতে পারেন নি। এজন্যে তিনি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তার নিকট থেকে অর্থ গ্রহণকারী ‘বেঈমান’ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তিনি প্রদত্ত অর্থ ফেরত চাইছেন। এমনকি তিনি দুটি গ্রামে বৈঠকও করেছেন। এর ফলে কোনো ভোটার টাকা ফেরত দিয়েছেন, আবার কোনো ভোটার টাকা ফেরত দেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু ভোটার বলেছেন, আমাদের থেকে ভোটের বিপরীতে বিভিন্ন সেবার প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন। ভোট দেয়ার কথা নিশ্চিত করার পরও আমাদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি টাকা দিয়েছেন। এখন নির্বাচনে হেরে টাকা আদায়ের মিশনে নেমেছেন।

চাঁদপুর কণ্ঠে গতকাল সোমবার প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদে মেম্বার প্রার্থী বশির উল্লাহ পাটোয়ারীর যে বক্তব্য সংযোজন করা হয়েছে সেটি হচ্ছে, যারা আমাকে ভোট দেয়নি, তাদের কাছ থেকে আমি টাকা ফেরত চাচ্ছি। তার এ বক্তব্য যে আত্মস্বীকৃত অপরাধীর ন্যায়, সেটা বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। এজন্যে তিনি কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর মতো অপরাধ করেছেন। কথা হলো, এই অপরাধ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমলে নেয়ার মতো কেউ আছে কি?

আমাদের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে নীতিকথা বলার অভ্যাসটা বেশি লক্ষ্য করা যায়। সুযোগ পেলেই বিভিন্ন মাধ্যমে সেই অভ্যাসটার প্রকাশ ঘটাই। আমরা প্রায়শই বলি, যে কোনো নির্বাচনে প্রার্থীকে হতে হবে সৎ-মহৎ কিংবা তার চরিত্র হতে হবে ফুলের মতো পবিত্র। কথা হলো, শুধু প্রার্থী সৎ-মহৎ হলেই চলবে?- না, ভোটারকেও হতে হবে সৎ-মহৎ? প্রকৃত কথা হলো, প্রার্থী ও ভোটার উভয়কেই হতে হবে সৎ-মহৎ। এমনটি যতক্ষণ পর্যন্ত না হওয়া যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে সৎ-মহৎ প্রার্থীকে নির্বাচিত করাটা দুষ্করই থেকে যাবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়