সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

মাটিখেকোদের সাথে আপোষকামিতা
অনলাইন ডেস্ক

চাঁদপুরের মেঘনা এখন বালুখেকোমুক্ত-এটা মিডিয়াসহ অন্য সকলের নীরবতায় ধারণা করতে অসুবিধা হয় না। তবে মেঘনার হাইমচর এলাকায় মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য যে সীমাহীন সেটা পর পর দুদিন চাঁদপুর কণ্ঠে চোখ রাখলেই ধারণা করা যায়। চাঁদপুর কণ্ঠের ১ ডিসেম্বরের সংবাদ শিরোনাম ‘নীলকমল মধ্যচরে আবারও মাটিখোকো চক্রের হানা ॥ হাইমচরে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল হুমকির মুখে’ এবং ২ ডিসেম্বরের সংবাদ শিরোনাম ‘হাইমচরে রাতভর পাহারা দিয়েও রক্ষা হয়নি চরের মাটি’। এ দুটি শিরোনাম পড়লেই যে কোনো পাঠকের মধ্যে সংবাদের গভীরে যাওয়ার আগেই একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়ে যায়।

প্রথম সংবাদটির সূচনায় লিখা হয়েছে, হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের মধ্যচরে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকৃত অর্থনৈতিক অঞ্চলে আবারও সেই মাটিখেকো চক্রের হানা। এবার সকল দিক ম্যানেজ করেই বড় পরিসরে মাটি কেটে নিয়ে মুন্সিগঞ্জের ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। যার ফলে নীলকমল ইউনিয়নের মানচিত্র থেকে একেবারেই মুছে যাচ্ছে ৭নং ওয়ার্ডের শিকদারকান্দি নামক একটি গ্রাম। হুমকির মুখে পড়ছে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল।

দ্বিতীয় সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, হাইমচরের মধ্যচরে রাতভর পাহারা দিয়েও রক্ষা করা সম্ভব হয়নি শিকদারকান্দি গ্রামের মাটি। গ্রামবাসী মাটি সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত জাহাজ আটক করে প্রশাসনকে অবহিত করার পরেও প্রশাসন নেয়নি কোনো ব্যবস্থা। ১ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে জাহাজটিকে নিয়ে যায় মাটিখেকো চক্র। এ যেনো সর্ষের মধ্যে ভূত। এ নিয়ে উপজেলাজুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। এই মাটিখেকো চক্রের মূল হোতা চাঁদপুরের মুন্না তালুকদার ও রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার রনি। এদেরকে আটক করার জন্যে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

নীলকমল ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার বাচ্চু মিয়া সরকার জানান, গত ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় মাটিখেকো চক্রটি শিকদারকান্দিতে মাটি কাটা শুরু করে। আমরা গ্রামবাসী তাদেরকে ধাওয়া দিলে তারা চলে যায়। আমরা রাত ৩টা পর্যন্ত পাহারা দিয়ে সবাই বাড়ি চলে যাই। বাড়িতে যাওয়ার পর থেকে এই চক্রটি পুনরায় মাটি কাটা শুরু করে। সকালে সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গেলে তারা একটি জাহাজ রেখে পালিয়ে যায়। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানালেও তারা নেয়নি কোনো ব্যবস্থা। নিকটস্থ দুটি নৌ-পুলিশ ফাঁড়িকে জানানো হলেও কোনো লাভ হয়নি। পরবর্তীতে চক্রটি এসে নির্বিঘেœ জাহাজটি নিয়ে যায়। আমরা বুধবার একটি চর রক্ষা কমিটি গঠন করেছি। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় আমাদের চর আমাদেরকে রক্ষা করতে হবে।

নীলকমল ইউপি চেয়ারম্যান সউদ আল নাসের বলেন, চরের মাটি রক্ষায় আমার যা করা লাগবে আমি তা-ই করবো। মাটি রক্ষায় কোনো চক্রকে ছাড় দেয়া হবে না। প্রয়োজনে নীলকমলবাসীকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করা হবে। তবুও নীলকমলের মানচিত্র থেকে কোনো গ্রামকে বিলুপ্ত হতে দেয়া হবে না।

দুটি সংবাদের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনসহ অন্য সকল প্রভাবশালীর সাথে হাইমচরের মাটিখেকো চক্রের সখ্যতার আভাস পাওয়া যায়। একটা নীরব আপোষকামিতার গন্ধও পাওয়া যায়। এটা দুঃখজনক, আপত্তিকর ও নিন্দনীয়। মাটিখেকো চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কারো শিথিলতা প্রদর্শন, গড়িমসি করা যুদ্ধক্ষেত্রে প্রহসন করার সমতুল্য। বলা যায়, দেশপ্রেমের চেয়ে এদের স্বার্থচিন্তা অনেক প্রবল। আমাদের বিশ্বাস, জেলা প্রশাসক উপজেলা প্রশাসন, কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশকে অধিক তৎপর থাকার নির্দেশ দিলে ভবিষ্যতে মাটিখেকো চক্র হাইমচরের চরাঞ্চলে হানা দেবার সাহস আর প্রদর্শন করবে না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়