প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০

প্রতিবেশীর সাথে জমি নিয়ে বিরোধ অতি সাধারণ দৃশ্য। পৈত্রিক জমি নিয়ে সৎ ভাই-বোনের মধ্যে বিরোধও সচরাচর দেখা যায়। এজন্যে মারামারি-খুনাখুনির ঘটনা যে কতোটা অসংখ্য সেটা বিবৃত করার মতো নয়। এমন বিরোধ সামাজিকভাবে নিষ্পত্তি হয় খুবই কম। সংক্ষুব্ধ পক্ষ মামলা ঠুকে দিলে সে মামলা এতোটা সময় ধরে চলে যে, অনেকে জীবদ্দশায় রায় আর দেখে যেতে পারে না। অনেকে মামলার বাদী হয়ে কিংবা বিবাদী হয়ে নিরাপত্তার প্রশ্নে নিজ এলাকা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। কেউ কেউ মামলা চালাতে চালাতে ফতুর হয়ে যায়। তবুও ‘নিজেও খামু না, অন্যরেও খেতে দিমু না’ নীতিতে মামলা চালায় নিরর্থক। চাঁদপুর শহরে তো এক ব্যক্তি সৎ ভাই-বোনের সাথে সম্পত্তিগত বিরোধহেতু নিজে মেধাবী ও উচ্চ শিক্ষিত হয়েও এবং পৈত্রিক ব্যবসার উত্তরাধিকারী হয়েও কোনো পেশা গ্রহণ করেন নি। স্ত্রী-সন্তানের আয়েই চালিয়েছেন ও চালাচ্ছেন সংসার, আর সৎ ভাইদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা ঠুকে দেয়া ও চালিয়ে যাওয়াটাকেই মনে করছেন তার জীবনের মুখ্য কাজ। এতে নিষেধাজ্ঞাজনিত কারণে কোটি কোটি টাকার জমি পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়।
পৈত্রিক জমি নিয়ে একই মায়ের উদরে জন্ম নেয়া অর্থাৎ সহোদর ভাই-বোনের বিরোধ সৎভাই-বোনের বিরোধের চেয়েও অনেক কম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পৈত্রিক জমি নিয়ে সহোদর ভাইদের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় রীতিমত উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে চাঁদপুর শহরের একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও একটি শিক্ষক সংগঠনের শীর্ষ নেতা কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা ও সহোদর বড় ভাইয়ের খুনের ঘটনা সমাজে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এতো বড় অপরাধ করেও তিনি পার পেয়ে যান প্রভাবশালীদের সহায়তার কারণে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্স জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন খুন হয়েছেন সহোদর ভাইয়ের হামলায়। কারণ সেই পৈত্রিক জমি সংক্রান্ত বিরোধই। সর্বশেষ শুক্রবার সকালে কচুয়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ঘটেছে নৃশংসতম এক ঘটনা। এ ঘটনায় বড় ভাই ও তার ছেলের হাতে খুন হয়েছেন সহোদর ছোট ভাই সিরাজুল ইসলাম, যিনি দীর্ঘদিন ওমানে প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে এসে স্ত্রী ও নাবালক দু পুত্র সন্তানের সাথে কাটাচ্ছিলেন সুখের জীবন। কিন্তু পৈত্রিক জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে শুক্রবার সকালে তার বসতঘরে সহোদর বড় ভাই তাজুল ইসলাম স্ত্রী-সন্তানসহ দলেবলে ঢুকে ব্যাপক মারধর করলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তাকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলেও তার জ্ঞান আর ফিরানো সম্ভব হয়নি। তিনি ঠাঁই নিয়েছেন বিরোধমুক্ত ছোট্ট মাটির ঘর কবরে।
কচুয়া থানার পুলিশ বড় ভাইয়ের হাতে খুন হওয়া সিরাজুল ইসলাম (৫০)-এর শোকার্ত পরিবারের পাশে আইনি সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছে খুব দ্রুতই। আটক করা হয়েছে তিনজনকে। আমাদের বিশ্বাস, এই খুনের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অন্যরাও আটক হবে এবং দ্রুত শাস্তির আওতায় আসবে। আমরা নিহত সিরাজুল ইসলামের শোকাহত স্ত্রী ও দু সন্তানের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি এবং দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছি।