প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
রাখে আল্লাহ মারে কে
ক’বছর আগে চাঁদপুর ও ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ থেকে মেঘনা নদীতে পড়ে যান চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহতলী এলাকার বাসিন্দা বিশিষ্ট এক ব্যবসায়ী। তার পড়ে যাওয়ার বিষয়টি লঞ্চের লোকজন প্রত্যক্ষ করলেও তাকে উদ্ধারের জন্যে ন্যূনতম প্রয়াস চালায়নি। তিনি সাঁতার জানতেন। তিনি সাঁতার কেটে কেটে তাকে উদ্ধারের জন্যে অনেক চিৎকার দিলেন। বিশাল মেঘনার ঢেউয়ের গর্জনে তার সে চিৎকার কারো কানে পৌঁছেনি। এমতাবস্থায় তিনি জাইঙ্গা ছাড়া শরীরের অন্য সব পোশাক খুলে ফেলেন এবং পকেটে থাকা কয়েক লক্ষ টাকার মায়া ত্যাগ করলেন। হাতের ঘড়ি ও মোবাইল ফোন তো আগেই ফেলে দেন। এতে তার শরীর হালকা হয় এবং সেজন্যে তিনি পানিতে ঘন্টার পর ঘন্টা ভেসে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা চালান। এক পর্যায়ে পরনের জাইঙ্গাও খুলে ফেলেন। রাতের অন্ধকারে ভাসতে ভাসতে তিনি একটি নোঙ্গর করা জাহাজের নাগাল পেলেন। জাহাজের কর্মচারীরা টের পেলেন কিছু একটা জাহাজের গায়ে লেগেছে। টর্চ লাইটের আলোতে দেখলেন, এই কিছু কোনো প্রাণহীন বস্তু নয়, একজন জীবন্ত মানুষ, যিনি দিগম্বর। সেজন্যে তাকে উদ্ধারের আগে ফেলে দেয়া হলো লুঙ্গি, যেটি পরে তিনি লজ্জাস্থান ঢাকলেন। জাহাজের মানবিক কর্মচারীরা তাকে আন্তরিক সেবা-শুশ্রƒষা দিয়ে এবং খাবার খাইয়ে সুস্থ করে তুললেন। শুধু তা-ই নয়, পরদিন দিনের আলোতে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকাযোগে চাঁদপুর পৌঁছে দিলেন। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে মহান সৃষ্টিকর্তা পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তাকে রক্ষা করে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি কাউকে দুনিয়াতে রাখতে চাইলে কেউ শত চেষ্টা করেও তাকে মারতে পারে না।
|আরো খবর
গত শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চাঁদপুর শহরের ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জয়নাল গাজী (৬৫) ও মোক্তার গাজী (৩৫) নামে দু জেলে একটি ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে কোড়ালিয়ার পশ্চিমে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে মেঘনায় মাছ শিকারে যান। কিন্তু প্রচণ্ড ঢেউয়ের আঘাতে জালসহ তাদের নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় নৌকাটি ধরেই জেলে দুজন বাঁচার আকুতি জানান। কিন্তু রাতের অন্ধকারে ও ঢেউয়ের গর্জনে তাদের এই আকুতি কেউ শুনতে পায়নি। তবে রাত ৮টায় ইঞ্জিন চালিত ট্রলারযোগে সফরমালী থেকে চাঁদপুর অভিমুখী এসএসসি ’৮৬ ব্যাচের নৌভ্রমণ দলের দলপ্রধান, রাজরাজেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারীর দৃষ্টিগোচর হয় বিপন্ন দু জেলের মরণাপন্ন অবস্থা। তিনি তার বন্ধুদের সহযোগিতায় জাল ও নৌকাসহ দুই জেলেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। প্রায় এক ঘন্টা এই দু জেলে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। ভাগ্যক্রমে এ সময়ে কোনো ভারী নৌযান তাদের পাশ দিয়ে যায়নি। যদি যেতো, তাহলে ঢেউয়ের তীব্রতায় তারা মেঘনার অতলে হারিয়ে যেতো। উদ্ধারকৃত এই দু জেলেকে আনন্দবাজারের কাছাকাছি কোড়ালিয়ার চরে নিরাপদে নামিয়ে দেয়া হয়। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান তাদেরকে আর্থিক সহায়তাও প্রদান করেন।
নদীতে মা ইলিশ সংরক্ষণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার শেষ দিনে দুজন জেলে নিশ্চয়ই অপেক্ষার প্রহর গোণার কষ্ট সহ্য করতে না পেরেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হবার প্রায় ছয় ঘন্টা পূর্বে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীতে নামেন। কিন্তু মাছ ধরার আগেই ছোট ডিঙ্গি নৌকা ও জালসহ প্রচণ্ড ঢেউয়ের কবলে পড়ে ডুবে যান। রাতের অন্ধকারে তারা বাঁচার কথা নয়। তবে মহান সৃষ্টিকর্তা তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে একটি নৌভ্রমণ দলকে যেনো তাদের নিকটবর্তী করে দেন এবং উদ্ধার পাইয়ে দেন। এজন্যেই বলে, রাখে আল্লাহ মারে কে।
উপরোক্ত দুটি ঘটনা থেকে মানুষের শিক্ষা গ্রহণের অনেক কিছুই আছে। কথা হলো, মানুষ কি সেই শিক্ষা গ্রহণের আন্তরিক প্রয়াস চালায়?