প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
এক সময় আমাদের দেশে ড্রেজার ছিলো দুর্লভ বস্তু। নদী খননে বিশালাকৃতির ড্রেজার কালেভদ্রে দেখা যেতো। এই ড্রেজারের মিনি সংস্করণ যখন দেশীয় প্রযুক্তিতে বানানো শুরু হলো, তখনই এই ড্রেজার হয়ে গেলো সুলভ ও সচরাচর সর্বত্র দৃশ্যমান বস্তু। বড় ড্রেজার নদী ছাড়া চলতে পারে না। কিন্তু মিনি ড্রেজার নদী, খাল, বিল, পুকুর, দিঘি তথা যে কোনো জলাশয়ে চলতে পারে, এমনকি চাকার উপরে ভর করে কাঁচা-পাকা সড়ক দিয়ে চলতে পারে। এই অবাধ যাতায়াত ও সহজলভ্যতার কারণে মিনি ড্রেজার হয়ে গেছে এক আতঙ্কের নাম। এক সময় দলে দলে শ্রমিক লাগিয়ে এক স্থান থেকে মাটি কেটে অন্যস্থানে ফেলা হতো। এখন মিনি ড্রেজারের কারণে মাটি কাটার সেই দৃশ্যপট বলা যায় বিরল হয়ে গেছে। বর্তমানে সচরাচর দেখা যায় ড্রেজারের পাইপ দিয়ে নিচু জমি ভরাট করা হচ্ছে কিংবা কোথাও মাটি বা বালির স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে ছোট জলাশয়ে অধিক পরিমাণ মাটি কেটে পাড় ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে এবং ফসলি জমির বারোটা বাজানো হচ্ছে। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে মোঃ ফারুক চৌধুরী এমনই একটি সংবাদ পরিবেশন করেছেন, যার শিরোনাম হয়েছে ‘শাহরাস্তিতে প্রতিনিয়ত ড্রেজারের দৌরাত্ম্য ॥ ফসলি জমি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’।
এ সংবাদে ফারুক চৌধুরী লিখেছেন, শাহরাস্তিতে প্রতিনিয়ত ড্রেজারের দৌরাত্ম্যে ফসলি জমি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ও কমে যাচ্ছে। দেখার কেউ নেই। সম্প্রতি ১৫-২০ দিনের মাথায় শাহরাস্তি পৌর এলাকার ৯নং ওয়ার্ডের চিকুটিয়া রাস্তার পূর্বপাশে চার একরেরও বেশি ফসলি জমি ভরাট করে ফেলা হয়েছে ড্রেজার দিয়ে। রাস্তার পশ্চিম পাশে ড্রেজারে ফসলি জমি খনন করে পাইপের সাহায্যে পূর্ব পাশে ফেলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ড্রেজার মালিকদের খবর দিয়ে এনে সতর্ক করেছেন। কিন্তু প্রভাবশালী ও বিত্তশালী লোকজন এমন সতর্কতার মধ্যেই ড্রেজার দিয়ে নিচু জমিতে মাটি ভরাটের মাধ্যমে উঁচু করে প্রতি শতক জমি উচ্চমূল্যে বিক্রি করছেন।
এমন চিত্র শুধু শাহরাস্তির নয়, চাঁদপুর জেলার কিছু উপজেলাসহ দেশের অন্যান্য অনেক স্থানেরও। এক শ্রেণীর প্রভাবশালী-বিত্তশালী ড্রেজার দিয়ে রীতিমত সন্ত্রাস চালিয়ে আসছে। যোগ-জিজ্ঞেস ছাড়াই অন্যের জমিতে বালু ফেলে সেই জমি কম দামে কিনে নিয়ে প্লট বিক্রি করার ব্যবসা চালাচ্ছে। এই ব্যবসা তথা বিনা অনুমতিতে যত্রতত্র ড্রেজিং ও জমি ভরাটের প্রবণতা রুখতে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। আমরা মনে করি বিচ্ছিন্নভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা ও ড্রেজার ধ্বংসের মধ্যেই এই প্রবণতা রোখার টেকসই কার্যকারিতা নেই। কার্যকারিতা তখনই প্রতিপন্ন হবে, যদি ড্রেজিংয়ের হুকুমদাতাদের পাকড়াও করা হয়।