প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
‘সিত্রাং’ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিন
বাংলাদেশে ১৯টি উপকূলীয় জেলা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে : কক্সবাজার, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ফেনী, গোপালগঞ্জ, যশোর, ঝালকাঠি, খুলনা, লক্ষ্মীপুর, নড়াইল, নোয়াখালী, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, শরীয়তপুর ও পটুয়াখালী। যে কোনো ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে এ জেলাগুলো কমণ্ডবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতি বছর এমন ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নিয়েই এ সকল জেলার সাগর কিংবা নদী তীরবর্তী জনপদের মানুষকে দিনাতিপাত করতে হয়। বিপন্নতা যেনো তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
|আরো খবর
ইতিহাস ঘেঁটে যদ্দুর জানা যায়, ১৮৭৬ সাল থেকে উপকূলীয় জেলাগুলোর সব ক’টি কিংবা কোনো কোনোটি ছোট-বড় ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার। আবহাওয়া অধিদফতরের সাবেক পরিচালক শাহআলমের মতে, ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে সবচে’ প্রলয়ঙ্করী ছিলো ১৯৭০ ও ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় এবং তারপর ২০০৭ সালের ‘সিডর’। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর সর্বোচ্চ ২২৪ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ ও অসংখ্য গবাদি পশু প্রাণ হারায়। বিশ্বের ইতিহাসে এ ঘূর্ণিঝড়টি সর্বকালের সবচে’ ভয়ঙ্করতম প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি হিসেবে চিহ্নিত। ১৯৯১ সালের ২৯-৩০ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়কে আখ্যায়িত করা হয়েছে ‘শতাব্দীর প্রচণ্ডতম ঘূর্ণিঝড়’ হিসেবে, যাতে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যায়। ২২৪ কিলোমিটার গতিবেগের এ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলীয় জেলা সমূহের অন্তত এক কোটি মানুষ। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর খুলনা-বরিশাল উপকূলীয় এলাকায় ২২৪ কিলোমিটার গতিবেগের ‘সিডর’ নামক ঘূর্ণিঝড়ে মাত্র ১০ হাজার মানুষ মারা গেলেও বাড়িঘরসহ নানা অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি হয় অত্যধিক। এছাড়া ১৯৮৫ সালে ১৫৪ কিলোমিটার গতিবেগের উরিরচরের ঘূর্ণিঝড়, ২০০৯ সালে খুলনা-পশ্চিবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’, ২০১৩ সালের ১৬ মে নোয়াখালী-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই চট্টগ্রামণ্ডকক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’, ২০১৬ সালের ২১ মে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’, ২০১৭ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামণ্ডকক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ এবং ২০১৯ সালের মে মাসে ১৬০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’সহ আরো কিছু ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর কোনো কোনোটি এখনও ধুঁকছে।
এরই মধ্যে ‘সিত্রাং’ নামক প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের দুঃসংবাদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম (জিএফএস)। এ সংস্থাটি জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে যাওয়া ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ আগামী ২৪ অক্টোবর উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানতে পারে এবং ২১০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার গতিবেগে সুপার সাইক্লোনে রূপ নিয়ে সবকিছু ল-ভ- করে দিতে পারে। যদিও জিএফএস গত ১৩ অক্টোবর দুপুরে জানিয়েছে, ‘সিত্রাং’ এরই মধ্যে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এর শক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে কম নির্দেশ করছে। এমন পরিস্থিতি থাকলে ঝড়টি সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হতে পারে।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ সময় টিভিকে জানান, ‘সিত্রাং’-এর শক্তি কম নির্দেশ করছে সেটি অবশ্যই ভালো খবর। কিন্তু ঝড় সংক্রান্ত একটি খারাপ খবরও রয়েছে। সেটি হচ্ছে-বিশ্বের চারটি দেশের ভিন্ন ভিন্ন পাঁচটি মডেলের প্রত্যেকটিতেই আগামী ২০ থেকে ২৫ অক্টোবরের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। যার অর্থ-ঝড় আসছে, তবে কেবল সেটির শক্তি কমণ্ডবেশি হতে পারে। আমরা এই ঝড় মোকাবেলায় সরকারকে পর্যাপ্ত সময় হাতে রেখে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।