প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
‘ডিমওয়ালা মাছ রক্ষা করুন, ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধি করুন’ এই স্লোগানে গত ৭ অক্টোবর থেকে আগামী ২৮ অক্টোবর ২০২২ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ২২ আশি^ন হতে ১২ কার্তিক ১৪২৯ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত মোট ২২ দিন প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখতে মা ইলিশ রক্ষা অভিযান ২০২২ চলমান রয়েছে। এ সময় সারাদেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীকে কমপক্ষে ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার আইনি বিধান রয়েছে। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা অধিকাংশ পেশাদার জেলে মানলেও কিছু অসাধু জেলে ও মৌসুমী জেলে না মেনে নদীতে নামছে ও ইলিশ মাছ ধরছে। এদের কেউ কেউ জেলা/উপজেলা টাস্কফোর্স টিম, কোস্ট গার্ড ও নৌপুলিশের হাতে ধরা পড়ছে এবং দণ্ডিত হচ্ছে, আবার কেউ কেউ নানা কৌশলে আইনের লোকদের চোখকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হচ্ছে। এই সক্ষম হওয়া জেলেরাই মতলব উত্তরে মেঘনার দু পাড়ে নিরাপদ স্থানে রীতিমত হাট বসিয়ে মা ইলিশ বিক্রি করছে, যার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
মা ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞার চতুর্থ দিনে মতলব উত্তর উপজেলা টাস্ক ফোর্সের একটি টিম মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়ে তিন জেলেকে এক লাখ মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট জালসহ আটক করে এবং ১২০ কেজি মা ইলিশ জব্দ করে। আটক জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে এবং জব্দকৃত মাছ দুঃস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে, আর জেলেদেরকে পাঁচ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া একইদিন চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনায় অভিযান চালিয়ে ৪টি নৌকা আটক ও ৪ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। একইদিন বিকেলে নৌ পুলিশ মেঘনায় অভিযান চালাতে গেলে সফরমালী বাজার এলাকায় জেলেদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। এতে নৌ পুলিশের নায়েক হাসান মিয়া ইটের আঘাতে গুরুতর আহত হলে চিকিৎসার্থে তাকে ঢাকায় প্রেরণ করতে হয়।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে উপরোক্ত তিনটি ঘটনায় প্রকাশিত সংবাদের পাশাপাশি মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সংক্রান্ত আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘বরফের অভাবে চাঁদপুর মাছ ঘাট ও হাট-বাজারে নষ্ট হচ্ছে চাষের মাছ ॥ কেনাবেচায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য খামারী ও ক্রেতা-বিক্রেতা’। এ সংবাদের সারাংশ হচ্ছে : মা ইলিশ রক্ষা অভিযান চলমান থাকায় স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে চাঁদপুরের সকল বরফ কল বন্ধ রয়েছে। এতে পুকুরসহ অন্যান্য জলাশয়ে চাষকৃত মাছ বরফ দিয়ে দীর্ঘ সময়ব্যাপী বিপণন করা যাচ্ছে না। ফলে এসব মাছ অবিক্রিত থাকলে বরফের অভাবে পচে যাচ্ছে। বিগত দিনে মা ইলিশ রক্ষা অভিযান চলাকালে একটি বরফ কল চালু থাকতো বলে চাষকৃত মাছসহ দেশীয় প্রজাতির মাছগুলো পচনের শিকার হতো না। এবারও একটি বরফ কল চালু রাখার জন্যে মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ী ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের নেতা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন।
একটি বরফ কল চালু রাখার দাবি জেলা প্রশাসক মানবেন কি মানবেন না সেটা নিয়ে কোনো কথা নয়। কথা হলো, এই বরফ কলে বরফ উৎপাদনের পরিমাণ এবং বরফ সরবরাহ/বিক্রির বিষয়টি কে মনিটরিং করবে? অতীতে দেখা গেছে, একটি বরফ কলে উৎপাদিত বরফই চাষকৃত মাছসহ অন্যান্য মাছ সংরক্ষণের প্রয়োজনে যেমন প্রকাশ্যে সরবরাহ তথা বিক্রি হয়েছে, তেমনি মা ইলিশ আহরণের কাজে নিয়োজিত অসাধু জেলেদের নিকটও গোপনে পৌঁছেছে। অতএব, সাধু সাবধান!