প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
‘নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’-এর আভিধানিক সরলার্থ হচ্ছে অকারণে অন্যের দায়িত্ব মাথায় নেয়া। কিন্তু এর মর্মার্থ হচ্ছে, নিঃস্বার্থভাবে অন্যের কল্যাণে কাজ করা। যারা এমনটি করেন তারা এমন নির্মল তৃপ্তি খোঁজেন, যা অন্য কিছুতে খুঁজে পান না। সমাজে হাতেগোণা এমন কিছু মহৎ লোক আছেন বলেই তাদের কাজগুলোকে প্রণোদনা আহরণে কিংবা সঞ্চারণে উপস্থাপন করা যায়। এখানে আজ উপস্থাপন করছি আমেরিকা প্রবাসী হাইমচরের শাহাদাৎ মিয়াজীর কথা, যিনি ২০১৭ সালে ‘হাইমচর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এ সংগঠনের সভাপতি এবং মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁরা স্বীয় ব্যবস্থাপনায় হাইমচর উপজেলার ৫ম, ৮ম, ১০ম ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে কৃতী শিক্ষার্থী নির্বাচিত করে তাদেরকে; পাশাপাশি পিইসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় বৃত্তিপ্রাপ্ত, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদেরকে আর্থিক অনুদান প্রদান, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও গুণীজনদের সংবর্ধনা জ্ঞাপন, অসহায়-দরিদ্র মানুষকে আর্থিক অনুদান প্রদান, মসজিদের উন্নয়নে সহায়তা প্রদান, মেঘনার চরাঞ্চলের ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৬৭ জন শিক্ষককে লাইফ জ্যাকেট প্রদান, করোনাকালে মুমূর্ষু রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে সেবা প্রদান ইত্যাদি জনকল্যাণমূলক কাজ করে সকল মহলে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন।
হাইমচর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন গত আগস্ট মাসের ২০ তারিখে হাইমচর সরকারি কলেজের ডিগ্রি ক্যাম্পাসে আয়োজন করে এক ব্যতিক্রম সভা। এ সভায় ঢাকা থেকে আগত বিশিষ্ট সাংবাদিকগণসহ স্থানীয় সুধীজন প্রতিবছরের ২০ আগস্টকে জাতীয়ভাবে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ সংগ্রাম দিবস ঘোষণার দাবি জানান। সভায় বক্তারা বলেন, হাইমচর উপজেলায় ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন রোধের জন্যে তৃণমূল থেকে গড়ে ওঠা স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি হিসেবে ১৯৮৮ সালের ২০ আগস্ট ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রায় ২০ হাজার লোক স্বতঃস্ফূর্তভাবে গণঅনশনে অংশ নেয়, যেটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। সেজন্যে এ দিনটিকে এ দেশের নদী ভাঙ্গন কবলিত সকল স্থানের মানুষের স্বার্থে ‘জাতীয় নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ সংগ্রাম দিবস’ ঘোষণার যৌক্তিকতা রয়েছে, যেটি অবিলম্বে সরকারের মেনে নেয়া উচিত।
হাইমচর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের মতো চাঁদপুর সদর ও মতলব উত্তরেও রয়েছে কিছু সংগঠন, যারা নিঃস্বার্থভাবে জনকল্যাণে কাজ করে চলছে। গতকাল দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদন থেকে জানা যায় শাহরাস্তির একটি সংগঠনের নাম, যেটি হচ্ছে ‘আলোকিত সাহাপুর’। এক ঝাঁক উদ্যমী তরুণের হাতে গড়ে ওঠা সংগঠনটি একটি গ্রামকে কেন্দ্র করে যে কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করছে, তা নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। বস্তুত এসব সংগঠন আছে বলেই আমরা অনেক হতাশা, অন্ধকার ও অনিয়মের মাঝে খুঁজে ফিরি আশার আলো। যে আলোতে আমরা এমন স্বপ্ন দেখি, যা আমাদের সত্যিই কখনও কখনও ঘুমোতে দেয় না।