শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

মুক্তিযোদ্ধার এমন অপমৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক

মুক্তিযোদ্ধার এমন অপমৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক
অনলাইন ডেস্ক

চাঁদপুর শহরে কিছু সম্ভ্রান্ত পরিবার রয়েছে। এমন একটি পরিবার হচ্ছে আলহাজ্ব হেদায়েতুল্লাহ বেপারী ওরফে হেদায়েতুল্লাহ কোম্পানির পরিবার। ইচলীতে জন্ম নেয়া হেদায়েতুল্লাহ সাহেব পাকিস্তান আমলে বিস্কুট ও লজেন্স ফ্যাক্টরীর মাধ্যমে ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করে পরবর্তীতে বহুবিধ ব্যবসায় পুঁজি বিনিয়োগ করেন। সেজন্যে লোকজন তাঁকে কোম্পানি বলে অভিহিত করলে তার বংশীয় পদবী বেপারী মুছে গিয়ে তাঁর নাম হয়ে যায় হেদায়েতুল্লাহ কোম্পানি। চাঁদপুর শহরের নূতনবাজারের পূর্ব পাশে লন্ডন ঘাট নামক স্থানে ডাকাতিয়ার তীরে অনেক বড় জায়গায় তিনি তাঁর কোম্পানির আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের প্রয়োজনীয় স্থাপনা ও কার্যালয় গড়ে তোলেন। এছাড়া নিজের বাসস্থান, মসজিদ, ডাকাতিয়ার তীরে ঘাটলা, পারিবারিক কবরস্থান ইত্যাদি গড়ে তোলেন। বিশেষ করে তাঁর ছোট মেয়ে সফিনার নামে আবাসিক হোটেলের ব্যবসা শুরু করেন, যেটি হোটেল সফিনা নামে চাঁদপুর শহরে অনেক বেশি পরিচিত। তিনি চাঁদপুর-কচুয়া রূটে প্রথম স্টিল বডির আধুনিক ‘মমিন বাস’ চালু করেন। তাঁর ষষ্ঠ পুত্র মমিনুল্লাহর নামে তিনি এই বাসের নামকরণ করেন।

হেদায়েতুল্লাহ কোম্পানির সাত ছেলে ও পাঁচ মেয়ে ছিলো। তন্মধ্যে ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে ইতোমধ্যে মারা গেছেন। সর্বশেষ গত শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২) বিকেলে অপমৃত্যুর শিকার হন তাঁর চতুর্থ পুত্র মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রফিকুল্লাহ বেপারী ওরফে রফিকুল্লাহ কোম্পানি। তাঁকে দুর্বৃত্তরা উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। হেদায়েতুল্লাহ কোম্পানির সাত ছেলের নাম হচ্ছে : শহীদুল্লাহ জাভেদ, নজিবুল্লাহ, সফিউল্লাহ, রফিকুল্লাহ, নাছিরুল্লাহ বাবুল, মমিনুল্লাহ ও আমিনুল্লাহ। পুত্রদের মধ্যে শহীদুল্লাহ জাভেদ ছিলেন করাচী ইউনিভার্সিটির মেধাবী ছাত্র, যিনি ১৯৬৯ সালে দেশে ফিরে গণঅভ্যুত্থানসহ স্বাধীনতা আন্দোলনের সকল কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং সবশেষে ১৯৭১ সালের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) তথা মুজিব বাহিনীর চাঁদপুর থানার কমান্ডার। তিনি চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের বাঘড়া বাজারের সন্নিকটে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে ১৩ অক্টোবর, ১৯৭১ তারিখে শাহাদাতবরণ করেন। তাঁর স্মৃতিরক্ষায় চাঁদপুর শহর থেকে ইচলী ঘাট অভিমুখী সাবেক বাগাদী রোডের একাংশকে শহীদ জাভেদ সড়ক নামকরণ করা হয় এবং এ সড়কের পাশে রহমতপুর আবাসিক এলাকার সামনে শহীদ জাভেদ পৌর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।

হেদায়েতুল্লাহ কোম্পানির প্রথম পুত্র মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়ে অমর হয়েছেন। আর তাঁর তৃতীয় পুত্র সফিউল্লাহ চাঁদপুর জেলায় স্কাউটিং কার্যক্রমের প্রসার ঘটিয়ে এবং দীর্ঘদিন জেলা স্কাউটের সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর আকস্মিক মৃত্যু হওয়ায় স্কাউট আন্দোলন কমণ্ডবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাঁর নামে জে.এম. সেনগুপ্ত রোড থেকে কদমতলা হয়ে হাজীগঞ্জ মহসিন রোডের সংযোগ রক্ষাকারী সড়কটির নাম সফিউল্যাহ সড়ক করা হয়েছে। চতুর্থ পুত্র হিসেবে রফিকুল্লাহ পিতার রেখে যাওয়া ব্যবসার হাল ধরে এবং বহুবিধ সামাজিক কাজকর্ম ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বড় দুভাইয়ের মতো চাঁদপুর শহরে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। পিতার নায় তাঁর নামের শেষে কোম্পানি শব্দটি জুড়ে দিয়ে লোকজন তাঁকে রফিকুল্লাহ কোম্পানি নামে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ডেকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। তিনি ছিলেন উদার ও দানশীল, সর্বোপরি মুক্তিযোদ্ধা। অথচ তিনিই ৬৭ বছর বয়সে দুুর্ভাগ্যজনকভাবে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান। এমন অপমৃত্যুতে চাঁদপুরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে শোকের ছায়া। আমরা তাঁর অপমৃত্যুর সাথে জড়িত দুর্বৃত্তদের অতি দ্রুত শনাক্ত ও আটক করে দেশের আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়