প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
গরু চুরিরোধে দরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ
গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টা থেকে ৪টার মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন বাগাদী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের নানুপুর গ্রামের বেপারী বাড়ি থেকে চারটি গরু চুরি হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি গরুর মালিক মোঃ ইসমাইল বেপারী এবং একটি গরুর মালিক মোঃ আব্দুস সাত্তার বেপারী। এ গরুগুলোর মূল্য প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। ইসমাইল বেপারীর চুরি হওয়া একটি দুধেল গাভী দৈনিক ৭ লিটার দুধ দিতো। এই দুধ বিক্রির টাকা তার জীবিকা নির্বাহে সহায়ক ছিলো।
|আরো খবর
সড়ক ও নৌযোগাযোগ সমৃদ্ধ চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গরু চুরির ঘটনা যেনো স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। চোরেরা এখন গরু চুরি করে হাঁটিয়ে নিয়ে যায় না। তারা গরু চুরিতে ব্যবহার করে গ্রামীণ সরু সড়কেও চলতে পারে এমন ছোট ট্রাক তথা পিকআপ এবং ডাবল ইঞ্জিন বিশিষ্ট নৌকা। চোরেরা গোয়াল ঘর থেকে গরুগুলো নিয়ে পিকআপ ও নৌকাতে উঠাতে পারলেই হলো, তারপর দ্রুত চম্পট দিতে সক্ষম হয়। কোন্ পথে গেলে পুলিশের কবলে পড়তে হবে না, সেটা গরু চোরেরা ভালো করেই জানে কিংবা তাদেরকে ‘নিরাপদ পথ’ সম্পর্কে জানিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নিয়োজিত কেউ না কেউ পালন করে। পুলিশের চোখ বা গোয়েন্দা জাল গরু চোরেরা ভালোভাবেই এড়িয়ে যায়, সেজন্যে গরু চোর ধরা পড়ে অনেক কম।
গত ৩-৪ বছরে চাঁদপুর জেলায় গরু চুরির প্রবণতা যে বেড়েছে, তা নিম্নোক্ত সংবাদ শিরোনামগুলোতে প্রমাণিত। যেমন--ফরিদগঞ্জে গরু চুরির উপদ্রব বেড়েছে, এক সপ্তাহে ৭ গরু চুরি (১৪/০১/২০১৯), হাজীগঞ্জে ১৫ দিনে ১৬ গরু চুরি : ঘরে ঘরে আতঙ্ক (১৮/২/২০১৮), ফরিদগঞ্জে একই ব্যক্তির দুটি গরু চুরি ॥ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি দিশেহারা (২৮/০৮/২০২২), ফরিদগঞ্জে গরু চুরির হিড়িক (২০/৯/২০২১), চাঁদপুরে গরু চোরের উপদ্রব বেড়েছে, আতঙ্কে খামারিরা (২৫/৮/২০২২), চাঁদপুরের চরাঞ্চলে গরু চুরির হিড়িক (৪/৮/২০১৮), ফরিদগঞ্জে গরু চুরি ॥ আতঙ্কে কৃষক-খামারিরা (২৫/৩/২০২২), চাঁদপুরে গরু চোর চক্রের মূল হোতা রাছেলসহ ৭ জন গ্রেফতার (১১/৮/২০২১), চাঁদপুরে গরু চুরির অভিযোগে বাবা-ছেলে গ্রেফতার (২৫/৫/২০২১), হাজীগঞ্জে ৪ গরু চোর আটক (৫/৭/২০২১), কচুয়ায় ৭ গরু চোর আটক (১০/৮/২০২১), কচুয়ায় ৭ গরু চোর আটক (১০/৮/২০২১), ফরিদগঞ্জে ৫ গরুসহ ২ চোর আটক (১২/১/২০২২)।
চাঁদপুর জেলায় গরু চুরির পাশাপাশি গরু চোর আটক ও গরু উদ্ধারের ঘটনাও আছে, যেটি দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় সন্তোষজনক, তবে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার মতো নয়। গত ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে সিলেট নিউজে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নে গরু চুরির উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় ইউএনও এবং থানার ওসি সমন্বিত ও সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়ে ২১টি গরু উদ্ধারে সক্ষম হন। চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গরু চুরিরোধে এমন সমন্বিত ও সর্বাত্মক উদ্যোগ প্রয়োজন বলে সুধীজন ও সচেতন মহল মনে করে।
চাঁদপুরে গরু চুরি রোধে উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার, গ্রাম পুলিশ এবং কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়াস ও চিরুনি অভিযান চালালে সিলেটের বিশ্বম্ভর উপজেলার ন্যায় সাফল্য খুঁজে পাওয়া কঠিন বিষয় নয়। পিকআপ ও ইঞ্জিনচালিত নৌকার ডাটাবেজ তৈরি করে এগুলোর চলাচল ও চালকদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করলে গরু চুরিতে এগুলোর ব্যবহার নিঃসন্দেহে হ্রাস পাবে বলে আমরা মনে করি। তিক্ত সত্য হলেও বলতে হয়, এমন ডাটাবেজ তৈরি করা কঠিন কাজ নয়, তবে এ সংক্রান্ত উদ্যোগ গ্রহণের গুরুত্ব উপলব্ধি বোধহয় তারচে’ কঠিন কাজ।