প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
কাণ্ডারীবিহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান!
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে চাঁদপুর জেলার ৩২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক পদও রয়েছে শূন্য-এমন একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং ও স্বেচ্ছাচারিতার জন্যে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না বলে উক্ত সংবাদের সূচনাতে লিখা হয়েছে, আর সংবাদের গর্ভে লিখা হয়েছে বিস্তারিত।
|আরো খবর
এ সংবাদ থেকে জানা যায়, হাইমচরের মোয়াজ্জেম হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এগারো বছর ও মতলবের ডিঙ্গাভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১২ বছর প্রধান শিক্ষক নেই। মতলব উত্তরের চরপাথালিয়া নূরুল হুদা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই ১৭ বছর। এ তিনটি বিদ্যালয়সহ বাকি ৩২টি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকরাই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বপালন করছেন। কথা হলো, এসব বিদ্যালয় কি খুব ভালো চলছে?
প্রধান শিক্ষকবিহীন যে কোনো বিদ্যালয় হচ্ছে কাণ্ডারী বা মাঝিবিহীন তরীর মতো। নানা ঝড়-ঝঞ্ঝা তথা প্রতিকূলতায় এ তরী হেলেদুলে ডুবে যাবার উপক্রম হয়। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের ক’জন জানান, প্রধান শিক্ষক ছাড়া একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালানো আসলেই কঠিন। তবে ম্যানেজিং কমিটির সদিচ্ছাতেই এসব জটিলতা নিরসন করা সম্ভব। কিন্তু অধিকাংশ ম্যানেজিং কমিটি এমন সদিচ্ছা দেখায় না। চাঁদপুর মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও চাঁদপুর শহরস্থ গণি মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্বাস উদ্দিনের মতে, একজন সহকারী শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বপালন করতে গিয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ সব কিছুর তদারকি করা কঠিন। তারা সাহস করে অনেক কাজই করতে পারেন না। অনেক ক্ষেত্রে চেইন অব কমান্ডও রক্ষা হয় না।
এই শিক্ষক নেতার এমন অভিমতই সঠিক। চাঁদপুরে অনেক বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় যেমন প্রধান শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে, তেমনি সরকারি বিদ্যালয়গুলোও ধুঁকেছে ও ধুঁকছে। প্রধান শিক্ষকবিহীন বিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখার মান কিছু দক্ষ-অভিজ্ঞ শিক্ষকের কারণে কম-বেশি ধরে রাখা সম্ভব হলেও প্রশাসনিক কাঠামো বহুলাংশে ধরে রাখা যায় না এবং বিদ্যালয়ের সম্পদ, সুনাম-সুখ্যাতি রক্ষাও সঠিকভাবে হয় না।
লক্ষ্য করা গেছে, একজন দক্ষ-অভিজ্ঞ-খ্যাতিমান প্রধান শিক্ষকের কারণে যে বিদ্যালয়টি একটি উপজেলা/জেলায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় বলে সুখ্যাতি পেয়ে থাকে, এমন প্রধান শিক্ষকের বিদায়ে নবনিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের পক্ষেও অনেক ক্ষেত্রে সেই সুখ্যাতি রক্ষা সম্ভব হয় না। এমন বাস্তবতায় যদি কোনো বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষককেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বপালন করতে হয়, আবার সেটা বছরের পর বছর, তাহলে সে বিদ্যালয়টির সুপরিচিতি/সুখ্যাতির অবনমন কোন্ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে সেটা অনুমান করতে বা স্বচক্ষে দেখতে কারো কষ্ট পেতে হয় না। সেজন্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ যতো দ্রুত সম্ভব পূরণ করার জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ/ম্যানেজিং কমিটির আন্তরিক ভূমিকা নিশ্চিত করা জরুরি।