প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
মানবাধিকারের নামে এসব কী?
চাঁদপুর কণ্ঠসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে কিছু লোক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রায় সবসময়ই যোগাযোগ করে বলেন, আমি/আমরা রিপোর্টার হতে চাই। সমাজে যা অনিয়ম, অধিকার বঞ্চিত মানুষের প্রতি যে লাঞ্ছনা, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকা রাখতে ক্রাইম রিপোর্টিং করতে চাই। এমন আগ্রহে অন্যান্য গণমাধ্যমের কর্তাব্যক্তিদের প্রতিক্রিয়া কী থাকে সেটা লিখার অবকাশ না থাকলেও সততার সাথে চাঁদপুর কণ্ঠের পক্ষে এটা বলতে পারি, রিপোর্টিংয়ের শুরুতেই ক্রাইম রিপোর্টার হতে আগ্রহীদের আমরা ধন্যবাদ জানিয়ে বলি, আমাদের পত্রিকায় পদ খালি নেই, আপনি অন্যত্র চেষ্টা করুন। চাঁদপুর কণ্ঠের পর্যবেক্ষণে এটা ধরা পড়েছে যে, রিপোর্টিংয়ে ভালো অভিজ্ঞতা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়া যারা ক্রাইম রিপোর্টিং করতে যান, তাদের অধিকাংশই নিজেরা লোভ-লালসা, প্রলোভনসহ নানা ক্রাইম তথা অপরাধে নিজেকেই জড়িয়ে ফেলেন। এমন লোকদের অনেকেই তখন নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় খোঁজেন কিংবা কোনো সংগঠনের ছাতার নিচে দাঁড়ানোর উপায় খোঁজেন। এমন খোঁজাখুঁজির সময় তারা মানবাধিকার ও ক্রাইম রিপোর্টিং সংক্রান্ত কোনো সংগঠনে নিজের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার প্রয়াস চালান এবং সফল হন। তারপর এমন রিপোর্টার কী করেন এবং উপরোক্ত সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরা কী করেন সেটা নিয়ে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মির্জা জাকির একটি সংবাদ পরিবেশন করেছেন। সংবাদটি চাঁদপুর কণ্ঠের শীর্ষ সংবাদ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে, যার শিরোনামটি এমন ‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার সংগঠনের ছড়াছড়ি ॥ নামে আছে কাজে নেই’।
|আরো খবর
সংবাদটির সূচনাতে লিখা হয়েছে, চাঁদপুরে প্রায় তিন ডজন নামসর্বস্ব মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের শাখা রয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে ঝুলে আছে যাদের সাইনবোর্ড। আবার কিছু মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে প্যাড সর্বস্ব। শুধু তা-ই নয়, অনেক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় নেই, নেই কোনো কার্যক্রম। অনেকেই এসব নাম ব্যবহার করছে পদণ্ডপদবীর আশায়। আবার কোথাও কোথাও মানবাধিকার সংগঠনের নামে পরিচালনা করা হয় দেনদরবার বা সালিস। সালিস-দরবারের নামে বাণিজ্যের অভিযোগও আছে কোনো কোনো মানবাধিকার সংগঠনের বিরুদ্ধে।
মির্জা জাকির তার উক্ত সংবাদটিতে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নাম, এগুলোর কর্তাব্যক্তিদের কার্যক্রম সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। যাতে মানবাধিকারের নামে অন্য উদ্দেশ্য সাধনের চিত্রই প্রধানত ফুটে উঠেছে, দৃষ্টান্তমূলক কিছু ফুটে উঠেনি। এটা দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। মানবাধিকারের নামধারী সংগঠনের লোকজন দ্বারা নিরীহ মানুষ প্রতারিত ও হয়রানি হবার দৃশ্যপটের নমুনা শুধু চাঁদপুরে নয়, বস্তুত সারাদেশেই বিদ্যমান। কিন্তু সেটা নিয়ন্ত্রণ করার নমুনা কোনো মহল থেকেই দেখা যাচ্ছে না। এর কারণ কী?
বলা দরকার, মানবাধিকার হচ্ছে বিমূর্ত বাস্তবতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাতিসংঘ দেশে দেশে লঙ্ঘিত মানবাধিকার রক্ষার তাগিদ অনুভব করে এবং সেমতে ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর তাদের সাধারণ অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে ‘মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা’ পাস করে, যেটি সকলের জন্যে পালনীয় বলে স্বীকৃত হয়। সেজন্যে ১০ ডিসেম্বরকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালিত হয়। ১৯৭৭ সালের এইদিনে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কোনো মানবাধিকার সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করে, যার নাম বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। চাঁদপুরসহ সমগ্র বাংলাদেশেই এই সংস্থার শাখা চালু হয়, যারা মানবাধিকার রক্ষার অসংখ্য দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। এ সংগঠনটির ধারে-কাছেও ভুঁইফোড় মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাদের দৃষ্টান্তমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে পৌঁছতে পারেনি। তবে ধান্ধাবাজি, চাঁদাবাজি, মানুষকে ভয় দেখানো, পক্ষপাতমূলক সালিসসহ আরো অনেক কিছুরই বাজে দৃষ্টান্ত এমন সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরা সম্পাদন করতে সক্ষম হচ্ছেন বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা অতীব জরুরি।