শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক

৫-৬ দিন আগে চাঁদপুর শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘অঙ্গীকারে’র সামনে হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একটি সংগঠন ব্যানার সাঁটিয়ে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে কিছু গাছের চারা লাগায়। এই চারাগুলো ছোট কোনো চারা নয়, মানুষের উচ্চতার সমান বড় চারা। এমন চারার প্রতিটির মূল্য একশ’ টাকার নিচে হবে না। চারাগুলো রোপণ করে প্রতিটি একটি লাঠির সাথে বেঁধে দেয়া হয়। চারাগুলোকে রক্ষা করতে কোনো খাঁচা ব্যবহার করেনি বৃক্ষরোপণের আয়োজকরা। ফলে ৩-৪ দিনের মধ্যে পানির অভাবে চারাগুলো হয় মরে গেছে, গরুর পেটে গেছে কিংবা অবিবেচক মানুষ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন একটি চারার চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

চাঁদপুরের সদ্য সাবেক জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পূর্ব থেকে মিশন রোডের মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত রেলওয়ে লেকের দক্ষিণ পাড়ে কৃষচূড়া গাছের চারা লাগানোর জন্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ জানান। এ অনুরোধ রক্ষা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারা খাঁচাসহ চারাগুলো লাগায়। পরিচর্যার অভাবে ২-৪টি চারা ছাড়া বাকি চারাগুলো মাথা উঁচু করে খাঁচার বেষ্টনী ভেদ করতে পারেনি। আমাদের দেশে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা গাছের চারা লাগানোর তথা বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচি পালনকালে ছবি তুলতে পারলেই অর্থাৎ ফটোসেশন সম্পন্ন হলেই আয়োজকরা তৃপ্তিবোধ করে। এ ছবি গণমাধ্যমে সংবাদ আকারে আসলে তো কথাই নেই, আয়োজকদের তৃপ্তিবোধের ষোল আনাই পূর্ণ হয়। বিক্ষিপ্তভাবে এমন বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে ফটো সেশন ও প্রচার ছাড়া আর কোনো কাজ হয় বলে মনে হয় না। আমরা মনে করি, পরিচর্যার ব্যবস্থা ছাড়া এমন বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে গাছের চারা ক্রয়ে ব্যয়িত অর্থ নিছক অপচয়ই হয়। এ অপচয় রোধে বন বিভাগসহ সরকারের অন্য কোনো বিভাগ নির্দেশনা জারির বিষয়টিকে আদৌ মাথায় আনছে বলে মনে হচ্ছে না।

বন বিভাগ বিক্ষিপ্তভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিকে বনায়নের জন্যে পুরোপুরি অনুকূল ভাবে বলে মনে হয় না। তারা সত্যিকারের বনায়নের জন্যে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচিতে বেশি গুরুত্বারোপ করছে বলে মনে হচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা প্রদত্ত সামাজিক বনায়নের সংজ্ঞা হচ্ছে, বনায়ন কার্যক্রমে জনগণকে সরাসরি সম্পৃক্তকরণের যে কোনো পরিস্থিতি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থ সাহায্যে গৃহীত গোষ্ঠী বনায়ন প্রকল্প থেকেই মূলত সামাজিক বনায়নের কর্মসূচি শুরু। ভূমিহীন, দরিদ্র, বিধবা ও দুর্দশাগ্রস্ত গ্রামীণ জনগণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করাই সামাজিক বনায়নের প্রধান লক্ষ্য। সামাজিক বনায়নের মূল উদ্দেশ্য হলো, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের স্বনির্ভর হতে সহায়তা করা এবং তাদের খাদ্য, পশু খাদ্য, জ্বালানি, আসবাবপত্র ও মূলধনের চাহিদা পূরণ করা। আমাদের দেশে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির অনেক সফলতা আছে।

সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি সর্বত্র বাস্তবায়নের সুযোগ নেই। তবে এ কর্মসূচিতে জনসম্পৃক্ততার যে সুন্দর দিকটি রয়েছে সেটি বিক্ষিপ্তভাবে সম্পাদিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির প্রাক্কালে আয়োজকদের মাথায় রাখা দরকার। যেখানে গাছের চারা লাগানো হচ্ছে, সেখানকার কর্তৃপক্ষ বা লোকজনকে রোপিত চারাগুলোর পরিচর্যায় সম্পৃক্ত করাতে পারলে এবং এ বাবদ ন্যূনতম প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে পারলে এমন বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সংক্রান্ত সফলতার দৃষ্টান্তও রয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের বন বিভাগকে নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদানের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় বিক্ষিপ্ত উদ্যোগের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিগুলো ফটো সেশনের বদনাম থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে বলে আমরা মনে করি না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়