প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুরের সামগ্রিক উন্নয়নে মন্ত্রী-এমপিসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও আমলাদের অবদান তো সবচে’ বেশি-এটা অস্বীকার করার জো নেই। তারপরে সমাজসেবা ও সমাজ উন্নয়নে অরাজনৈতিক ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চিকিৎসকের অবদান রয়েছে। এক্ষেত্রে পথিকৃৎ হিসেবে চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডাঃ নুরুর রহমান এবং চাঁদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল ও মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ডাঃ এম.এ.গফুরের অনুসারী হিসেবে ডাঃ মোঃ এ. কিউ. রুহুল আমিন ও ডাঃ এস. এম. সহিদ উল্যার পরে সাম্প্রতিক সময়ে যে নামটি বেশি উচ্চারিত হচ্ছে, সেটি হচ্ছে ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী। উল্লেখিত পাঁচজন চিকিৎসকই বিশ্বের সর্ববৃহৎ সেবামূলক সংগঠন রোটারী ইন্টারন্যাশনালের সাথে সংশ্লিষ্টতা বজায় রেখে ‘সেবা স্বার্থের ঊর্ধ্বে’ এ মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে কাজ করেছেন ও করছেন। এঁদের মধ্যে প্রথমোক্ত তিনজন প্রয়াত। চতুর্থজন ষাটোর্ধ্ব এবং পঞ্চমজন সত্তরোর্ধ্ব ও নারী।
আমাদের দেশে নারীদের নানা ক্ষেত্রেই প্রতিকূলতা থাকে। এই প্রতিকূলতা জয় করে শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে অদম্য মানসিকতার বিকল্প নেই। এমনই একজন অদম্য নারী হচ্ছেন ডাঃ সৈয়দা বদরুননাহার চৌধুরী। পৈত্রিক নিবাস ময়মনসিংহের নেত্রকোণায় হলেও পিতার সরকারি চাকুরির কারণে চাঁদপুরেই তাঁর বেড়ে ওঠা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন কাটিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়াকালীন চাঁদপুরের ছেলে, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট তাফাজ্জল হায়দার নসু চৌধুরীর সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হওয়াই শুধু নয়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণটাও তাঁর চাঁদপুর জেলা ও সন্নিহিত অঞ্চলেই। তিনি স্বাধীনতোত্তর সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করে নির্দিষ্ট সময়ান্তরে দেশের প্রথম নারী সিভিল সার্জন হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। তারপর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকে পদোন্নতি পেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক পদে আসীন হন এবং ২০০৭ সালের ২৪ জানুয়ারি এ পদ থেকে সুনামের সাথে অবসরগ্রহণ করেন। চাকুরির পাশাপাশি তিনি একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে চাঁদপুর জেলায় প্রভূত সুনাম অর্জন করেন এবং সত্তরোর্ধ্ব বয়সে এখনও চাঁদপুর শহরের স্টেডিয়াম রোডস্থ চেম্বারে নিয়মিত রোগী দেখেন, এমনকি বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে অস্ত্রোপচারও করেন। একই সাথে চলে তাঁর বহুবিধ সমাজকর্ম। তিনি মুক্তিযোদ্ধা বলেই দেশপ্রেমের মৌল চেতনায় অনেক বেশি ঋদ্ধ। সেজন্যে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে তিনি সর্বদাই নিরলস।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের ও নির্যাতিত নারীদের চিকিৎসায় এবং সাধারণ মানুষের সেবায় অনন্য অবদানের জন্যে সরকার ২০১২ সালে ডাঃ সৈয়দা বদরুননাহার চৌধুরীকে সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে। তারপর থেকে তিনি সাধারণ মানুষের কল্যাণে নানাভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে পূর্বের চেয়েও বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে চলছেন। ডাঃ সৈয়দা বদরুননাহার প্রতি বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে শাহাদাতবরণের ঘটনার জন্যে শোকের মাস হিসেবে অভিহিত আগস্ট মাস শুরু হলেই বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা শুরু করেন এবং একটানা ১৫ আগস্ট পর্যন্ত চালিয়ে যান। এ বছর তিনি পুরো আগস্ট মাস জুড়েই কেবল এমন চিকিৎসা সেবা দেননি, এমনকি সেপ্টেম্বর মাসের ২ তারিখেও এমন সেবা দেন এবং ওইদিন আন্তর্জাতিক নারী সংগঠন চাঁদপুর সেন্ট্রাল ইনার হুইল ক্লাবের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে গিয়ে ঘোষণা দেন যে, গরিব রোগীদের জন্যে বিনা ফিতে তাঁর চিকিৎসা সেবা সবসময়ই অব্যাহত থাকবে। নিঃসন্দেহে তাঁর এই চিকিৎসাসেবা দৃষ্টান্তযোগ্য ও অনুকরণীয়। আমরা তাঁর সুস্থতাসহ সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ কামনা করছি।