প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কিছু এলাকার মানুষ ভীষণ অসহিষ্ণু। যে কোনো তুচ্ছ ঘটনায় দুপক্ষ মারামারিতে লিপ্ত হয় এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে। গণমাধ্যমের খবরই যার প্রমাণ। এমন ক’টি খবরের শিরোনাম হচ্ছে : ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মসজিদের টাকা নিয়ে মারামারি, নিহত ১ (৭ জুলাই ২০২২, ঢাকা মেইল), ‘দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে সরাইলে আহত ১০’ (২৩ জানুয়ারি ২০২২, যুগান্তর), ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হাঁস ও ডিম নিয়ে মারামারি, আহত ৬’ (৬ জুলাই ২০২১, যমুনা টেলিভিশন), ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাটে গরু রাখার জায়গা নিয়ে মারামারি, নিহত ১’ (১৭ জুলাই ২০২১, যমুনা টেলিভিশন), ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিয়েতে দই খাওয়াকে কেন্দ্র করে মারামারি, কনের বাবাকে হত্যা’ (৮ অক্টোবর ২০২১, বিডিটুয়েন্টিফোর লাইভ.কম), ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধানের আঁটি নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩০’ (২৬ এপ্রিল ২০২২, নয়াদিগন্ত), ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সুদের টাকা নিয়ে মারামারি, আহত ৫’ (৭ জুলাই ২০২১, ঢাকা পোস্ট), ‘ধারের টাকা ফেরত চাওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ গ্রামের ২ পক্ষের মারামারি, আহত ১৫’ (১৮ এপ্রিল ২০২২, ডেইলি স্টার), ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২ মাসে ২৫ মারামারি, নিহত ২, আহত দেড়শ’ (৬ এপ্রিল, ২০২০, যমুনা টেলিভিশন), ‘মেয়ের বিয়ে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মারামারি, আহত ১২’ (৪ এপ্রিল ২০২২, সময় টেলিভিশন) ইত্যাদি। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর ‘আজকের পত্রিকা’য় প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম ছিলো ‘তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সংঘর্ষ, বছর জুড়েই আলোচনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া’। এ সংবাদে সংঘর্ষের অনেক কারণই উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাস্যকর হচ্ছে : ঘর জামাই ডাকা নিয়ে সংঘর্ষ, ফেসবুকে পোস্ট নিয়ে সংঘর্ষ, চুলার ধোঁয়া নিয়ে সংঘর্ষ ও দরুদ পড়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারের ঘনবসতিপূর্ণ কিছু এলাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মতোই তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সংঘর্ষ, হামলা ও হতাহতের খবর স্থানীয় পত্রিকার পাঠকদের কাছে সাধারণ খবর বলেই বিবেচিত হচ্ছে। পুলিশ সুপার হিসেবে শামসুন্নাহার এমন ঘটনায় অনেক বেশি বাজে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন এবং টেকসই সমাধানের পথ খুঁজে বের করার আন্তরিক প্রয়াস চালান। তারপরের পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির ও মাহবুবুর রহমান তেমন বাজে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হননি। আর বর্তমান পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ তো এমন অভিজ্ঞতা ছাড়াই বেশ ভালোই সময় পার করছিলেন। কিন্তু না, গত শুক্রবার তাঁকেও পুরাণবাজারের মারামারি সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হলো।
চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ২৬ আগস্ট (শুক্রবার) পুরাণবাজারস্থ মধুসূদন হাই স্কুল মাঠে একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলায় রেফারির সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে সুইপার কলোনী সংলগ্ন নতুন রাস্তায় সংঘাতে জড়ায় দুটি পক্ষ। তারা বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ও কাচের বোতল নিক্ষেপসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে ২০ জনের অধিক আহত হয় এবং বেশ কিছু দোকান ভাংচুর হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল পর্যন্ত নিক্ষেপ করতে হয়। পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উক্ত ফুটবল টুর্নামেন্ট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
আমরা অতীতে দেখেছি, পুরাণবাজারে সংঘটিত সংঘর্ষগুলোর ছাইচাপা রেশ সময়ান্তরে নানা ছলছুতোয় বিস্ফোরিত হয়। সেজন্যে শুক্রবার সংঘটিত সংঘর্ষের কারণ নিয়ে আলোচনা এবং পক্ষ বিপক্ষকে সমঝোতায় বসানোর উদ্যোগ নেয়াটা বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি। এক্ষেত্রে আইনগত সমাধানের চেয়ে সামাজিক সমাধানটা অধিক কার্যকর হতে পারে বলে আমাদের ধারণা। এজন্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে পৌর কাউন্সিলর, কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিং নেতৃবৃন্দসহ সুধীজনকে নিয়ে পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বৈঠকে বসলে কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে পারেন বলে আমাদের বিশ্বাস।