প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুরে কর্মরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রেফায়েত জামিল বলেছেন, আমি নিজে সরেজমিনে গিয়ে হাজরা গ্রামে ডাকাতিয়া নদীর ভাঙ্গনরোধের কাজ তদারকি করেছি। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। যে পরিমাণ বরাদ্দ এসেছে, সে পরিমাণ কাজ করানো হয়েছে। কিন্তু চাঁদপুর কণ্ঠের শেষ পৃষ্ঠায় বৃহস্পতিবার সোহাঈদ খান জিয়া ‘হাজরা গ্রাম রক্ষার কাজে অনিয়ম’ শিরোনামে যে সচিত্র সংবাদ পরিবেশন করেছেন, তাতে উক্ত নির্বাহী প্রকৌশলীর বক্তব্যের সঠিকতা প্রমাণিত হচ্ছে না।
সংবাদটিতে জিয়া লিখেছেন, চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে অবস্থিত হাজরা গ্রাম। বেশ ক’বছর ধরে ডাকাতিয়া নদী গ্রামটিকে গ্রাস করে চলেছে। ডাকাতিয়ার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে এই গ্রামের বহু মানুষ ভিটেমাটি ও আবাদী জমি হারিয়েছে। ভাঙ্গন রোধকল্পে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে বহু লেখালেখি ও বিভিন্ন স্থানে আবেদন করার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের টনক নড়ে এবং তারা হাজরা গ্রামটি রক্ষায় প্রকল্প গ্রহণ করে। কিন্তু প্রকল্পের ঠিকাদার কাজে অনিয়ম করছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগগুলো উদ্ধৃত করার আগে রিপোর্টার সরেজমিনে গিয়ে যে ছবি তুলে তার উপরোক্ত সংবাদের সাথে জুড়ে দিয়েছেন, সেটি দেখে পাঠকমাত্রই বিরূপ মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। ছবিতে ভাঙ্গনস্থলে যে ক’টি বালুভর্তি বস্তার অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়, তাতে এমন বালুর বস্তা ফেলার কাজকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পভুক্ত কাজ বলে কাউকে ধারণা দিতে ঠিকাদার বা তার লোকজনকে কোনো ধর্মগ্রন্থে হাত দেওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। কারণ, খরস্রোতা ডাকাতিয়ার ভাঙ্গনরোধে এতো স্বল্প সংখ্যক বালুর বস্তা ফেলাটা কোনোভাবে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ মুনসুর খান বলেন, কাজের অনিয়মের বিষয়ে এলাকার লোকজন আমাকে জানিয়েছেন। আমি ভাঙ্গনস্থলে গিয়ে দেখেছি, দক্ষিণ পাশে তেমন বালুর বস্তা নেই। জানা যায়, সরকার দলীয় লোক হাজরা গ্রামে ভাঙ্গনরোধের কাজটি করার কারণে অসহায় নিরীহ মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না। যার ফলে ঠিকাদার মনমতো অনিয়মের আশ্রয়ে কাজ শেষ না করে চলে যান। এ নিয়ে হাজরা গ্রামে কানাঘুষা শোনা গেলেও কেউ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ কোথাও দেয়ার সাহস পায় না।
অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষকদের অভিমত হচ্ছে, কোথাও নদীভাঙ্গন রোধের কাজ হলে অনেক শ্রমিক বালুর বস্তা ফেলবে, অনেক মানুষ সেটা দেখবে, জানবে। কিন্তু হাজরা গ্রামে ভাঙ্গনরোধের কাজ হচ্ছে নীরবে নিভৃতে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঠিকাদার ভাঙ্গনগ্রস্ত তীরের উপরে কিছু বালুর বস্তা রেখে দেন, যেখান থেকে স্থানীয় খোকন মিজি ও মানিক মিজি ভাঙ্গনের তীব্রতা দেখলে ২-৪ টি ফেলে দেন। বালুর বস্তার এমন অপর্যাপ্ততায় কার্যত ভাঙ্গনরোধ যে হচ্ছে না সেটা চাঁদপুর কণ্ঠের রিপোর্টার সরেজমিনে গিয়ে দেখে এসেছেন। ঠিকাদারের নিয়োজিত দুজন লোক নামমাত্র যে বালুর বস্তা ফেলেছেন, তাতে ভাঙ্গনরোধ হচ্ছে না। অগত্যা আতঙ্কগ্রস্ত লোকজন ভাঙ্গনরোধে একটি তালগাছ বেঁধে রেখেছেন।
নিরেট বাস্তবতায় স্বাভাবিকভাবে আমরা প্রশ্ন তুলতে চাই, আসলে পানি উন্নয়ন বোর্ড হাজরা গ্রামকে ডাকাতিয়ার ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় কাজের নামে প্রহসন করছে, লোকদেখানো কাজ করছে, না কোনো ঠিকাদারের স্বার্থরক্ষার্থে তার কাজের বিলটি পাওয়ার জন্যে কাজ করছে। এ প্রশ্নের উত্তর জানাটা কর্তৃপক্ষীয় স্বচ্ছতার জন্যে বিশেষ প্রয়োজন। পানি উন্নয়ন বোর্ড উক্ত ভাঙ্গনরোধে বরাদ্দকৃত অর্থ এবং সে অনুযায়ী ঠিকাদার কী কাজ করতেই হবে সেটা কি কোনো বিলবোর্ডে উল্লেখ করে হাজরা গ্রামের কোথাও লাগিয়েছে কিংবা প্রকল্পটি সম্পর্কে জানান দিতে কোনো অবহিতকরণ সভা করেছে? যদি না করে থাকে, তাহলে এর নেতিবাচকতা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকাটা অমূলক নয়। আমরা সে আলোকে তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশুদৃষ্টি কামনা করছি।