প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
নৌ পুলিশের সাহসিকতা ও প্রত্যাশা
নৌ পুলিশ হচ্ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নদী পথে পুলিশিং করার জন্যে দায়বদ্ধ বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট। একজন অ্যাডিশনাল আইজিপি (অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক)-এর অধীনে এ ইউনিটটি পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৭২ সাল থেকে নৌ পুলিশের অস্তিত্ব থাকলেও পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা লাভ করে ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর। ৭৪৭ জন কর্মী নিয়ে এর যাত্রা শুরু। নৌ পুলিশের অঞ্চলগুলোর মধ্যে চাঁদপুর অঞ্চল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নৌ পুলিশ প্রতিষ্ঠার পর স্বল্পদিনের ব্যবধানে এ অঞ্চলটির কার্যক্রম শুরু হয় চাঁদপুর শহরের ভাড়া করা ভবনে। প্রথমাবস্থায় যারা এ অঞ্চলে পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ অন্যান্য পদে বদলি হয়ে আসেন, তাদের তৎপরতা খুব একটা চোখে পড়ত না। হয়তো কোনো সীমাবদ্ধতা ও সঙ্কটের কারণে তেমনটি ছিলো। কিন্তু চাঁদপুর অঞ্চলের নৌ পুলিশ সুপার পদে মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের যোগদানের পর নানা কার্যক্রমে অঞ্চলটির সক্রিয়তা প্রমাণিত হচ্ছে বার বার। প্রায়শই গণমাধ্যমে অনেক বড় সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে চাঁদপুর অঞ্চলের নৌ পুলিশ।
|আরো খবর
শুক্র ও শনিবার দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে নৌপুলিশের তৎপরতা নিয়ে ব্যাপকভাবে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। গতকাল শনিবার চাঁদপুর কণ্ঠে ব্যানার হেডিংয়ে ছাপা হয়েছে যে শীর্ষ সংবাদ, তার হেডিং হচ্ছে ‘পদ্মা নদীতে নৌ-পুলিশের দুঃসাহসিক অভিযান : স্পীড বোট গুলি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৫ ডাকাত গ্রেফতার’। অভিযানটি ছিলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নৌ পুলিশের উল্লেখযোগ্য বড় সাফল্য। সেজন্যে শুক্রবার (১২ আগস্ট ২০২২) সকালে প্রেস ব্রিফিং করে এ সাফল্যের কথা জানান দেন নৌ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মা নদীতে স্পীডবোট যোগে ১২-১৩ জন ডাকাত ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরে আমার নেতৃত্বে অতিরিক্ত নৌ পুলিশ সুপার মোঃ বেলায়েত হোসেন শিকদার, এসআই জহিরুল হক ও শহিদুল ইসলামসহ সঙ্গীয় ফোস অভিযানে নামে। আমরা ডাকাতদের ধাওয়া করলে তারা আমাদেরকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এমতাবস্থায় আমরা আত্মরক্ষার্থে শর্টগান হতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ি। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ডাকাত দল পদ্মা নদীর মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার গাঁওদিয়া বাজার সংলগ্ন নদীর পাড়ে তাদের স্পীডবোটটি রেখে লাফিয়ে তীরে নামে এবং দৌড়ে পাটক্ষেতে গিয়ে আত্মগোপন করে। তাৎক্ষণিক স্থানীয় মাঝিরঘাট নৌ পুলিশ সদস্যরাও আমাদের সাথে অংশ নেয়। আমরা শুক্রবার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত বিরামহীন তল্লাশি চালিয়ে পাঁচ ডাকাত আটক ও তাদের ব্যবহৃত স্পীড বোট, দুটি পাইপগান, সাতটি কার্তুজ, আটটি রামদা, একটি দেশীয় দা, একটি স্ক্রু ড্রাইভার, দুটি শাবল ও বিভিন্ন মডেলের ২০টি মোবাইল সেট জব্দ করি। আটক ডাকাতদের মধ্যে ২ জন একাধিক মামলার আসামী। বাকি ডাকাতদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নিঃসন্দেহে এ অভিযানটি নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের অনেক বড় অভিযান, যেটি সাহসিকতার পরিচায়ক। নৌপথকে নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে নৌ পুলিশের কাছে নৌ পথ ব্যবহারকারী সকলে এমন সাহসিকতাই প্রত্যাশা করে। নৌপথ চোরাচালানিদের যাবতীয় তৎপরতামুক্ত থাকুক-এমন প্রত্যাশাও নৌ পুলিশের প্রতি রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডাকাতিয়া ও মেঘনা নদী দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে কুমিল্লা সংলগ্ন দীর্ঘ সীমান্ত পথে অবৈধভাবে ভারত থেকে আসা গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকের বড় চালান পাচার হচ্ছে বলে পুলিশ ও র্যাবের পর্যবেক্ষণ ও গোয়েন্দা জালে ধরা পড়েছে। এমতাবস্থায় এ দুটি নদীতে নৌ পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারি, নিয়মিত তল্লাশিসহ প্রয়োজনীয় আভিযানিক তৎপরতা প্রত্যাশা করাটা বেশি কিছু নয় বলে আমরা মনে করি।