প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
১৯৭৫ সালের ১৫আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে শাহাদাতবরণের পর আওয়ামী লীগ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সাথে সংশ্লিষ্টরা সুখে ছিলেন না। দুর্দিনের মধ্যেই কাটছিলো তাদের সময়। সে দুর্দিনেই জেলা (তৎকালীন মহকুমা ও পরবর্তীতে জেলা) ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বপালন করেন খালিছুর রহমান জাকির। তিনি বার বার চাঁদপুর কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি প্রার্থী হয়ে দলকে চাঙ্গা রাখেন এবং তৃণমূল পর্যায়ে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করেন। ছাত্রলীগ ছেড়ে তিনি আওয়ামী লীগের রাজীনিতে সক্রিয় হন এবং অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তাঁর নিত্য উপস্থিতি দ্বারা আওয়ামী লীগ কার্যালয়কে চাঙ্গা রাখতেন এবং গণমাধ্যমে স্বহস্তে লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দলীয় কর্মকাণ্ডের খবর পরিবেশন করতেন। তিনি চাঁদপুর পৌরসভার কমিশনার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন। তিনি দুঃখজনকভাবে সেনাবাহিনী দ্বারা নির্যাতিত হন, তবুও দলীয় তথা বঙ্গবন্ধুর আদর্শচ্যুত হননি। আজ থেকে ২৩ বছর আগে ১৯৯৯ সালের ১২ আগস্ট তিনি অকাল মৃত্যুর শিকার হন। তারপর তিনি ক্রমশ বিস্মৃতির আড়ালে হারিয়ে যেতে থাকেন।
খালিছুর রহমান জাকিরের চেয়েও আরো অনেক ত্যাগী ও বিখ্যাত আওয়ামী লীগ নেতা মৃত্যুজনিত কারণে বিস্মৃতির আঁধারে হারিয়ে যাচ্ছেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন সাবেক এমপি আঃ রব, অ্যাডঃ আবু জাফর মাঈনুদ্দিন, সফিউল্যা প্রমুখ। এঁদেরকে পারিবারিকভাবে তাঁদের মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণ করা হলেও দলীয়ভাবে স্মরণ করা হয় না। একই অবস্থা বিএনপি ও জাতীয় পর্টির অনেক মরহুম নেতারও। কিছুদিন আগে বিএনপির সাবেক জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ মুতিউর রহমানের মুত্যুবার্ষিকী ছিলো। কিন্তু কেউ তাঁকে স্মরণ করেনি। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে খান দেলোয়ার হোসেন অকুতোভয় সৈনিকের মতো দায়িত্ব পালন করলেও তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে দলীয়ভাবে স্মরণ করা হয় না। চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের দু মেয়াদের সাবেক চেয়ারম্যান আঃ কাদের মাস্টার এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি ও চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হক বাচ্চু মিয়াজী এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হবার পর চরম দুর্দিনে জেলা জাতীয় পাির্টকে নেতৃত্ব দিলেও তাঁদের মৃত্যুবার্ষিকীতেও তাঁদেরকে দলীয়ভাবে স্মরণ করার ফুরসত কারো হয় না।
এভাবে ত্যাগী নেতৃবৃন্দকে তাঁদের মৃত্যুবার্ষিকীতে দলীয়ভাবে স্মরণ না করাটা, তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা বা বিদেহী আত্মার শান্তি কামনার্থে ন্যূনতম কিছু না করাটা দুঃখজনক। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে ত্যাগী নেতৃবৃন্দের পরিবারের পক্ষে দলীয়ভাবে নেতৃবৃন্দকে স্মরণ না করা, তাঁদের স্মৃতিরক্ষার্থে কিছু না করায় প্রকাশিত ক্ষোভ, আক্ষেপ, দুঃখবোধ সম্পর্কে জানা যায়। এগুলো সাধারণ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ছড়াচ্ছে। এই নেতিবাচকতা এড়াতে প্রতিটি দলের শীর্ষপদে অধিষ্ঠিত বর্তমান নেতারা ত্যাগী খ্যাতিমান নেতৃবৃন্দের মধ্যে যাঁরা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁদেরকে ন্যূনতম মর্যাদায় স্মরণ করার উদ্যোগ নেয়া উচিত। এতে বর্তমান প্রজন্মের নেতা-কর্মীরা ত্যাগী হবার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করবে, সর্বোপরি ভালো কিছু শিখবে বলে আমরা মনে করি। এ ব্যাপারে সকল দলের শীর্ষ নেতাদের মাঝে শুভবুদ্ধির উদয় হোক-এমন প্রত্যাশা হার্দিকভাবেই করছি।