প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
গাঁজা হচ্ছে বহুল পরিচিত প্রাচীন ড্রাগ বা মাদক। বিশ্বের সবচে’ জনপ্রিয় বিনোদনমূলক মাদকগুলোর একটি হচ্ছে গাঁজা, যেটি বাংলাদেশসহ বহু দেশে আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। তবে কিছু দেশে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে গাঁজা বা গাঁজা থেকে উৎপাদিত দ্রব্য ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে। মাদক আইনের ৯ ধারায় বলা আছে, অ্যালকোহল ব্যতীত অন্যান্য মাদকদ্রব্যের উপাৎদন বা প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহার হয় এমন কোনো দ্রব্য বা উদ্ভিদের চাষাবাদ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বহন বা পরিবহন ও আমদানি-রপ্তানি করা যাবে না। কোথাও ৫০টি বা তার কম গাঁজা বা ভাং গাছ পাওয়া গেলে ১ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে। গাছের সংখ্যা ৫০ থেকে ৫০০টির মধ্যে হলে ৫ থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড এবং গাছের সংখ্যা ৫০০টির বেশি হলে ৭ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে। গাঁজা বা ভাং গাছের শাখা-প্রশাখা, পাতা, ফুল ইত্যাদির দ্বারা তৈরি মাদকের পরিমাণ ৫ কেজি বা তার কম হলে ৬ মাস থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড এবং মাদকের পরিমাণ ৫ কেজি থেকে ১৫ কেজির মধ্যে হলে ৫ থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড এবং মাদকের পরিমাণ ১৫ কেজির বেশি হলে ৭ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে।
বিশ্বের প্রধান গাঁজা উৎপাদনকারী ১৬টি দেশের মধ্যে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত রয়েছে। অন্য ১৫টি দেশ হচ্ছে : আফগানিস্তান, কানাডা, চীন, কলম্বিয়া, জ্যামাইকা, লেবানন, মেক্সিকো, মরক্কো, নেদারল্যান্ড, পাকিস্তান, প্যারাগুয়ে, স্পেন, থাইল্যান্ড, তুরস্ক ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ভারত থেকে স্থল সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ গাঁজা আসে। চাঁদপুরের প্রতিবেশী জেলা কুমিল্লার পাশেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অনেক দীর্ঘ স্থল সীমান্ত, যে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে সম্ভবত সবচে’ বেশি গাঁজা পাচার হয়। পাচারকৃত এ গাঁজাগুলো চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে নানা প্রক্রিয়ায় তো পৌঁছে যায়ই, উপরন্তু রাজধানীসহ ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের বিভিন্নস্থানে পৌঁছাতে চাঁদপুর জেলাকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। চাঁদপুরের রেলপথ ও আঞ্চলিক সড়ক ব্যবহারে এক সময় পাচারকারীরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলেও পুলিশ ও র্যাব তাদের আভিযানিক তৎপরতা বৃদ্ধি করায় তারা বিকল্প হিসেবে গ্রামীণ বিভিন্ন সড়ক ও উপজেলা সংযোগ সড়ক ব্যবহার শুরু করে। কিন্তু পুলিশ ও র্যাব তাদের সোর্স/ গোয়েন্দার মাধ্যমে খবর পেয়ে বিকল্প সড়কেও গাঁজা পাচারকারীদের কমণ্ডবেশি প্রতিহত করে। এমতাবস্থায় সম্প্রতি সড়কে গাঁজা পাচার পূর্বের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক কমে যায়। বিষয়টি নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তোলে পুলিশ ও র্যাবকে। সেমতে তাদের পর্যবেক্ষণ হয় তীক্ষ্ন, যাতে কুমিল্লা থেকে চাঁদপুরগামী নৌপথে গাঁজা পাচারের তৎপরতা স্পষ্ট হয়।
সে পর্যবেক্ষণের আলোকে গত ৯ আগস্ট সোমবার দিবাগত রাতে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার টোরাগড় গ্রামের ডাকাতিয়া নদীতে একটি ট্রলারে অভিযান চালায় র্যাব-১১, সিপিসি-২-এর একটি আভিযানিক দল। তারা ২৪ কেজি গাঁজাসহ দুজন মাদক কারবারিকে আটক করে। যাদের দুজনের বাড়িই দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। এর মানে দাঁড়ায় যে, তারা গাঁজাগুলো নৌপথে সে অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছিলো, যেভাবে পূর্বে হয়তো বহুবার নিয়ে যাওয়ার নির্বিঘœ সুযোগ পেয়েছিলো। এটা আবশ্যই ভাবনার বিষয়।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ভারত থেকে কুমিল্লা সংলগ্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসা বিপুল পরিমাণ গাঁজা রাজধানীসহ ঢাকা বিভাগ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে পরিবহন করার ক্ষেত্রে পাচারকারীরা কুমিল্লা থেকে চাঁদপুরগামী সহজ ও সময় সাশ্রয়ী সড়কগুলো দিয়ে মেঘনা নদী পর্যন্ত পৌঁছে তারপর লঞ্চসহ ছোট-বড় বিভিন্ন নৌযান ব্যবহার করে। উক্ত সড়ক সমূহে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ও অভিযান বৃদ্ধি পাওয়ায় গাঁজা পাচারকারীরা সর্বশেষ কষ্টকর, ব্যয়বহুল ও অধিক সময় ক্ষেপণকারী ডাকাতিয়া নদীকে ব্যবহার করছে। যেটা উদ্বেগজনকই বটে। আমাদের মতে, এ নদীতে পুলিশ ও র্যাবের পক্ষে নিয়মিত অভিযান চালানো কষ্টকর। তাই গাঁজা পাচার রোধে ডাকাতিয়া ও মেঘনা নদীতে নৌ পুলিশের নজরদারি ও আভিযানিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা অতীব জরুরি।