প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ৪১৪ কি. মি. দূরত্বে এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে ১৫২ কি. মি. দক্ষিণে অবস্থিত কক্সবাজারের বিশ্বব্যাপী প্রসিদ্ধি হচ্ছে দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকতের জন্যে। এ সৈকতের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১৫০ কি. মি. (৯৩ মাইল)। বিশ্বে এর চেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত রয়েছে ব্রাজিলে ও অস্ট্রেলিয়ায়। ব্রাজিলের কাসিনো সমুদ্র সৈকত ২১২ কি. মি. (১৩২ মাইল) এবং অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র সৈকত ১৫১ কি. মি. (৯৪ মাইল) দীর্ঘ। তবে এ দুটি সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের মতো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক নয়, কিছু অংশ মনুষ্যসৃষ্ট।
উইকিপিডিয়ায় বিধৃত ইতিহাস থেকে জানা যায়, নবম শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে ১৬১৬ সালে মুঘল অধিগ্রহণের আগ পর্যন্ত কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের একটি বড় অংশ আরাকান রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। মুঘল সম্রাট শাহ সুজা পাহাড়ী রাস্তা ধরে আরাকান যাওয়ার পথে কক্সবাজারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন এবং এখানেই ক্যাম্প স্থাপনের আদেশ দেন। তার যাত্রাবহরের প্রায় এক হাজার পালঙ্কী কক্সবাজারের চকরিয়ায় ডুলাহাজরা নামক স্থানে অবস্থান নেয়। ডুলাহাজরা অর্থ হাজার পালঙ্কী। মুঘলদের পরে পর্যায়ক্রমে ত্রিপুরা ও আরাকান, পর্তুগীজ এবং ব্রিটিশরা এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।
কক্সবাজার নামটি এসেছে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স নামে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক অফিসারের নাম থেকে। ক্যাপ্টেন কক্স ১৭৭৩ সালের পর পালঙ্কীর মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। তিনি আরাকান শরণার্থী এবং স্থানীয় রাখাইনদের মধ্যে বিদ্যমান হাজার বছরের পুরানো সংঘাত নিরসনের চেষ্টা করেন এবং শরণার্থীদৈর পুনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেন। কিন্তু কাজ পুরোপুরি শেষ হবার আগেই ১৭৯৯ সালে মারা যান। তার অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়, যার নাম হয় কক্স সাহেবের বাজার, পরবর্তীতে কক্সবাজার। এখানে থানা হয় ১৮৫৪ সালে এবং পৌরসভা হয় ১৮৬৯ সালে।
কক্সবাজার বর্তমানে বাংলাদেশের সবচে’ জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ। এখানে সারাদেশ থেকে প্রতিদিন যেমন পর্যটকরা আসে, তেমনি বিদেশী পর্যটকরাও আসে। পুরানো যাতায়াত মাধ্যম সড়ক হলেও আকাশ পথেও কক্সবাজারে যাতায়াত করা যায়। গুরুত্ব অনুধাবন করে কক্সবাজার বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে রূপান্তরিত করা হয়েছে এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে, যেটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
জগৎজোড়া খ্যাতিমান কক্সবাজারকে নিয়ে গত সোম ও মঙ্গলবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘কক্সবাজারে হোটেলের টর্চার সেলে পর্যটকদের আটকে টাকা আদায়! ট্যুরিস্ট পুলিশের অভিযানে আটক ১১, উদ্ধার ৪’। এ সংবাদে যে বীভৎসতা তুলে ধরা হয়েছে, সেটি উদ্বেগ-আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার মতো। এ উদ্বেগ-আতঙ্ক নিরসনে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশসহ অন্যান্য সকলের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তা রেজাউল জানিয়েছেন, এখানকার হোটেল-মোটেল জোনে দেড় শতাধিক আবাসিক কটেজ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২০-৩০টি কটেজ রয়েছে সাইনবোর্ডবিহীন। সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা মূলত সাইনবোর্ডবিহীন কটেজগুলোকে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলো। এ রকম আরো কয়েকটি কটেজ টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহারের তথ্য রয়েছে পুলিশের। দুর্বৃত্ত চক্রের সদস্যরা পর্যটকসহ সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে আসছিলো।
আমাদের বিশ্বাস, পুলিশ যেহেতু এমন টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছে, তারা অবশ্যই এগুলো নির্মূলের ব্যবস্থা নেবে এবং দেশের সেরা পর্যটন স্পট কক্সবাজারকে পর্যটক বান্ধব হিসেবে বহাল রাখার যাবতীয় ব্যবস্থা নেবে।