প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২২, ০০:০০
হাইমচর থানা পুলিশের তৎপরতা
পুলিশের নিকট মানুষের প্রত্যাশা থাকে অনেক বেশি। সে প্রত্যাশা পূরণে হেরফের হলে, বিলম্ব হলে মানুষের অভিযোগের যেনো অন্ত থাকে না। ঘুষ না গেলেও ঘুষের অভিযোগ আনে, হয়রানি না করলেও হয়রানির অভিযোগ আনে। বলা যায়, বিক্ষুব্ধ মানসিকতা থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে অমূলক অভিযোগ উত্থাপনে কেউ কসুর করে না। তবে সব পুলিশ যে ধোয়া তুলসী পাতা- এমনটি বলার অবকাশ নেই। ভালো-মন্দ মিলিয়ে পুলিশ জনগণের জানমাল রক্ষা, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এমন বাস্তবতাতেও পুলিশের ওপর মাঝে মাঝে অসম্ভব প্রত্যাশার চাপ তৈরি হয়। বিশেষ করে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি সংঘটিত হলে এ সমস্ত অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্টদের পাকড়াও করার ব্যাপারে পুলিশের ওপর অসম্ভব চাপ তৈরি হয়। এমন চাপে পড়ে পুলিশ সক্রিয়তা প্রদর্শন করে সাফল্যের সন্ধান পেলে বাহবার অন্ত থাকে না, আর ব্যর্থতায় চাপা ক্ষোভ কিংবা প্রকাশ্য ক্ষোভে তিরষ্কারেরও শেষ থাকে না। তারপরও পুলিশ দিনের ২৪ ঘন্টা এবং বছরের ৩৬৫ দিনই ডিউটি করে। পুলিশের রাগ-অভিমান থাকলেও সেটি প্রকাশের বৈধতা থাকে না।
|আরো খবর
হাইমচরে গত ২৬ জুলাই বখাটের কাঠের টুকরো ও ইটের এলোপাতাড়ি আঘাতে দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নুসরাত আক্তার (১৬) রক্তাক্ত জখম হলে এবং সে ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সবাই বখাটে হাবিব ও আল-আমিনসহ সংশ্লিষ্ট অন্য সকলকে দ্রুত গ্রেফতারের জন্যে পুলিশের ওপর প্রত্যাশার চাপ তৈরি করে। হাইমচর থানার অফিসার ইনচার্জ আশরাফ উদ্দিন নুসরাতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ বা মামলা দায়েরের পূর্বেই জনপ্রত্যাশা পূরণে বখাটেদের আটক করার ব্যাপারে অভিযান শুরু করেন। যার ফলে ঘটনার ১২ ঘন্টার মধ্যেই সাফল্য খুঁজে পান অর্থাৎ তিন বখাটেকে আটক করতে সক্ষম হন। এমনটি সচরাচর অন্যান্য থানায় দেখা যায় না। ছোট-বড় যে কোনো ঘটনা ঘটলেই কোনো কোনো থানার ওসি গণমাধ্যমকে সাধারণত বলেন যে, কেউ অভিযোগ বা মামলা না করলে পুলিশের করণীয় কী? হাইমচর থানার ওসি তেমন কিছু বললেও পুলিশের করণীয় সম্পাদনে তাৎক্ষণিক তৎপরতা শুরু করেন। যার ফলে তিনি স্কুল ছাত্রীর চরমভাবে উত্ত্যক্ত হবার ঘটনায় সৃষ্ট বিরূপ প্রতিক্রিয়াকে সহজভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। এজন্যে তিনি অবশ্যই ধন্যবাদ বা বাহবা পাওয়ার যোগ্য।
তিক্ত হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের অনেক থানাতে সাধারণ ডায়েরি (জিডি), অভিযোগ, মামলা ইত্যাদি সম্পাদন করতে গিয়ে অধিকাংশজনেরই ভালো অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় না, বরং তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই থানা থেকে ফিরতে হয়। সেজন্যে অনেক নিরীহ মানুষ থানায় যেতে চায় না। এমন বাস্তবতায় কোনো থানার ওসি কোনো ঘটনা সংঘটিত হবার পরই যদি সে ঘটনার তদন্তে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকেন, অপরাধীদের ধরার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, তাহলে অপরাধীরা পালিয়ে খুব দূরে যেতে পারে না এবং আলামতও নষ্ট হয় না। যে জেলার পুলিশ সুপার তীক্ষ্ন সচেতন ও আন্তরিক, সে জেলায় এমন ওসির সহজ সন্ধান মিলে, অন্যথায় নয়-এমন মন্তব্য অনেক পর্যবেক্ষকেরই। আমাদের মন্তব্য অনেকটা তা-ই।