শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২২, ০০:০০

চাঁদপুর টাউন হল ও পৌর অডিটোরিয়াম প্রসঙ্গে
অনলাইন ডেস্ক

৫০০ আসন বিশিষ্ট চাঁদপুর পৌর অডিটোরিয়াম হবে বলে চাঁদপুর পৌরসভার সর্বশেষ চেয়ারম্যান ও প্রথম মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ চাঁদপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী চাঁদপুর টাউন হলের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করেন এবং সেখানে বহুতল মার্কেট নির্মাণ করেন। এ টাউন হলের স্বত্ব নিয়ে আইনি লড়াইশেষে তিনি টাউন হলের পুরানো দ্বিতল ভবন যখন ভাঙ্গার উদ্যোগ নেন, তখন সংস্কৃতি কর্মীরা ফুঁসে উঠেন। এমতাবস্থায় তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, নূতন ভবনে একটি মিলনায়তন থাকবে, যেখানে সাবেক টাউন হলের আমেজ নিয়ে অনুষ্ঠান করা যাবে। কিন্তু চাঁদপুর পৌরসভার আয় বৃদ্ধির স্বার্থে এবং পৌর অডিটোরিয়াম হবে হচ্ছে বলে তিনি ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেন নি। যে কারণে ‘টাউন হল’ নামটির অস্তিত্ব থাকলেও প্রকৃতপক্ষে হলের কানো অস্তিত্ব নেই।

‘চাঁদপুর পরিক্রমা : ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ গ্রন্থ থেকে জানা যায় ‘চাঁদপুর টাউন হল’ প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত। ৪০০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত এ ইতিবৃত্তে লিখা হয়েছে, ‘চাঁদপুরের গান্ধী’ নামে খ্যাত হরদয়াল নাগের পুত্র মনকুমার নাগ, মোক্তার ইন্দভূষণ গুহ, সাধুচরণ ওয়াস্তী, অ্যাডভোকেট বিমল চন্দ্র বসু ও প্রখ্যাত সমাজসেবক আবদুর রহমান উক্ত টাউন হল প্রতিষ্ঠার উদ্যোক্তা। ১৯২৫-১৯২৬ সালে ফণী মুখার্জীকে সম্পাদক করে প্রতিষ্ঠিত কমার্শিয়াল ক্লাবটি সঙ্গীত চর্চার প্রয়োজনে ‘পূর্ণিমা সম্মিলনী’ নামে নূতন নাম ধারণ করে। অবশ্য এরও বহু পূর্বে ১৯০১ সালে কালীচরণ ওয়াস্তীর অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও অর্থানুকূল্যে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘চন্দ্রলোক সংগীত সম্প্রদায়’। এই প্রতিষ্ঠানটি অনেক সুপ্ত প্রতিভার সার্থক বিকাশে জুগিয়েছিল উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং পালন করেছিল চাঁদপুরের সংস্কৃতি বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। এরই ফলস্বরূপ উদয় শঙ্করের সুযোগ্য ছাত্র ভারত নাট্যমের বিশিষ্ট শিল্পী অরুণ বসু, দীননাথ বসু, গিরীন্দ্র বসু প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ দেশে-বিদেশে কুড়িয়েছেন প্রচুর প্রশংসা। বোয়ালিয়া, বরদিয়া, বহরিয়া, বাজাপ্তি, বলাখাল, বাবুরহাট, বাকিলা প্রভৃতি ‘ব’ আদ্যাক্ষর বিশিষ্ট গ্রামগুলো ও কচুয়ার সাচার ছিলো গ্রামাঞ্চলে সংগীত ও যাত্রা চর্চার প্রধান কেন্দ্র। চাঁদপুরে কোনো বড় মঞ্চ না থাকায় মূলত টাউন হলটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। পরবর্তীতে চাঁদপুর পৌরসভা এ টাউন হলের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমী অডিটোরিয়াম প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত এ টাউন হলটি ছিলো সংস্কৃতি চর্চার প্রধান কেন্দ্রস্থল।

এক সময় চাঁদপুর টাউন হল শুধু চাঁদপুরের সংস্কৃতি চর্চার প্রধান কেন্দ্রস্থলই ছিলো না, রাজনীতি চর্চারও প্রধান কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। দেশের অনেক বিখ্যাত সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পদচারণা হয়েছে এই টাউন হলে। অথচ এ টাউন হলটি এখন কেবল কারো স্মৃতিচারণ ও নস্টালজিয়ার উপাদান। ঐতিহ্য সংরক্ষণে আন্তরিকতার অভাব বিশেষ করে ঔদাসীন্যহেতু লক্ষ্মীর কাছে কার্যত হার মানে সরস্বতী। এটা কাম্য নয়। আমরা চাঁদপুর টাউন হলের বিকল্প হিসেবে ২০০৩ সালে শুরু হওয়া চাঁদপুর পৌর অডিটোরিয়াম নির্মাণ কাজ ১৯ বছরেও শেষ না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করছি। একই সাথে কোনো নির্মাণ কাজে এতো দীর্ঘ সময় ব্যয় করেও সেটি শেষ করতে না পারার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করছি এবং তদন্তও দাবি করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়