প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুর সেতু নিয়ে কুম্ভকর্ণের ঘুম!
বহুল প্রচলিত বাংলা প্রবাদ হচ্ছে ‘কুম্ভকর্ণের ঘুম’। এই প্রবাদের অর্থ, যে ব্যক্তি মাত্রাতিরিক্ত ঘুমান। যে ব্যক্তির ঘুম সহজে ভাঙ্গানো যায় না, সেই ব্যক্তির ঘুমও কুম্ভকর্ণের ঘুম নামে পরিচিত। কুম্ভকর্ণ ছিলেন রাবণের ভাই। রামায়ণের যুদ্ধেও কুম্ভকর্ণের উল্লেখ আছে। এই প্রবাদটির সাথে রামায়ণের যোগ রয়েছে অর্থাৎ প্রবাদটির উৎপত্তি রামায়ণের সময়কালেই।
|আরো খবর
কুম্ভকর্ণ ছিলেন রাক্ষসরাজ সুমালীর কন্যা কৈকসীর সন্তান। কৈকসী ছিলেন চার সন্তানের জননী-রাবণ, কুম্ভকর্ণ, শুপর্ণখা ও বিভীষণ। কুম্ভকর্ণ ছিলেন আকার ও আয়তনে বিশাল বড়, সাথে তাঁর ক্ষুধার পরিমাণও ছিলো বিশাল মাপের। জন্মের পরেই ক্ষুধা নিবারণের জন্যে কুম্ভকর্ণ রাজ্যের প্রায় সহস্র প্রজাকে ভক্ষণ করেছিলেন। কুম্ভকর্ণ স্বর্গের অনেক দেবতাসহ অপ্সরাদেরও ভক্ষণ করেন। দেবরাজ ইন্দ্র কুম্ভকর্ণের নানা কাণ্ডে অস্থির হয়ে একবার তাকে ব্রজের আঘাত করেছিলেন। কুম্ভকর্ণ ছিলেন মহাবলশালী ও দৈত্যাকৃতির। কিছু সময় পর কুম্ভকর্ণ অমরত্ব লাভের জন্যে গোকর্ণ আশ্রমে গিয়ে ব্রহ্মাদেবের তপস্যা শুরু করেন। কুম্ভকর্ণের তপস্যায় স্বর্গের দেবতারা ভয় পেয়ে ব্রহ্মার শরণাপন্ন হন। তারা জানান, কুম্ভকর্ণ এরই মধ্যে স্বর্গ মর্ত্য সহ ঋষিকূলকেও ভক্ষণ করেছে, তার ওপর অমরত্বের বরপ্রাপ্ত হলে কুম্ভকর্ণ ত্রিভুবন গ্রাস করবে। এইদিকে কুম্ভকর্ণের তপস্যায় পৃথিবী উত্তপ্ত হয়ে ভস্ম হবার উপক্রম হয়। ব্রহ্মা পড়েন মহাসঙ্কটে। অনেক ভাবনা-চিন্তার পর ব্রহ্মা সরস্বতীকে কুম্ভকর্ণের কণ্ঠে স্থান নিয়ে কুম্ভকর্ণের কথা পরিবর্তন করে ব্রহ্মার সুবিধামত কথা বলবার অনুরোধ করেন। দেবী সরস্বতীও ব্রহ্মার কথা মতো তা-ই করলেন। এর ফলে কুম্ভকর্ণ অনন্ত জীবনের পরিবর্তে অনন্ত ঘুম প্রার্থনা করে বসেন। ব্রহ্মাও খুশি হয়ে কুম্ভকর্ণকে তা-ই বর প্রদান করলেন। ব্রহ্মা বর প্রদান করে চলে যাবার পর কুম্ভকর্ণের চৈতন্য হলো, তিনি ব্রহ্মার কাছে কী বর চেয়েছেন এবং এতে যে দেবতাদের ফন্দি ছিলো সেটা তিনি বুঝতে পারেন। তিনি আবারও ব্রহ্মার তপস্যা করলেন ও আবার সরস্বতী কুম্ভকর্ণের কণ্ঠে ভর করাতে তিনি বলে বসলেন, আমি যেন একটানা ছয়মাস নিদ্রাসুখ ভোগ করে একটি দিন মন ভরে ভোজন করতে পারি। ব্রহ্মা খুশি হয়ে তা-ই বর প্রদান করলেন। সাথে এটাও বললেন, ছয়মাস আগে তোমার নিদ্রা ভঙ্গ হলে তোমার মৃত্যু নিশ্চিত হবে।
আজকের সম্পাদকীয় নিবন্ধ নিতান্তই কুম্ভকর্ণকে নিয়ে নয়। তবে তার ঘুমের সাথে আমাদের সড়ক মন্ত্রণালয়ের টোল বিভাগের কর্মকর্তাদের ঘুমরূপী ঔদাসীন্যকে তুলনাযোগ্য বলে মনে করি। তাঁরা চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ-রায়পুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ‘চাঁদপুর সেতু’র টোল প্রত্যাহারের ব্যাপারে জাতীয় সংসদে স্থানীয় এমপির বক্তব্য, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ অন্য সকল মিডিয়ায় উত্থাপিত অসংখ্য সংবাদণ্ডমন্তব্য কোনো কিছুতেই দৃষ্টিপাত/ কর্ণপাত করছেন না। কিন্তু কেন?
স্মর্তব্য, চাঁদপুরের সদ্য সাবেক জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ এবং চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিগ্রহণকৃত জায়গার অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধের প্রচেষ্টা ঠেকাতে পারলেও চাঁদপুর সেতুর টোল ঠেকাতে পারেন নি। সম্ভবত এ কাজটি অনেক কঠিন। তবে তিনি টোল ঘরটি সেতুর উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে সরানোর কাজটি সহজেই করতে পেরেছিলেন। তিনি চাঁদপুরে যোগদানের পূর্বে সড়ক মন্ত্রণালয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকেও এবং বহু যোগাযোগ করেও কঠিন কাজটি সহজ করতে পারেন নি। কেনো কাজটি এতো কঠিন সেটা নিয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান চালানো উচিত বলে মনে করি।